ব্লু -হোয়েল, মেমো ও গ্র্যানি গেম তরুণদের জন্য আত্মঘাতী
অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বান
পরিবারসহ সকলের সচেতনতার মাধ্যমে আত্মঘাতী গেম ব্লু -হোয়েল বন্ধ করা হলেও অনলাইনে নতুন করে আরো দু’টি গেম ছড়িয়ে পড়ছে। এ জন্য রাজধানীসহ সারাদেশে তরুন-তরুনীদের বিষয়ে সর্তক থাকতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। নতুন এই ফাঁদের নাম মোমো চ্যালেঞ্জ সুইসাইড গেম ও গ্র্যানি গেম। এরই মধ্যে এসব গেম ছড়িয়ে পড়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে।
পুলিশ সদরদফতরের এ আইজি (মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অনলাইনে এ ধরনের আত্মঘাতী গেম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাধারন তরুন-তরুনীরা অনলাইনে সক্রিয় থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এ জন্য অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিস্ট্র সকলকে এ বিষয়ে সর্তক থাকা জরুরী। পুলিশের পক্ষ থেকে সারাদেশেই সচেতনতার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সর্বত্র এর নজরদারী করছি। কেউ যদি এ ধরনের আত্মঘাতী গেম ছড়ানোর চেষ্টা করে তবে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এ গেম খেলে এমন দুজনকে সনাক্ত করে রিহ্যাবিলিটেশন করা হয়েছে। এর ভয়াবহতার বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশে ব্লু -হোয়েলের সব লিংক বন্ধের নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। পারিবারিক সচেতনতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্লু-হোয়েল মুক্ত করার সময় নতুন আরেক মরণফাঁদ তৈরি হলো। নতুন এই ফাঁদের নাম মোমো চ্যালেঞ্জ সুইসাইড গেম। এই গেম ছড়িয়ে পড়ছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে। মোমো একটি মেয়ের ছবি। যার দু’টি চোখ কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসছে। তার পা দু’টি পাখির মতো। পায়ের আঙুল ও নখগুলো বড় বড়। মুখ অসম্ভব রকমের চওড়া। মাথা লম্বা। চুল ঘন কালো। দুই কানের পাশ দিয়ে তা অনেক নিচু পর্যন্ত নেমেছে। মাথার ওপরের দিকটা দেখলে মনে হবে, টাক আছে। তারই মাঝে কিছুটা জায়গা ছেড়ে ছেড়ে রয়েছে চুল। মোমোর এই ছবি এঁকেছিলেন জাপানি শিল্পী মিদোরি হায়াশি। তবে শিল্পী হায়াশি কোনোভাবেই এই আত্মহত্যায় প্ররোচণ দেয়া গেমের সঙ্গে জড়িত নন। ২০১৬ সালে টোকিওর ‘ভ্যানিলা গ্যালারি’তে একটি শিল্প প্রদর্শনীর জন্যই ওই ‘মোমো’র ছবি এঁকেছিলেন হায়াশি। নতুন এই গেমের ফাঁদে পড়ে ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনার ১২ বছরের এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। এ বছর ‘মোমো’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে ল্যাটিন আমেরিকায়। তবে হোয়াটসঅ্যাপ- মেসেঞ্জারের মাধ্যমে এর মধ্যেই গেমটি পৌঁছে গেছে এশিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপে। ভারতে অনেকেই এই গেমে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কাছে গিয়েও ফিরে এসেছেন। তবে এই দুই গেমকে ছাপিয়ে আগস্টের শেষের দিকে গ্র্যানি নামের নতুন গেমটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি ভারতের ময়নাগুড়ির তিন স্কুলছাত্র রাতে হঠাৎ করেই অসংলগ্ন আচরণ শুরু করে। কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করে, আবার কেউ পরিবারের লোকজনকে মারধর করে। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইল ফোন জব্দের পর পুলিশের সাইবার ইউনিট গ্র্যানি গেমের বিষয়ে জানতে পারে।
সূত্র জানায়, ভারত পুলিশের সাইবার বিশেষজ্ঞরা তদন্তের পর প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, গ্র্যানি নামের এই গেমটি মোমো বা ব্লু -হোয়েলের মতো লিংক নির্ভর নয়। গেমটি মূলত ভয়ের। এই গেমের বিভিন্ন ধাপে রক্ত, ভূত বিভিন্ন রকম হিংসার ঘটনা রয়েছে। এছাড়াও যারা ব্লু -হোয়েল ও মোমো’র শেষ পর্যন্ত যেতো তারা আত্মহত্যা করতো কিংবা আত্মহত্যা চেষ্টা করতো। তবে গ্র্যানি গেমের মাধ্যমে পরিবারের লোকজনকে মারধর হত্যার মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রাণঘাতী ব্লু -হোয়েল, মোমো ও গ্র্যানি গেম খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিট। এই তিনটির কোনো একটি গেম খেললে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জব্দ করা হবে তার মোবাইল ফোনসহ যাবতীয় জিনিসপত্র।
পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলাম বলেন, এই গেমগুলো গেইমার এবং তার পরিবারের জন্য প্রাণঘাতী। গেমগুলো তরুণ সমাজকে হতাশাগ্রস্ত ও মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশে গেমগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। ভারত-পাকিস্তানেও এই ৩টি গেম নিষিদ্ধ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন