মোহাম্মদ আবদুল গফুর
১৭৫৭ সালে পলাশী বিপর্যয়ের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যাওয়ার পর নব্য ইংরেজ শাসকদের অন্যতম নীতিই হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, জমিদারি, আয়মাদারি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি জাতীয় জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে বেছে বেছে মুসলমানদের উৎখাত করে সেসব স্থানে ইংরেজ-অনুগত হিন্দুদের বসানো, এ কথা আমরা সবাই জানি। এরই ধারাবাহিকতায় পলাশী ট্র্যাজেডির অল্পকালের মধ্যে ১৭৯৩ সালে পূর্বতন ভূমিব্যবস্থা বদলিয়ে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ নামের নতুন এক ভূমি ব্যবস্থার মাধ্যমে ইংরেজ অনুগত এক নব্য জমিদার গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়, যার বেশির ভাগই ছিল হিন্দু। এসব বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে মুসলমানদের নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। প্রথমে সশস্ত্র, পরে নিয়তান্ত্রিক পন্থায়।
এসব সংগ্রামের পরিণতিতে ১৯৪৭ সালে এদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে প্রথমবারের মতো আমরা স্বাধীনতা লাভ করি পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের অবয়বে। এরপর ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্ত শাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন প্রভৃতির ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই। এভাবে সা¤্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের অবসানে আমরা দু-দুবার স্বাধীনতা অর্জন করলেও এবং এর বদৌলতে সমাজের একটি অতি ক্ষুদ্রাংশ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে দাঁড়ালেও সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি এ এক নির্মম বাস্তবতা। বিশেষ করে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমান সমাজে যে এখনো আশানুরূপ অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারেনি এও এক নিদারুণ সত্য। এ সত্যের দৃষ্টান্ত দেখতে পাই বাঙালি মুসলমান শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেকের মধ্যেই।
ব্যক্তিগতভাবে তমদ্দুন মজলিস, নজরুল একাডেমি, বাংলা একাডেমি প্রভৃতি সাংস্কৃতিক সংস্থার সাথে দীর্ঘদিন ধরে আমার জড়িত থাকার সুবাদে শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেকের দুরবস্থা জানার দুর্লভ সুযোগ হয় আমার। সেই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি কলকাতা থেকে আগত কবি শাহাদাৎ হোসেনের ওপর এক গবেষণা পরিচালনাকারী ঢাকায় আমার বাসায় গিয়ে হাজির হন কবির জীবন ও কর্ম সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা থাকলে তা জানতে।
ইতিহাসে সাক্ষ্য দেয় উনিশ শতকের শেষ দশকে এদেশে এমন তিন কবি জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি মুসলমানের জাতীয় জাগরণে যাদের বিশেষ অবদান ছিল। তারা হচ্ছেন শাহাদাৎ হোসেন (১৮৯৩), গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭) ও কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯)। এদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ কাজী নজরুল ইসলামই অবশ্য সবচেয়ে প্রতিভাশালী। সে নিরিখে তাঁকে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরই স্থান দেয়া হয়। বিশেষ করে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে নজরুল ইসলামের ঐতিহাসিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রবীন্দ্রনাথের কবি খ্যাতির সূর্য যখন মধ্য গগনে, তখন সেই ১৯২৯ সালেই কলকাতার অ্যালবার্ট হলে সেকালের হিন্দু মুসলিম মনীষী ও সুধী সমাজের পক্ষ থেকে নজরুলকে জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র সেন, এস ওয়াজেদ আলী, সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সুভাষ চন্দ্র বসু বলেন, আমরা যখন যুদ্ধে যাব তখন সেখানে নজরুলের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব, সেখানেও তার গান গাইব।
দুঃখের বিষয় নজরুলের এ জনপ্রিয়তা কবি গোলাম মোস্তফার পছন্দ ছিল না। তিনি নজরুলের সাহিত্য কর্ম হিন্দু পুরাননির্ভর এবং রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য কর্ম ইসলামের একাত্ববাদের ধারকবাহক এই যুক্তিতে পাকিস্তান আমলে নজরুলকে বর্জন এবং রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। কবি শাহাদাৎ হোসেন, অবশ্য গোলাম মোস্তফার এই অসূয়া জনিত ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে উঠে নজরুল ইসলামকে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেননি। নজরুল ইসলামকে নিবেদিত “অশ্রু নিবেদন” শীর্ষক কবিতায় শাহাদাৎ হোসেন বলেন :
অগ্নিবীনা করে জিঞ্জির ছিঁড়িয়া তুমি হে বাঁধনহারা
দোলন-চাপার বুকে বেঁধেছিলে বাসা
সংকীর্ণ যে পরিসরে।
বহিৃ অগ্নিগিরি কোথা তব স্থান?
..................................
জীবনের প্রান্তকূলে আমিও দাঁড়ায়ে আজ ছায়ার আবরে
দূর দিক চক্রে হেরি সন্ধার আভাস
ছায়াচ্ছন্ন আধো এই আঁধারের কূলে
হে কবি!
তোমার অগ্রজ কবি তোমার উদ্দেশ্যে করে অশ্রু নিবেদন।
(এলান ২৯ মে, ১৯৫২)
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গোলাম মোস্তফা উচ্চশিক্ষার ডিগ্রিধারী থাকাতে জীবনের একটা বড় অংশ সরকারি চাকরিতে কাটান। পক্ষান্তরে কাজী নজরুল ইসলাম ও শাহাদাৎ হোসেন ডিগ্রিধারী না থাকাতে জীবনের সিংহভাগ কাটিয়েছেন দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে। সারা জীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেও নজরুলের মতো শাহাদাৎ হোসেন জাতির জাগরণের লক্ষ্যে সারা জীবন লেখনী যুদ্ধের কর্তব্য পালনে এতটুকু অবহেলা করেননি।
শাহাদাৎ হোসেনের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলার হাড়োয়া পন্ডিতপোল গ্রামে ১৮৯৩ সালে। হুগলি কলেজিয়েট স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে হাড়োয়ায় মাইনর স্কুলে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। এরপর কলকাতা গিয়ে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির গ্রন্থাগারিক হিসেবে এবং পরে বিভিন্ন মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা ও সংবাদপত্রে সম্পদকীয় বিভাগে চাকরি করেন। তিনি আজীবন সমাজসচেতন ছিলেন। এই সমাজ সচেতনতার অপরাধে ব্রিটিশ শাসনামলে তাকে খেসারত ও দিতে হয়। ১৯৩১ সালে কলকাতা মির্জাপুর পার্কে আইন অমান্য আন্দোলনের এক সমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার অভিযোগে তিনি চার মাস কারাদ- ভোগ করেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকা চলে আসেন এবং ১৯৪৮ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে চাকরি লাভ করেন। রেডিও পাকিস্তানে পাক্ষিক পত্রিকা এলান-এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু জীবন সায়াহ্ণে (মে ১৯৫৩) চাকরিচ্যুত হলে ঢাকা ত্যাগ করে জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গের পন্ডিতপোল গ্রাম ফিরে যান। এর পর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরেই ৩০ ডিসেম্বর (১৯৫৩) তিনি ইন্তেকাল করেন।
আগেই বলা হয়েছে সারা জীবন দারিদ্র্যের মধ্যে কালাতিপাত করলেও বাঙালি মুসলমানের জাগরণে অবদান রাখতে অবহেলা করেননি কবি শাহাদাৎ হোসেন। সে যুগের অধিকাংশ বাঙালী মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের মতো তিনি ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির উদ্যোগে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনের পঞ্চম (১৯৩২), ষষ্ঠ (১৯৩৯) ও সপ্তম (১৯৪৩) অধিবেশনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরুই হয় কাজী নজরুল ইসলাম ও শাহাদাৎ হোসেনের দুটি উদ্দীপনাময়ী কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। ১৯৩৯ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সম্মেলনের কাব্য শাখায় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন তিনি। অন্য দুই সম্মেলনে পঞ্চম (১৯৩২) ও সপ্তম (১৯৪৩) সালে তিনি কবিতা পাঠ করেন।
অনেক বিদগ্ধ সুধীর মতে, শাহাদাৎ হোসেনই ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক মুসলিম কবি। শুধু কবিতা নয়, নাটক, অভিনয় এবং গদ্য রচনায়ও তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তার অধিকাংশ রচনার বিষয়বস্তু ছিল ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্য সম্পর্কিত। শাহাদাৎ হোসেনের রচিত একটি কবিতা নি¤œরূপÑ
বঙ্গ জলধি আরব সিন্ধু ভারত তীর্থকূলে
মহামিলনের মহাসঙ্গমে উল্লাসে আজি
দুলে।
পাহাড় তটিনী কলজয়গানে
পাঞ্জাব ছুটে যুগ আহবানে
দূর সীমান্ত ওনিজরিস্তানে
বৈজয়ন্তী দুলে।
---------
তখতে তাউস ডাকে ইশারায়
দিল্লির বুকে গুরু গরিমায়
যুগের মোগল আয় ফিরে আয়
পুণ্য বেদির মূলে।
নব শাজাহান কে আছিস আয়।
নবতেন তাজ কে গড়িবি আয়
কে আলমগীর নব ফতোয়ায়
জাগবি তীর্থ কূলে।
আয় আয় আয় ওরে কাল বয়ে যায়
মহামিলনের নব ঈদগায়
ওই শোন কেরে ডেকে বলে যায়
কা-ারি বেদি মূলে।
(আহবান, মাসিক মোহাম্মদী: ফাল্গুন ১৩৫২)
ব্রিটিশ শাসনের অবসানে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যান্য অনেকের মতো তিনিও কলকাতা ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন, একথা আগেই বলা হয়েছে ঢাকা বেতারে তিনি ১৯৪৮ সালে চাকরিও পেয়ে যান। তিনি মাসিক এলান পত্রিকার সম্পাদক হন। ১৯৫৩ সালে তিনি চাকরি হারালে নিজ জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যেতে বাধ্য হন। বাঙালি মুসলমানের নব জাগরণে কবি শাহাদাৎ হোসেনের ঐতিহাসিক অবদান থাকলেও তাকে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন অসুখী। তার একমাত্র সন্তান আঁতুড়ঘরেই মারা যায়। সারা জীবন তার কাটে হতাশা ও বঞ্চনা বোধের মাঝে। এর মধ্যে থেকেও জাতির প্রতি তার কর্তব্যবোধে তিনি কখনো গাফিলতি করেননি।
কলকাতায় থাকতে তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে এবং পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত রেনেসাঁ সম্মেলনে কবি শাহাদাৎ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এ কথা আমরা আগেই জেনেছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকায় এসেও তিনি ঢাকার সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত হন। এই সুবাদেই ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে যে চার দিনব্যাপী ইসলামী সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তার সাহিত্য অধিবেশনের কাব্য শাখায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।
১৯৫৩ সালের মে মাসে তার এলান পত্রিকার চাকরিচ্যুতির কারনে তাকে পুনরায় পশ্চিমবঙ্গে নিজ গ্রামে ফিরে যেতে হয়। সেখানে বৃদ্ধ অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালেই নিঃসঙ্গ অসহায় বাংলা সাহিত্যের এই প্রথম আধুনিক মুসলিম কবি ১৯৫৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই নশ্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। এভাবে সাঙ্গ হয়ে যায় বাংলা সাহিত্যের এক প্রতিভাশালী কবির ট্র্যাজিক জীবন।
এই রচনার একপর্যায়ে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ থেকে এ পর্যন্ত দু-দুবার স্বাধীনতা লাভ করলেও এবং এর ফলে সমাজের একটি ক্ষুদ্রাংশ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হলেও বাঙালি মুসলমান সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। বিশেষ করে শিল্প সাহিত্য ক্ষেত্রে যারা একনিষ্ঠভাবে বিশেষ সাধনা করতে চান তাদের সিংহভাগের জন্যই অনুকূল সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তার প্রমাণ কবি শাহাদাৎ হোসেন থেকে আরো অনেকেই। এই অনেকের মধ্যে অবশ্যই সর্বাগ্রে আসে আজীবন দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রামরত কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম। এর সাথে আসে কবি শাহাদাৎ হোসেন, এয়াকুব আলী চৌধুরী, কবি ফররুখ আহমেদ, কবি রওশন ইজদানী, সাহাবুদ্দিন আহমদ, কবি আশরাফ আলী খান, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, কবি মহিউদ্দিন, কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী, কবি ফারুক মাহমুদ, নূরুল হোসেন খন্দকার, মুহম্মদ আবু তালিব, মোসলেম উদ্দিন, আজিজুর রহমান, ডা. লুৎফর রহমান, চৌধুরী লুৎফর রহমান প্রমুখ মরহুম কবি-সাহিত্যিকদের নাম। শেষোক্ত জন (চৌধুরী লুৎফর রহমান) যেসব সাহিত্যিকের সঙ্গে একই সাথে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন তাদের অনেকেই (যেমন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কবি মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ) সাহিত্য ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। বেঁচে থাকলে চৌধুরী লুৎফর রহমান আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আরেকজন কবি শামসুর রাহমান বা আল মাহমুদ হতে পারতেন বলে অনেকের বিশ্বাস। কিন্তু বঞ্চনাবোধ ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে তিনি কোথায় যে হারিয়ে গেলেন, নতুন প্রজন্মের কেউ তার নামও জানে না।
শুধু মৃত বা হারিয়ে যাওয়া শিল্প সাহিত্য সাধকদের কথা নয়, এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছেন এমন একজন সাহিত্য সাধকের কথা এবার বলব, যিনি শুধু চরম অসহনীয় দারিদ্র্যের কারণে তাঁর জীবনের প্রধান স্বপ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা কর্ম চালিয়ে যেতে না পারার কারণে গভীর মনস্তাপে ভুগছেন। কবি শাহাদাৎ হোসেনের মতো তাঁর জন্মও পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলায়। বাংলাদেশে তার আগমনের পেছনে প্রধানতম স্বপ্নই ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও কর্মের ওপর ব্যাপক গবেষণা চালানো। শুধু চরম দারিদ্র্যের কারণে তিনি তাঁর জীবনের এ প্রধান স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারছেন না। এর ফলে তিনি গভীর হতাশায় ভুগছেন। সমাজের ভাগ্যবান ব্যক্তিদের কেউ কি আছেন যিনি পারেন এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে? তিনি শেখ দরবার আলম, যাকে সবাই একবাক্যে নজরুল গবেষক বলে জানে। শাহাদাৎ হোসেন থেকে শুরু করে শেখ দরবার আলম পর্যন্ত সবার ভাগ্য একই সূত্রে বাঁধা যে সমাজে, সে সমাজকে শিল্প-সাহিত্য সাধনার জন্য কতটা অনুকূল সহায়ক সমাজ বলা যাবে?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন