কালাই (জয়পুরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা : জয়পুরহাটের কালাইয়ে গত কয়েক দিনের অব্যাহত ঘন কুয়াশা ও কনকনে তীব্র শীতের সাথে শৈত্য প্রবাহের কারণে আলু ক্ষেতে ব্যাপক হারে লেটব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এতে করে এলাকার কৃষক চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ফলে ওই রোগের কারণে আলুর পাতা ও কা-ে কালো কালো ফোসকা পড়ে মরে যাচ্ছে তরতাজা সবুজ গাছ। এ রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে মন্তব্য আলু চাষিদের। বিশেষজ্ঞদের দাবি টানা শৈত্য প্রবাহের সাথে ঘন কুয়াশার প্রভাবেই এ এলাকার অধিকাংশ আলু ক্ষেতে ওই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা আলুর ক্ষেতে লেটব্লাইট বা পাতা মোড়ানো রোগাক্রান্ত আলু ক্ষেতে মেটারিল, মেটাটাফ ও ফোরাম সমম্বিতভাবে স্প্রে করেছেন। ৭ দিন পর স্প্রে করেছেন রিভাস নামের কীটনাশক। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১ হাজার, ৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত লক্ষ্য মাত্রা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। ওই সব জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। কৃষক ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে আলুর গাছগুলো সবুজ রং ধারণ করে সজীব হয়ে উঠেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে গত কয়েক দিন থেকে ঘন কুয়াশা ও কনকনে তীব্র শীতের সাথে শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকায় আলু খেতে লেটব্লাইট বা পাতার মোড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। সে কারণে কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক আলু ক্ষেত রক্ষায় দিশেহারা হয়ে পরেছে। তাই কৃষকরা আক্রান্ত ক্ষেতে ছত্রাক নাশক ¯েপ্র করেও সুফল পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তারা। কালাই পৌরসভার আঁওড়া মহল্লার আলু চাষি মোক্তাদির ও রেজাউল করিম, থুপসাড়া মহল্লার লবির উদ্দীন, উপজেলার তালোড়া বাইগুনীর বোরহান উদ্দীন, মাত্রাইয়ের রঞ্জু ও বাকি জানান, তারা প্রত্যকে প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ বিঘা করে জমিতে আলু লাগিয়ে থাকেন। কিন্তু আলুর বাড়ন্ত মুহূর্তে বৈরী আবওহাওয়ার কারণে লেটব্লাইট রোগে আলুর ফলন নিয়ে শঙ্কিত তারা। কৃষকরা আরও জানান, গত বছর ২ বিঘা জমিতে আলু আবাদে ১৬ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় বিঘা প্রতি অন্তত ৪ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউল করিম বলেন, ঠা-া আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী কিন্তু একটানা ঘন কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহ এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ঘন কুয়াশা থাকলে আলু ক্ষেত ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত আলু ক্ষেতে ঠা-া আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী কিন্তু একটানা ঘন কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহ এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ঘন কুয়াশা থাকলে আলু খেত ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত আলু ক্ষেতে ৫ থেকে ৭ দিন পর পর প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সিকিউর অথবা ২ গ্রাম একরুবেট এমজেড + ২ গ্রাম ডাইথেন এম অথবা ২ গ্রাম মিলোডি ডিউ + ২ গ্রাম ডাইথেন এম অথবা ১ গ্রাম সিকিউর + ২ গ্রাম মিলোডি ডিউ স্প্রে করলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে। সচেতনতার অভাবে কৃষকরা ওষুধ সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে উপকারের চেয়ে অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হন। কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে কালাই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। সেই সাথে কৃষি সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার জন্য কৃষক ভাইদের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন