সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অস্তিত্ব রক্ষার আগামী জাতীয় নির্বাচন

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:১৩ এএম

যেখানে জয়-পরাজয়ের বিষয় জড়িত, সেখানে আশা এবং শঙ্কা থাকা স্বাভাবিক। বিশেষ করে যে ব্যক্তি বা দল চ্যাম্পিয়ন হয় এবং পুনরায় তা ধরে রাখার জন্য প্রতিযোগিতায় নামে. তার আশা ও শঙ্কা বেশি কাজ করে। তার পারফরমেন্স যদি খারাপ হয় বা বুঝতে পারে চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখতে শক্তিতে ঘাটতি রয়েছে, তখন শঙ্কায় পেয়ে বসে। জয়-পরাজয়ের বিষয়টি যদি কোনো দলের জন্য ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়, তবে তার শঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে যে দল ক্ষমতায় থাকে ক্ষমতা হারানোর এক ধরনের ভয় তাকে পেয়ে বসে। ক্ষমতার শেষ দিকে এসে এ ভয় আরও জেঁকে বসে। ফলে তার প্রতিপক্ষের প্রতি দলের নেতাদের গলার আওয়াজ, হুমকি-ধমকি, হুংকার বৃদ্ধি পায়। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য থেকে এখন এ ধরনের আওয়াজ বেশ জোরেসোরে বের হচ্ছে। বলা যায়, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, তাদের নার্ভাসনেসও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধান প্রতিপক্ষকে তারা তুলোধুনো করছেন। এমনকি গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে যে বিশাল জনসভা করা হয়, ঐ দিন সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, যে দল গত ১০ বছরে বিএনপি অনেক আন্দোলনের হুমকি দিয়ে একদিনও চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপির নেতাদের পদত্যাগ করা উচিত। প্রতীয়মাণ হয় যে, তার এ বক্তব্য অনেকটা অসহিষ্ণু এবং বিচলিত হওয়া থেকে দেয়া। অন্যভাবে দেখলে, যদি প্রতিপক্ষের নেতারা পদত্যাগ করেন, তাহলে তো ঐ দলের কোনো অস্তিত্বই থাকে না। আবার এটাও হতে পারে, প্রতিপক্ষকে উত্তেজিত করার জন্য তিনি এ কথা বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে, রাজনৈতিক বক্তব্য বাগাড়ম্বরপূর্ণ হলেও তাতে কিছুটা সারবত্তা থাকা উচিত। তিনি প্রতিপক্ষকে প্রায় প্রতিদিনই হুমকি দিয়ে বলেন, আন্দোলন করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এ ধরনের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে ক্ষমতা হারানোর শঙ্কা পেয়ে বসেছে। তারা বুঝতে পারছে, তাদের পারফরমেন্সে ঘাটতি রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয় না-ও পেতে পারেন। তাই প্রতিপক্ষকে প্রতিযোগিতা থেকে দূরে ঠেলে দেয়া বা বিতাড়িত করার জন্য ক্রমাগত হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এর উপর দেশি-বিদেশি সব মহল থেকেই জোর তাকিদ দেয়া হচ্ছে, আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। এ বিষয়টিও ক্ষমতাসীন দলের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে।
দুই.
কাজেই রাজনীতি করার অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে, ক্ষমতায় যাওয়া। এই ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টিতে যদি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন, রায় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকে, তাহলেই দেশ কল্যাণের পথে এগিয়ে যায়। এর ব্যতিক্রম হলেই রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বিগত দশ বছরের শাসনামল বিচার করলে দেখা যাবে, প্রথম পাঁচ বছর সে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায় নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। দ্বিতীয় পাঁচ বছরের শাসনামলটি খুবই ত্রæটিপূর্ণ। এতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায় ছিল না। দলটি জনগণের মতামতকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মত করে পরিচালনা করছে। ফলে দেশে এক ধরনের দলীয় নেতা-কর্মী এবং দলীয়করণকৃত শাসন কায়েম হয়েছে এবং তা বলবৎ রয়েছে। যদিও সরকার কথায় কথায় জনগণের দোহাই দিচ্ছে এবং বলছে জনগণ তার সঙ্গে আছে। আর জনগণকে তার উন্নয়নের জোয়ারের কথা জোর গলায় বলছে। অথচ প্রকৃত চিত্র হচ্ছে, দেশে এক ধরনের গায়ের জোরের শাসন চালু করা হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় যদি খোঁজ নেয়া হয়, তবে দেখা যাবে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে যে, কারো পক্ষে ‘কি’ শব্দটি উচ্চারণ করার সাহস নেই। মনে হবে, সবকিছুই বেশ শান্ত এবং শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করছে। নেতা-কর্মী এবং দলীয়করণকৃত প্রশাসনের বিপক্ষে সাধারণ মানুষের কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। ক্ষমতাসীন দলও হয়তো এটাই চেয়েছে যে, জনগণের কথা বলার দরকার নেই। আমরা যা বলব, যেভাবে চালাব তাদের তা শুনতে ও চলতে হবে। জনগণের ভেতরে ক্ষোভের পাহাড় জমা হচ্ছে। নিপীড়িত মানুষ নীরবেই গুমরে মরছে। ক্ষমতার কাছে তারা অসহায় হয়ে রয়েছে। তবে তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ক্ষমতাসীন দল যে তা বোঝে না কিংবা বুঝেও জোর করেই দমিয়ে রাখতে চায়, তা ভুক্তভোগী মানুষের অজানা নেই। এজন্য ক্ষমতাসীন দলের কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, ক্ষমতায় থাকতে না পারলে দলের অনেক নেতা-কর্মী বিপদে পড়বে। এ নিয়েও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এক ধরনের নার্ভাসনেস কাজ করছে। তারা জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। ক্ষমতায় থাকতে না পারলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই যে করেই হোক, যেভাবেই হোক, ক্ষমতায় থাকতে হবেÑএমন মনোভাব দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে কাজ করছে। অন্যদিকে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় পুনরায় আসতে পারলে বিরোধী দলের বিশেষ করে প্রধান প্রতিপক্ষের অস্তিত্ব থাকবে কিনা, এ প্রশ্নও উঠছে। কারণ ক্ষমতাসীন দলের বিগত দশ বছরের শাসনামলে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির কী দশা করা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষ মাত্রেই জানে। পুনরায় ক্ষমতাসীন হলে কী দশা হবে, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। দেশ এক মহাসংকটের দিকে এগিয়ে যাবে। সাধারণত গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা ধারণ করা ক্ষমতাসীন কোনো রাজনৈতিক দলের এমন মনোভাব থাকে না। যখনই এমন মনোভাব দেখা দেয়, তখন তাদের মধ্যে জনগণের রায় উপেক্ষা করে স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতায় থাকার চিন্তা থাকে না। তার মধ্যে এক ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব দেখা দেয়। ক্ষমতাসীন দলের এ ধরনের মনোভাব নিয়ে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে কথাও উঠেছে। সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান ছিল বড় স্বৈরাচার। ১০ বছরের বেশি টিকেনি। এখন যে স্বেচ্ছাচারী সরকার আছে তাদের মেয়াদও ১০ বছর। অর্থাৎ তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে স্বৈরাচারি সরকারের সাথে তুলনা করেছেন। ক্ষমতাসীন দলও জানে, বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে এবং দেশ শাসন করে চলেছে এবং এটা নৈতিকভাবে সঠিক নয়। মূলত ক্ষমতার লোভ এবং টিকে থাকার জন্য যারাই তার বিরোধিতা করেছে কিংবা জনগণের হয়ে কথা বলতে চেয়েছে, তাদের সে দমন-পীড়ন করেছে। শুধু প্রতিপক্ষই নয়, পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে মিডিয়ায়ও যাতে তার বিরোধিতা করতে না পারে-এমন আইন ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। সে যদি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসত, তাহলে তো এসবের কোনো প্রয়োজন পড়ত না এবং ক্ষমতা হারানোর ভয় কিংবা হেরে গেলে অস্তিত্বসংকটের মুখোমুখি হতে হবে এমন আশঙ্কাও থাকত না। এখন ক্ষমতার শেষের দিকে এসে দলটির নেতা-কর্মীদের কথায় যে তেজ দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক তারা আবারও যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। প্রশ্ন হচ্ছে, যে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতাসীন দল যুগের পর যুগ আন্দোলন করেছে, সে দলটিকে কেন এমন অবস্থান গ্রহণ করতে হবে? স্বৈরাচারের তকমা গায়ে লাগাতে হবে বা তুলনীয় হতে হবে? অথচ তার কাছ থেকেই গণতন্ত্রের বিকাশ সবচেয়ে বেশি কাম্য ছিল। তা না করে গণতন্ত্রকেই সংকুচিত করে ফেলেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এখন এ দলটি যদি আবারও নামমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়, তাহলে দলটি কি নিজেকে আর গণতান্ত্রিক দাবী করতে পারবে?
তিন.
বলা হচ্ছে, বিএনপি’র জন্মের ৪১ বছরে সবচেয়ে দুঃসময়ে দলটি পড়েছে। শীর্ষ দুই নেতা প্রত্যক্ষভাবে মাঠে নেই। যাদের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা সবসময় উজ্জীবীত ও চাঙা থাকবে তাদের অনপুস্থিতি দলের মধ্যে কিছুটা হলেও হতাশা সৃষ্টি করে। তবে দলটির শীর্ষ নেতাদ্বয়ের পরের নেতৃবৃন্দ যে দলের সুসংহত অবস্থা ধরে রাখতে পারছেন, তা গত ১ সেপ্টেম্বরের নয়াপল্টনস্থ বিশাল জনসভায় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি থেকে বোঝা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, দলের সমাবেশে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি হলেও এবং তাদের সমর্থন থাকা সত্তে¡ও কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না কেন? এর মূল কারণ হতে পারে, সরকারের কঠোর অবস্থান এবং দলের নেতৃত্বের দৃঢ়তার দুর্বলতা। আমরা দেখেছি, এরশাদ সরকারের সময় অত্যন্ত দুর্বল সাংগঠনিক শক্তি নিয়েও শুধুমাত্র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে দলটি ব্যাপক আন্দোলনে ভূমিকা রাখে এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়। এখন যে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি তৃণমূল পর্যন্ত এবং ব্যাপক জনসমর্থন থাকার পরও সরকারকে টলানোর মতো বা ভাবনায় ফেলার মতো কোনো আন্দোলন করতে সক্ষম হচ্ছে না। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, সময় মতো আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে এবং ক্ষমতাসীন দল তাদের দাবী মানতে বাধ্য হবে। ক্ষমতাসীন নেতাদের মধ্যে বিএনপির আন্দোলনের এ হুমকি নিয়ে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তার উদয় হয়নি। বরং তাদেরকে অনেকটা রিলাক্সড মুডে দেখা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, বিএনপি কী করবে তাই এখন দেখার বিষয়। তবে ক্ষমতাসীন দল যে বহু আগে থেকেই আঁটঘাট বেঁধে প্রস্তুতি নিয়েছে তা আঁচ করতে কষ্ট হয় না। ইতোমধ্যে পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এর অংশ হিসেবে গত কিছুদিন থেকেই দেশব্যাপী বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন কি কখনো শান্তিময় এবং বিশৃঙ্খলা ছাড়া হয়েছে? আন্দোলন মানেই কোনো না কোনোভাবে জানমালের ক্ষতি হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল কি বলতে পারবে, সে যখন সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তখন তা একেবারে শান্তভাবে হয়েছিল? কোনো ধরনের সহিংস বা জ্বালাও-পোড়াও হয়নি? কথায় কথায়, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের আগে বিএনপি ও তার জোট যে আন্দোলন করেছে এবং তাতে যে সহিংসতা হয়েছে, তার উদাহরণ টেনে আনা। সে সময় যে সহিংসতা হয়েছে, তার দায় কি পুরোপুরি বিএনপি ও তার জোটের উপর দেয়া যায়? এ আন্দোলনে যে অন্য কোনো পক্ষ সুযোগ নেয়নি, তা কি গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়? যেহেতু আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বিএনপি ও তার জোট, তাই দায় তার উপরই পড়েছে। এখন বিএনপি আগামী নির্বাচন তার দাবী অনুযায়ী নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আদায়ের জন্য কী কৌশলে আন্দোলন করবে, তা দেখার বিষয়। দলটিকে সতর্ক থাকতে হবে, ৫ জানুয়ারির আন্দোলনের মতো এবারের আন্দোলনে কেউ যেন সুযোগ নিতে না পারে। দলটিকে তার বাইরের অন্যান্য যেসব সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে, তাদের সাথে যে কোনো উপায়ে সমঝোতার মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সব দলের নেতৃবৃন্দ যখন একই মঞ্চে উঠবে, তখন এমনিতেই কোনঠাসা হয়ে থাকা জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে। সরকারর চাপে পড়বে। মোট কথা, জাতীয় রাজনীতিতে শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা যখন এক হয়ে সরকারবিরোধী অবস্থান নেবেন, তখন সরকারের টনক নড়তে বাধ্য হবে। অবশ্য সরকার যে এ ঐক্য সহজে হতে দেবে তা ভাবার অবকাশ নেই। কারণ ইতোমধ্যে সরকার তার বাইরের বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দকে বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। রাজনীতিতে ক্ষমতার লোভ এমন এক জিনিস যে তা সংবরণ করা খুবই কঠিন। এক নেতার এক দল হলে তো কথাই নেই। সেই নেতা দেরি না করে মন্ত্রীত্ব বা ক্ষমতার অংশীদার হয়ে যাবেন। এমন নজির বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেও রয়েছে। তবে দেশকে পূর্ণ গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন কায়েম এবং একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে রক্ষা করতে হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিত্বদের নির্মোহভাবে দেশের কল্যাণে এক হওয়া জরুরী। এ লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সরকার যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তার ভেতর দুঃশ্চিন্তা দেখা দেবে। তাদের দাবী মানতে বাধ্য হবে। এতে এমনিতেই গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতাসীন হওয়া যাবে। ড. কামাল হোসেন তো বলেছেন, এ জীবনে তিনি আর কিছু চান না। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নিজের জীবন দিতে পারেন। তার এই স্পিরিট সরকারবিরোধী অন্য নেতৃবৃন্দ যদি ধারণ করেন, তবে সুষ্ঠুভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন সহজেই গড়ে উঠবে। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে এমন একটি আন্দোলন গড়ে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে। এজন্য তাদের সামনে জোরালো নেতৃত্ব থাকতে হবে। তা নাহলে তারা কার নেতৃত্বে মাঠে নামবে? বিএনপিকে সাধারণ মানুষের এই পালস্ বুঝতে হবে। অবশ্য বিএনপি মহাসচিব সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে অন্যান্য দলের দাবীর ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার ইংগিত দিয়েছেন। এটা শুভ লক্ষণ। তাদের যে লক্ষ্য, তা পূরণ করতে হলে এর বিকল্প নেই।
চার.
ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ আগেও বলেছেন এবং এখনও বলছেন, ক্ষমতায় থাকতে না পারলে তাদের অনেক নেতা-কর্মী বিপদে পড়বে। অস্তিত্ব রক্ষার হুমকিতে পড়বে। এ থেকে বোঝা যায়, তারা যে ক্ষমতায় থেকে বিরোধী দলের ওপর যে নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছে, ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া অবশম্ভাবী। ফলে সে যে কোনোভাবেই হোক ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন করে ৫ জানুয়ারির মতোই ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপি যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য না করে তবে তার পরাজয়ও নিশ্চিত এবং পরবর্তীতে এর পরিণতি কী হবে, তা বলাই বাহুল্য। ফলে সরকার যেমন তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে কোনো উপায় অবলম্বন করে চলেছে, তেমনি বিএনপিকেও তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তাদের দাবী আদায় করতে হবে। এছাড়া তার সামনে বিকল্প কোন পথ নেই। যদি দলটি সরকারবিরোধী অন্য সবদলের সাথে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে, তবে তার সাফল্য নিশ্চিত হতে পারে। সরকার যতই ভয়-ভীতি দেখাক না কেন তা উপেক্ষা করেই তাদেরকে জনসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। তাদের ধরেই নিতে হবে, এ সরকার যদি পুনরায় যেনতেনভাবে ক্ষমতাসীন হয়, তবে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। কাজেই লক্ষ্য অর্জনে তাদেরকে অন্য বিরোধীরাজনৈতিক দলের সাথে ছাড় দিয়ে হলেও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বাবুল ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:১৩ এএম says : 0
সরকারবিরোধী অন্য সবদলের সাথে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে, তবে তার সাফল্য নিশ্চিত হতে পারে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন