শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দুপচাঁচিয়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ জনজীবন জমে উঠেছে আইপিএস ও জেনারেটরের ব্যবসা

প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে

দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বৈশাখের তীব্র দাবদাহে বিভিন্ন পেশার লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উপজেলায় বিদ্যুৎ সংকট পূরণে জমে উঠেছে জেনারেটর ও আইপিসির ব্যবসা। দুপচাঁচিয়া উপজেলা বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ কেন্দ্র (বিউবো) সূত্রে জানা গেছে, এই কেন্দ্রের অধীনে প্রায় ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এই কেন্দ্র থেকে তিনটি হিমাগার দুইটি বিস্কুট কারখানা একটি পেপার মেইল দুইটি অটো রাইস মিল একটি ময়দার মিল প্রায় সাড়ে ৬ শত রাইস মিল ৩৭৯ শ্যালো মেশিন ও ডিপ টিউবয়েল এবং প্রায় ১৫ হাজার বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দুপচাঁচিয়া জোনাল অফিসের অধীনে প্রায় সাড়ে ১২শ’ শ্যালো ও ডিপ টিউবয়েল, ৩০টি রাইস মিল, ২টি হিমাগার, প্রায় ২৫ হাজার বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এ সমিতির অধীনে বোরো মৌসুমে প্রায় ১০ মেগাওয়াট এবং অন্য সময় প্রায় ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় উপজেলার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে দিন দিন জেনারেটর ও আইপিসির ব্যবহার বাড়ছে। উপজেলার বন্দর তেমাথা পুরাতন বাজার উপজেলা প্রশাসন মোড় সিওঅফিস বাসস্ট্যান্ড ও থানা বাসস্ট্যান্ড এ প্রায় ৯ থেকে ১০টি জেনারেটর এবং উপজেলার বাইরে বন্দর নগর তালোড়া বাজার, চৌমুহনী বাজার, সাহারপুকুর বাজারের দোকানগুলোতে জেনারেটর বসিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ সব এলাকার জেনারেটর মালিকদের মধ্যে পুরাতন বাজারের রূপ কুমার, বন্দর তেমাথার মিজানুর রহমান, সিওঅফিস বাসস্ট্যান্ড এলাকার রাজিব সরদার, দুপচাঁচিয়া নিউ মার্কেট সামছুদ্দিন আহম্মেদের চেয়ারম্যান মার্কেটে আবুল হোসেন, জোবেদা মসার্কেটে সুরুজ আলী, মোমিন টেইলার্সের আব্দুল মোমিন, লিড টেইলার্সের মুনছুল আলী। এ সব জেনারেটর দিয়ে প্রায় সহস্রাদিক দোকান ও বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে জমজমাট ব্যবসা করছেন মালিকরা। এ ছাড়াও কিছু কিছু দোকানে ও বাসাবাড়িতে নেয়া হয়েছে আইপিএস। সিওঅফিস বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী জেনারেটর ব্যবসায়ী মেসার্স রাজিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাজিব সরদার গতকাল ১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার একান্ত এক স্যাক্ষাৎকারে জানান, তার জেনারেটরের অধীনে প্রায় ৪শ’টি দোকানের সংযোগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে একটি বাল্বের জন্য মাসে নি¤েœ ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা হারে বিদ্যুৎ বিল আদায় করে। এতে সে মাসে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা আদায় করে থাকে। এর মধ্যে জেনারেটরের তেল মবিল বাবদ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও ৩ জন কর্মচারী মাসিক বেতন বাবদ ১০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদে সে প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় করে বলে জানায়। শীত মৌসুমের তুলনায় এই গরমের মৌসুমে তার ব্যবসাটা জমজমাটভাবে চলে। আবার এক শ্রেণির ইলেকট্রনিক্স মোবাইলের দোকানে এবং বাসাবাড়িতে আইপিএসের ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সুবিধা নিচ্ছে। তবে আইপিএস ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেন একটা ব্যাটারী ১ বছরের বেশি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে বড় বড় মিল ও কারখানার মালিকরা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে নিজস্ব জেনারেটর ব্যবহার করছেন। তবে এতে ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এ সব মিল ও কারখানার মালিকরা। উপজেলা সদরের উষা ব্রেক এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী দ্বিজেন্দ্রনাথ বসাক মন্টু “দৈনিক ইনকিলাব” কে জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। এতে বিভিন্ন মোকামে চাহিদা মোতাবেক পণ্য পাঠাতে বিলম্বনায় পড়তে হবে। জেনারেটর দিয়ে পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। ফলে এ ক্ষেত্রে লাভের চেয়ে ক্ষতির হিসাব গুনতে হয়। জেনারেটর সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী বন্দর তেমাথার আলহাজ্ব ইব্রাহিম আলী জানান, প্রচ- গরম আর বিদ্যুৎ না থাকায় বেচা-কেনা কমে যায়। সন্ধ্যার পর অন্ধকারে খরিদ্দারেও দোকানে আসতে চায় না। তাই টাকার দিকে না তাকিয়ে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎতের সংযোগ নিয়েছেন। এতে বিদ্যুৎ-এর জন্য মাসে অতিরিক্ত ৩শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। পোস্ট অফিস পাড়ার গৃহিণী লিজিনা পারভীন জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে খারাপ লাগে। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে না। বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে গত বছর কষ্ট করে একটি আইপিএস কিনেছেন। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বৈশাখের এ দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় জেনারেটর ও আইপিএসের ব্যবসা জমাজমাটভাবে চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন