ঈদুল আজহার আর চারদিনর বাকি। ঢাকা শহরের মানুষ এত আগে কোরবানির পশু না কিনলেও তারা পরিবারের ছোট-বড় সদস্যদের নিয়ে দলবেধে এ হাট ঐ হাট ঘুরে কোরবানীর পশু দেখে। দর দাম বুঝার চেষ্টা করে। রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে গরু, মহিষ, উট, ছাগল ও ভেড়াসহ পর্যাপ্ত কোরবানীর পশু ইতোমধ্যে উঠে গেলেও বেচা কেনা এখনও জমে উঠেনি। হাটগুলোতে এখন ক্রেতার চেয়েও দর্শনার্থী বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, হাটে এখন যারা আসছে তারা শুধু দাম জেনেই চলে যাচ্ছে। কেউ কিনছে না। তবে আগামী দিন থেকে ক্রেতা পাওয়া যাবে। বেচা-কেনার সময় এখনও হয়নি। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে হাট পুরোপুরি জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বছিলা পশুর হাট কানায় কানায় ভরে উঠেছে। এরপরও ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে। শহীদ বুদ্ধিজীবি সড়কের দু’পাশের খালি জায়গায় শেড তৈরি করে অত্যন্ত চমৎকারভাবে পশু রাখার জায়গা করা হয়েছে। এবার সড়কে পশু উঠানোর ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় হাট ইজারাদাররা সেটা মেইনটেইন করে চলার চেষ্টা করছেন। তবে শেষমেষ সেটা থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কবরস্থান সংলগ্ন পশুর শেডে কথা হয় পাবনার বেড়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, কোরবানির উদ্দেশ্যে ১০টি গরু নিজ বাড়িতে লালন-পালন করেছি। ট্রাকে করে সে গরু ঢাকার হাটে নিয়ে এসেছি। এখনো একটিও বিক্রি হয়নি। আশাকরছি দু-একদিনের মধ্যে গরুগুলো বিক্রি করতে পারবো। তবে আগ্রহী গ্রাহকরা দামাদামি করছে। অনেক ক্রেতা দু-তিনবার করেও তার গরু দেখেছেন বলে জানান। এ ব্যবসায়ীর গরুগুলো ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে দাম পেলেই বিক্রি করে দেবেন।
মেরাদিয়া হাটে গিয়ে রদখা গেছে, হাটের বিস্তৃতি পশ্চিম নন্দীপাড়ার বালু মাঠ পর্যন্ত চলে গেছে। পুরো মাঠে বাঁশের খুঁটি ও তাবু দিয়ে ঘর তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারীরা পশু এনে এখানে রেখেছেন। রাস্তায় শ্রমিকরা সারি সারি করে বাঁশের খুঁটি ও তাবু স্থাপন করছে।
ইজারাদার হাজী মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সিটি কর্পোরেশন যে সময় দিয়েছে তাতে একটা হাট প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু এনে রাখেন। বালুর মাঠে প্রস্তুতি নেওয়ায় জনসাধারণের কোনো সমস্যা হবে না। এটা উন্মুক্ত জায়গা। সেজন্য সেখানে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
লিটিল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশে পাশের খালি জায়গার হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের নির্ধারিত স্থান ছাড়াও পাশ্ববর্তী এলাকায় পশুর হাট বসানোর জোর প্রস্তুতি চলছে। হাটের প্রধান দুই প্রবেশ গেটে দুটি বড় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। শ্রমিকরা সারি সারি করে বাঁশের খুঁটি ও তাবু স্থাপনের কাজ করছেন। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে বিশেষ প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে সারি সারি বাঁশের খুটি বসানো হয়েছে। হাজারীবাগ ঝিগাতলা হাটে নির্দিষ্ট সময়ের আগে গত ৮ আগস্ট থেকে গরু উঠা শুরু হয়েছে। হাট এখনো জমে না ওঠায় বিক্রি নেই বললেই চলে। তাই গরুগুলোর যত্ম নিতেই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। হাটে ১০ দিন আগে আসার কারণ জানতে চাইলে ব্যাপারী মোহাম্মদ অছিয়ত উল্লা বলেন, হাটে একটু তাড়াতাড়ি করে আসার কারণ হচ্ছে, আর দুই এক দিনের মধ্যে সারা দেশ থেকে পশু আসা শুরু হবে ঢাকায়। তখন রাস্তায় অনেক যানজট হয়। আর হাটে আসার পর দেখা যায় পছন্দ মতো জায়গা পাওয়া যায় না। তাই আগে এসেছি এবং আগে এসে হাটের একদম ঢোকার জায়গাতেই স্থান পেয়েছি। যার ফলে এ হাটে যারাই আসুক না কেন আগে আমার গরুগুলোই চোখে পড়বে।
শনির আখড়া পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। নৌপথে মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ জেলার শিবচর এলাকার ব্যবসায়ীরা বেশি গরু নিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, ঈদের তিন দিন আগে মূলত হাট ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে জমে উঠবে। গত ৯ আগস্ট থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বলে জানান তারা। এ হাটটির খাস আদায়ের জন্য অনুমোদন ১৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার চুড়ান্ত হলেও গত ৯ আগস্টেই হাট বসানোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া হাটের নির্ধারিত স্থান ছাড়াও পাশ্ববর্তী এলাকায় পশুরহাট বসানোর জোর প্রস্তুতি চলছে। রাস্তার পাশে সারি সারি বাঁশের খুটি বসানো হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ জানালে ইজারা দারের লোকজন তাদের সাথে খারাপ আচরন করেছে বলে জানা গেছে। ইজারা দারের কোকজন বলছেন, হাট যতদিন বসবে ততদিন এলাকার রাস্তাঘাট বন্ধ থাকবে। যাদের প্রয়োজন হবে তারা পায়ে হেটে যাতায়াত করবে। না হয় কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার দরকার নাই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, যেসব ইজারাদার শর্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) এলাকার নয়টি অস্থায়ী হাট আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে শুক্রবার। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৫টি হাটের আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরু হবে আজ শনিবার থেকে। এর বাইরে উত্তর সিটির স্থায়ী হাট গাবতলী ও দক্ষিণ সিটির স্থায়ী হাট সারুলিয়া বাজারে কোরবানির পশুর জমজমাট পসরা বসেছে। আগামীকাল থেকে রাজধানীর কোরবানি পশুর হাটগুলোর বেচা-বিক্রি জমে উঠবে আশা করছে পশু ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, কয়েক দিন ধরেই রাজধানীর এই হাটগুলোতে ট্রাক ভরে আসছে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট ও মহিষ। গতকাল শুক্রবার শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠের অস্থায়ী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে গরু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। তবে দীর্ঘ যাত্রায় অনেক গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। ট্রাক থেকে নামানোর সময় পাটাতনে শুয়ে পড়া একটি গরু অনেকক্ষণ টানাটানি করেও নামাতে পারছিলেন না কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী আবুল কাসেম ও তার সঙ্গীরা। এ ব্যবসায়ী জানান, যানজটের কারণে হাটে আসতে তিন দিন সময় লেগেছে। এসময় নিজেদের ও গরুর খাওয়াতে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু উঠেছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। ছোট আকৃতির গরু পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৪৫ থেকে ৫০-৫৫ হাজার টাকায়। আর মাঝারি আকৃতির গরু পাওয়া যাচ্ছে ৬০-৬৫ থেকে ৮০-৮৫ হাজার টাকায়। বড় আকৃতির গরুর দাম ১ লাখ টাকার উপরে। ১ থেকে ৩ লাখ টাকার মধ্যে বেশি গরু পাওয়া যাচ্ছে। তবে এরচেয়ে বেশি দামেরও গরু রয়েছে। রাজধানীর মেরামিদয়া ও গাবতলী হাটে ৫ লাখ, ৬ লাখ, ৭ লাখ টাকার অনেকে গরুর দেখা মিলেছে। মেরাদিয়া হাটে একটি গরুর দাম ১২ লাখ টাকা হাকিয়েছেন একজন ব্যবসায়ী। তবে অন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলোচনায় আসার জন্য ওই ব্যবসায়ী গরুটির দাম ১২ লাখ টাকা হাঁকিয়েছেন। সর্বোচ্চ ওই গরুটির দাম হবে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কোনো ইজারাদার যদি শর্ত ভাঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ক্রেতারা যেন হাটে এসে নির্বিঘ্নে পছন্দমতো পশু কিনতে পারেন, সেজন্য রাজধানীর সকল হাটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম সক্রিয় রয়েছে। পশু কেনাবেচার সময় যাতে টাকা পরিবহন ও জাল টাকা নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্যও কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন