সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বর্বরোচিত ও মর্মান্তিক

| প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

গত বুধবার রাতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে একটি বাস থেকে তিন তরুণ ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের স্বজনরা গাবতলী বাস কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে গত শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল এলাকার একটি ব্রিজের নিচে ওই তিন তরুণের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ তাদের আটক করে অজ্ঞাত কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার কার হয়নি। ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রায় ধারাবাহিকভাবেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। পুলিশ বরাবরই এসব ঘটনা অস্বীকার করছে। কারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত তা জানা যায় না বললেই চলে। ফলে সাধারণ মানুষের সন্দেহের তীর পুলিশের দিকেই থেকে যায়। তিন যুবকের তুলে নেয়া এবং তাদের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশ পাওয়ার ঘটনা শধু মর্মান্তিকই নয়, বর্বরোচিত ও হৃদয়বিদারকও বটে। এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক পুলিশের দায়িত্ব তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে খুন, গুম, ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্ছার। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রিপোর্ট করেছে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ দেখছে, প্রায় প্রতিদিনই দেশে গুম, খুন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার ঘটনা চরম আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন এ আতঙ্ক পেয়ে বসেছে, কাকে কখন তুলে নেয়া হবে তা অনিশ্চিত। কিছুদিন আগে ১২ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বজনরা জানতেও পারেনি কারা তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি এবং স্বজনরা তাদের আদালতে হাজির করার আকুতি জানালে পরে পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করে। এমন আরও অনেক ঘটনাই হয়তো আড়ালে থেকে যাচ্ছে। কোনো কোনো সময় অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ হিসেবে কাউকে কাউকে পাওয়া যায়। আমরা দেখেছি, বিগত কয়েক বছরে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষ গুম হয়েছে। তাদের স্বজনরা এখনও তাদের ছবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সরকারের প্রতি তাদের শেষ আকুতি থাকে অন্তত লাশটি যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। আইনের শাসন, সুশাসন রয়েছে-এমন দেশে এ ধরনের ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। আমাদের দেশে গুম, খুন, তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয় না। কারা তুলে নিয়ে যায়, তা অজ্ঞাত থেকে যায় ও কোনো ধরনের প্রতিকার পাওয়া যায় না। এমনকি অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিকেও তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আবার তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে-এ নিয়ে তারা কিছু বলতে পারেনি। কারণ বলতে গেলেই তার জীবনের শঙ্কা থেকে যায়। এদিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশে ফের গণগ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাই এ গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে বেশি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রায় প্রতিদিনই গ্রেফতার হওয়া তার নেতা-কর্মীদের সংখ্যা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করছে। এর সাথে সাম্প্রতিকালে যুক্ত হয়েছে, গায়েবি মামলা, আজগুবি মামলা, ভুতুড়ে আসামি এমনকি মৃত ব্যক্তিও আসামি হচ্ছে। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ভীতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে সন্ত্রাসীরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একদিকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার ঘটনা অন্যদিকে এ সুযোগে সন্ত্রাসীদের অপকর্ম বৃদ্ধি এক শঙ্কাজনক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ তিন তরুণ ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার ঘটনা জনমনে আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক অস্বাভাবিক ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যে তার আলামত দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যখন গুম, খুনের শিকার হয়, তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের কথা স্পষ্ট, এসব গুম, খুন, অপহরণ, তুলে নিয়ে যাওয়ার সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হলেও তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকতে হবে। এমনিতেও যদি কেউ গুম বা নিখোঁজ হয়, তা উদ্ধার করার দায়িত্বও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে। প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়তেই থাকবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণকে এই আতঙ্কজনক পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ রাখতে হবে এবং যে তিনজন তরুণ ব্যবসায়ী খুন হয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত করে এর নেপথ্যে কারা জড়িত খুঁজে বের করে গ্রেফতার করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভীতি আতংক আরো বাড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন