চাটমোহর (পাবনা) উপজেলা সংবাদদাতা
বিলের বুকজুড়ে সবুজের সমারোহ। এরই মাঝে পাকা আর আধা পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বিলের চারপাশে। মৃদু বাতাসে দুলছে ধানের শীষ। আর সেই ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে ভূমিহীনদের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য এখন দেশের বহুল আলোচিত পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলকুড়ালিয়া বিলে। গত বুধবার থেকে বিলকুড়ালিয়ায় শুরু হয়েছে ভূমিহীনদের ধান কাটা উৎসব। ভূমিহীন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান রানা বিলের সার্বিক অবস্থা ইউএনওর কাছে তুলে ধরে জানান, ইতিমধ্যে ৭৭৬টি পরিবারের মাঝে বিলের খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদানে দলিল সম্পাদন হয়েছে। বাকি ৫০৪টি পরিবারের আবেদন কুবিলয়াত দলিল সম্পাদনে যেন বিলম্বিত না হয় সে দাবি জানান। এ সময় ইউএনও শেহেলী লায়লা জানান, বাকি আবেদনগুলো যেন দ্রুত জেলা প্রশাসক মহোদয় দলিল সম্পাদনের অনুমোদন দেন সে বিষয়ে আগামী ২৫ এপ্রিল জেলা রাজস্ব সভায় তুলে ধরবেন। ভূমিহীন উন্নয়ন সংস্থার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নুরে আলম সিদ্দিকী মঞ্জু জানান, বিলের চারপাড়ের ১ হাজার ৬শ’টি ভূমিহীন পরিবার সাড়ে ১১শ’ বিঘা খাসজমিতে এ বছর ৩২টি অগভীর নলকূপ ও ৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বোরো রোপণ করে ভূমিহীনরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই জমি থেকে প্রায় ২৬ হাজার মণ ধান উৎপাদনের আশা করছেন তারা। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় শান্তির সুবাতাস বইছে ভূমিহীন পরিবারগুলোতে। এই ধান কাটার পর আমন ধান রোপণ করবেন ভূমিহীনরা। প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের নেতৃত্বে লাল পতাকা উড়িয়ে বিলকুড়ালিয়া বিলের ১ হাজার ৪শ’ বিঘা খাস জমি ভূমিগ্রাসীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে নিজেদের দখলে নেয়। এরপর ভূমিহীন উন্নয়ন সংস্থা গঠনের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে একসনা লিজ নিয়ে খাসজমি চাষাবাদ করে আসছিল ভূমিহীনরা। দীর্ঘ ২২ বছর ভূমিহীনদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সফলতা ও উচ্চ আদালতে মামলা-মোকদ্দমা সরকারের পক্ষে রায় আসার পর ২০১৩ সাল থেকে নিরঙ্কুশ খাস জমি হিসেবে বিলকুড়ালিয়ার জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন