গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা
গোপালগঞ্জ পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পৌর সভার লক্ষাধিক মানুষ পানি সংকটে পড়ে নাকাল হয়ে পড়েছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল পানি সরবরাহ করছে। পৌরসভার অনেক এলাকার মানুষের পানি পাচ্ছেন না। অসহনীয় গরমে তীব্র পানি সংকটে পৌরবাসীর মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় গোপালগঞ্জ শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তখন পানি নিয়ে চরম বিপাকে পড়বে পৌরবাসী ও পৌর কর্তৃপক্ষ। গোপালগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজার রোডের বাসিন্দা মুকুল হোসেন বলেন, কোন দিন সামান্য পানি পাই। আবার কোন দিন পানি পাই না। পানির কষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা পান করা যাচ্ছে না। মিয়াপাড়ার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, সরবরাহকৃত পানি প্রয়োজনের তুলায় একেবারেই অপ্রতুল। এ পানি পানের অযোগ্য। এ দিয়ে গোসল, কাপড়, থালা, বাটি ধোয়া যায় মাত্র। খাবার পানি হিসেবে কোম্পানির পানি কিনে খেতে মাসে প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার টাকা ব্যায় করতে হচ্ছে। এর মধ্যে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত লবণাক্ত পানি সরবরাহ করা হয়। এতে আমদের পেটের পীড়া সহ শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। গোপালগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ বিভাগ জানিয়েছে, শহরে প্রতিদিন ১ লক্ষ গ্যালন পানির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৪০ হাজার গ্যালন। পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ১২ টি ৮০ হর্স ও ৬০ হর্স পাওয়ার পানি সরবরাহ সাবমারসেবল মোটরের মধ্যে ৮টি বিকল। যে ৪টি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে সেগুলো যে কোন সময় বিকল হয়ে যেতে পারে। পানি শোধনাগার ও প্রায় বিকল হয়ে পড়েছে। এখন সঠিকভাবে পানি শোধন করা যাচ্ছে না। তাই পৌরবাসীকে পৌর কর্তৃপক্ষ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। গোপালগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক জাকারিয়া আলম জানান, ২০০২ সালে ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে পৌরবাসীকে সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য মধুমতি নদীর সাথে সংযোগ করে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু করা হয়। ওই সময় ৫ হাজার গ্রাহকের পানি সরবরাহের চিন্তা করে প্লান্ট স্থাপন হয়। সে সময় গ্রাহক ছিল মাত্র ২ হাজার ৩শ’। বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বাড়ি-ঘর নির্মাণের করা হচ্ছে। পৌর এলাকায় মানুষের বসবাস কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। নির্মিত হয়েছে নতুন বহুতল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক, বাণিজ্যিক মার্কেট, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, সরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক ও বীমা ভবন। ফলে পানির চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি ৮০ হর্স পাওয়ার সাবমারসেবল মোটরের দাম ৪০ লাখ টাকা এবং একটি ৬০ হর্স পাওয়ার সাবমারসেবল মোটরের দাম ৩০ লাখ টাকা। এরকম ১২টি মোটর স্থাপন করতে প্রায় ৪ কোটি টাকা প্রয়োজন। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি মেরামত করতে আরো ৫ কোটি টাকা দরকার। মোটর ও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট অকেজ হয়ে পড়লে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু বলেন, পানি সরবরাহ প্লান্ট চালুর পর থেকে প্লান্টটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এ কারণে প্লান্টের সব কিছুই প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। পানি ঠিকমতো শোধন করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই অর্ধেক শোধন করা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এই প্লান্টটি চালু রাখতে প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রয়োজন। গোপালগঞ্জে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও বর্ধিত এলাকার শহরবাসীর প্রয়োজনে আরো একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। যে কোন মুহূর্তে মোটর ও প্লান্ট বিকল হয়ে পড়লে পানি নিয়ে শহরে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন