তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা
উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে মেশিন (ড্রিল-ড্রেজার) দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এতে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে তেঁতুলিয়ার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তেঁতুলিয়া ভূগর্ভ। অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে মাটির নিচে শূন্যতা দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পে যে কোনো সময় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে যেতে পারে এলাকার আবাদি জমি ও বসতবাড়ি। এছাড়া সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। অবৈধ এ কাজে পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজস রয়েছে বলে স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে জানা যায়। দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকা যাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ পুলিশ প্রশাসনের পকেটে। স্থানীয় পরিবেশবিদ, এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। ড্রিল-ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা যাবে না মর্র্মে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে রুল জারি করে। জানা যায়, ড্রিল-ড্রেজার মেশিনকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে একশ্রেণীর দালাল চক্র। তারা বিভিন মেশিন থেকে চাঁদা তুলে লোকজনকে ম্যানেজ করেন। তারা নিয়ন্ত্রণ করছে কলবাহিনী নামক আরেকটি চক্রকে (যারা মোবাইলে কল দিয়ে প্রশাসনের আগমন জানিয়ে দেয়)। এই কলবাহিনী বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রশাসনের অভিযানের আলামত দেখলেই তারা মেশিন মালিকদের কল করে সঙ্গে সঙ্গে মালিকেরা মেশিন লুকিয়ে রাখে। কলবাহিনীর সদস্যকে জনপ্রতি প্রতিদিন ১ হাজার টাকা করে দেয়া হয় মালিক পক্ষ থেকে। আবার অনেক সময় পুলিশ নিজেরাই তাদের অভিযানের অগ্রিম বার্তা জানিয়ে দেয় কলবাহিনীকে। একশ্রেণীর প্রভাবশালী অসাধু ব্যবসায়ী দিনে ও রাতের অন্ধকারে ডিল-ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করে থাকে। তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক মেশিন চলছে। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি জানলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না তারা। অবৈধ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মাটির গভীর হতে পাথর উত্তোলনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গত এক বছর ধরে এই বোমা মেশিন তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে আসছে কিছু অসাধু মহল। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও খুব একটা তোয়াক্কা করছে না ব্যবসায়ীরা। মাঝে মাঝে জড়িতদের নামে মামলা দেয়া হলেও আইনের ফাঁক ফোকরে বেরিয়ে এসে আবার শুরু করছে। পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মুকুর নেতৃত্বে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে একজন শ্রমিককে মেশিন মালিক পক্ষ হত্যা করে। আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, একটি মেশিন গড়ে ১২ ঘণ্টা চালাতে পারলে ৩ হাজার সেএফটি পাথর উত্তোলন করা যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। এতে খরচ হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। বর্তমান সময় ভালো না তাই ১২ ঘণ্টা চালাতে হচ্ছে। এর জন্য প্রতি মেশিন থেকে পুলিশ, কলবাহিনী এবং নেতাদের জন্য প্রতি রাতে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। ভজনপুর এলাকার কয়েকজন নেতা এই চাঁদা তুলে বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করে। জানা যায়, ২০১৫ সালে পরপর কয়েকবার ভূমিকম্প হয়। যার উৎপত্তি স্থল ছিল পঞ্চগড় থেকে একশ কিলোমিটারের মধ্যে নেপাল ও ভারতে। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন নেপালের মতো ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই তেঁতুলিয়ার বি¯ৃÍর্র্ণ এলাকায় ভূমি ধসের সৃষ্টি হবে। জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন তারা। এ বিষয়ে গত সোমবার ভজনপুর বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন রোধকল্পে জন উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ ম-ল। বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুুপার গিয়াস উদ্দিন আহম্মদ, ১৮ বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্ণেল আল হাকিম মুহাম্মদ নওশাদ, উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহিন। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সম্মিলিত জেলা পাথর-বালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানুল্লাহ বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আবুু সালেক, উপজেলা পাথর বালি সমিতির সভাপতি মজিবর রহমান। সভায় বক্তারা ঘোষণা দেন যে, আজ থেকে কোনো প্রকার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা যাবে না। যদি কেউ উত্তোলন করে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন