৭ দিনের আল্টিমেটাম
ঢাকার সাভারে ছাত্রীকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করায় ছুরিকাঘাতে মারুফ খান নামের ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামিদের দ্রæত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
সচেতন সাভারবাসী ও সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাতে হাত ধরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের গেন্ডা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন থেকে খুনিদের গ্রেফতারে ৭দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয় প্রশাসনকে।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে নিহতের স্বজন ও সাভারের সুশীল সমাজের লোকজনও অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে যে কলেজছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় খুন হতে হলো মারুফকে সেই কলেজছাত্রী মোনা ও তার পরিবারও উপস্থিত ছিল। কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে এ্যাবাক স্কুল, প্যাপিরাস ডিজিটাল স্কুল, সাভার ক্যাডেট স্কুলসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক শিক্ষিকা ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার কয়েকশ’ মানুষ অংশ নেয়।
এসময় নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, হত্যাকান্ডের ৯দিন পেরিয়ে গেলেও মূলহোতা মঞ্জুসহ তার সহযোগী আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এসময় তারা বলেন, ৭ দিনের মধ্যে ঘাতক এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনা না হলে পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনকে দায়ী থাকতে হবে। এমনকি খুনিদের বাড়ি-ঘর ঘেড়াও করা হবে। বক্তারা ঘাতক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতার এবং অবৈধ হাটবাজার থেকে আয়ের উৎস্য বন্ধেরও দাবি জানান।
মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে ইভটিজিংয়ের শিকার ঢাকা কমার্স কলেজের মেধাবী ছাত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে ওইদিনের মর্মস্পর্শী ঘটনার বর্ণনা করেন। তখন তার চোখেমুখে ছিলো আতঙ্কের ছাপ।
বক্তবে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের পরিচালক রেজাউর রহমান সোহাগ তার মামাতো ভাই মারুফ খান হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। আর কোন মারুফকে এমন নির্মমভাবে যাতে খুন হতে না হয় সেজন্য তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নিহতের বাবা আতাউর রহমান খান আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, আমার ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছে। আর কোন মায়ের কোল যাতে খালী না হয় সেজন্য তিনি প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানান এবং তার ছেলের খুনিদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আলীনুর রহমান খান সাজু, কৃষিবিদ ড. রফিকুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লা, তেতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর, সাবেক (অব:) সচিব আব্দুস সাত্তার, সাভার উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন খান নঈম, বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের পরিচালক ও দৈনিক ইনকিলাবের ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউর রহমান সোহাগ, সাভার কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মাকসুদুর রহমান খান, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান খান, সাভার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি তুহিন খান, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ আচার্য্য, সাভার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আব্দুল কাদের তালুকদার, ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী কাজী রীতা, মহিলা পরিষদ নেত্রী নাসরিন জাহান, জাবির সাবেক ছাত্রনেতা শাহীনুর রহমান খান প্রমুখ।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদ হোসেন জানান, যে আসাদুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে সেই তথ্য অনুযায়ী অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দ্রæত তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো বলেও তিনি জানান।
এদিকে আসামিরা মামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ঈদের আগের দিন ২১ আগস্ট (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় সাভার পৌর এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গেন্ডা বাসস্ট্যান্ডের পাশে ছুরিকাঘাতের গুরুত্বর জখম হয় মারুফ খাঁন। পরে মুমূর্ষু মারুফকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। মারুফ সাভার পৌর এলাকার নামাগেন্ডা মহল্লার আতাউর রহমান খানের ছেলে। মেধাবী মারুফ চলতি বছর ঢাকার মিরপুর কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে।
পুলিশ জানায়, ২২ আগস্ট (বুধবার) সকালে নিহতের বড়ভাই লুৎফর রহমান খান মানিক বাদি হয়ে তালবাগ ও টিয়াবাড়ি মহল্লার মঞ্জু, শ্যামল, প্লাবন, মমিন, শামীম, রইছ, আসাদুল, মুক্তাদিন, ইমরানের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) অপূর্ব দাস জানান, কলেজছাত্রকে হত্যার ঘটনায় জড়িত মুলহুতাসহ অনান্যদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে তারা পরিবারসহ পলাতক রয়েছে। ঘটনার পরদিন আসাদুলকে গ্রেফতার করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন