এটিএম রফিক, খুলনা থেকে : সুবর্ণ জয়ন্তী পার করলেও খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। এ জন্য দুষ্প্রাপ্য বইয়ের বিশাল সম্ভার থাকা সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জ্ঞান পিপাসু পাঠক সমাজ। একই সাথে জর্ণাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ভবনটি। এমনই পরিস্থিতিতে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এখানেই চলবে খুলনা একুশে বই মেলা-২০১৬। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালে মহানগরীর খালিশপুরের বয়রায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশে এই পাবলিক লাইব্রেরিটি গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠার ৫২ বছর অতিবাহিত হয়েছে। অথচ লাইব্রেরিটিকে আধুনিকায়নের জন্য তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারটির অনুমোদিত পদ সংখ্যা ১৯জন হলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই তা ছিল না। বর্তমানে যশোরের একজন প্রেশন অফিস সহকারীসহ ১৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। প্রায় লক্ষাধিক বই বর্তমানে লাইব্রেরিতে রয়েছে। কিন্তু যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করায় অনেক দুষ্প্রাপ্য বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি লাইব্রেরির ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় যেকোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বই আদান-প্রদান, সংরক্ষণসহ সকল কার্যক্রম এখনও সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। আর এ কারণে অনেক দুষ্প্রাপ্য বই নষ্ট হচ্ছে। ক্যাটালগে বই আছে অথচ বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে গবেষক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ লাইব্রেরি ব্যবহারকারি পাঠকরা ভোগান্তিতে পড়েছে। তাছাড়া লাইব্রেরির বহু বই পুরাতন হওয়ায় মলাটের নাম মুছে গেছে। ফলে প্রয়োজনীয় বই খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্রটি আরও জানায়, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এ গণগ্রন্থাগারে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এ পাবলিক লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারে। ফলে এটিকে ‘জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়’ বলা হয়। এখানে রয়েছে শিশু-কিশোর বিভাগ, রেফারেন্স বিভাগ ও সাধারণ বিভাগ। সাহিত্য, বিজ্ঞান, কল্প কাহিনী, গবেষণা, ইতিহাস, কাব্যগ্রন্থ, সাধারণ জ্ঞান, ধর্মীয়গ্রন্থ ও সাধারণ গ্রন্থসহ বিভিন্ন বিষয়ের লক্ষাধিক বই এ লাইব্রেরিতে রয়েছে। এ ছাড়া এখানে জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, সাপ্তাহিক, ষান্মাষিক, মাসিক ও ত্রৈমাসিক পত্র-পত্রিকা রাখা হয়। শুধু বইপাঠের ব্যবস্থা নয় এখান থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এ লাইব্রেরির আওতায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১০টি সরকারি লাইব্রেরি রয়েছে। এগুলোর প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে খুলনা বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরি। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে এই লাইব্রেরির গুরুত্ব অপরিসীম। খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের অফিস সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লাইব্রেরির ভবনটি এত বেশি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে এর দেয়াল থেকে পলেস্তার খসে পড়ছে। বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে। যেকোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া এখন সময়ের দাবি। এছাড়াও একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে লাইব্রেরিটিকে আধুনিকায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। ‘ডিজিটাল’ লাইব্রেরি হিসেবে এটিকে গড়ে তুলতে প্রয়োজন কম্পিউটার সরবরাহ, ইন্টারনেট সংযোগ এবং ইন্টারনেট কর্ণার স্থাপনসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান। দ্রুত পাঠক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ক্যাটালগ কার্ডের পরিবর্তে লাইব্রেরি সফটওয়ারের মাধ্যমে গ্রন্থাগার সেবার আধুনিকায়ন করা। সভা সেমিনার আয়োজনের জন্য এখানে কোন অডিটোরিয়াম নেই। অথচ খুলনাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক লাইব্রেরিতে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। এটি নির্মিত হলে শুধু সেবার মানই বৃদ্ধি পাবে না, সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি নতুন খাত হিসেবে এ অডিটোরিয়াটি পরিচিতি পাবে। কয়েকজন পাঠকের সাথে কথা বললে তারা জানান, লাইব্রেরিটি বর্তমান পাঠকদের অনুকূলে নেই। প্রতিদিন তিন শতাধিক পাঠক এসে থাকেন গ্রন্থাগারটিতে। পাঠক সেবার মান বৃদ্ধি ও পাঠকদের গ্রন্থমুখী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। একুশে বই মেলা খুলনা-২০১৬ উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. আহসান উল্লাহ বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বই মেলা শুরু হবে। বিভিন্ন সময়ের বিভাগীয় এই গণগ্রন্থাগারটির উন্নয়নে কথা বলছে খুলনাবাসী। মেলার সময়ে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আবারো এর সমস্যাবলি উপস্থাপন করা হবে। এ ব্যাপারে প্রিন্সিপল লাইব্রেরিয়ান কাম উপ-পরিচালক হরেন্দ্র নাথ বসু বলেন, দু’দিন হল এখানে দায়িত্বে এসেছি। সমস্যা সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানতে পারেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির জর্ণাজীর্ণ দৃশ্য তো দেখাই যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন