শৈশবে আমরা সবাই গুরুজনদের কাছ থেকে শুনতাম “দাঁতের সাথে আঁতের সম্পর্ক”। দাঁতের যত্নে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে পাঠ্য বইতেও একই কথা লেখা ছিল। আসলে শুধু দাঁত নয় বরং দাঁত ও মুখের সাথে আঁতের সম্পর্ক অর্থাৎ অন্ত্রের একটি যোগসূত্র রয়েছে। আগের আমলের গুরুজনদের অনেক কথাই আমরা পালন করি না যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ প্রধানত দুটি। একটি হলো আলসারেটিভ কোলাইটিস আর অন্যটি হলো ক্রনস্ ডিজিজ। উভয় ক্ষেত্রেই পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এবং মাঝে মাঝে মলের সাথে রক্ত যেতে পারে। আলসারেটিভ কোলাইটিস বৃহদান্ত্রে হয়ে থাকে, যেখানে ক্রনস্ ডিজিজ অন্ত্রের যে কোন স্থানে হতে পারে। ক্রনস্ ডিজিজ বেশী হয় ক্ষুদ্রান্ত্রে। ক্রনস্ ডিজিজে ওরাল মিউকোসা বা মিউকাস মেমব্রেন আক্রান্ত হয়ে থাকে। ক্রনস্ ডিজিজ রোগীদের তিন ভাগের এক ভাগের মুখের স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন আসে। শিশুদের ক্ষেত্রে এ পরিবর্তন আরো বেশি হতে পারে।
ক্রনস্ ডিজিজে নির্দিষ্ট মুখের মিউকোসার পরিবর্তন হলো ওরোফেসিয়াল ক্রনস্ ডিজিজ। ওরোফেসিয়াল ক্রনস্ ডিজিজ হলো ক্রনস্ ডিজিজের একটি নির্দিষ্ট লক্ষণ। শিশুদের ক্ষেত্রে ওরোফেসিয়াল ক্রনস্ ডিজিজ প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বেশি দেখা যায়।
ওরোফেসিয়াল ক্রনস্ ডিজিজের লক্ষণঃ (ক) মিউকোজিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ (খ) মাড়ি ও চিবুকের ভাঁজে আলসার বা ক্ষত। (গ) ঠোঁট ফুলে যাওয়া।
নির্দিষ্ট লক্ষণ ছাড়া ক্রনস্ ডিজিজে মুখের যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলো হলোঃ (ক) অ্যাংগুলার স্টোমাটাইটিস বা ঠোটের কোনায় ঘাঁ। (খ) শতকরা বিশ থেকে ত্রিশ ভাগ ক্রনস্ ডিজিজ রোগীদের অ্যাপথাস আলসার হয়ে থাকে। (গ) বার বার অ্যাবসেস বা ফোঁড়া দেখা দেওয়া। (ঘ) ঠোটের পাশে লাল বর্ণ ধারণ করা। (ঙ) মুখে দুর্গন্ধ পতে পারে।
আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষণ বা মুখের সমস্যা হলো পায়োষ্টোমাটাইটিস ভেজিট্যানস্।
পায়োষ্টোমাটাইটিস ভেজিট্যানস্ একটি প্রদাহজনিত ষ্টোমাটাইটিস যা আলসারেটিভ কোলাইটিস এ দেখা যায়। মুখের সমস্যায় মুখের মিউকাস মেমব্রেন পুরু হয়ে যায় এবং মুখের অভ্যন্তরে ক্ষত দেখা যেতে পারে। মুখের অভ্যন্তরে সকল অংশ এমনকি গলাসহ আক্রান্ত হতে পারে। মিউকাস মেমব্রেন ফুলে যেতে পারে।
নির্দিষ্ট লক্ষণ ছাড়া আলসারেটিভ কোলাইটিস এ মুখের সমস্যাগুলো হলোঃ (ক) জিহবার প্রদাহ (খ) ঠোঁটের প্রদাহ (গ) মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে (ঘ) ছোট এবং বড় অ্যাপথাস আলসার হতে পারে।
অন্ত্রের রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি রোগ হলো সিলিয়াক ডিজিজ। সিলিয়াক ডিজিজ-কে গ্লুটেন সেনসিটিভ এন্টারোপ্যাথিও বলা হয়। সিলিয়াক ডিজিজ প্রায়ই নির্ণিত হয় না বিশেষ করে যখন অন্ত্রের লক্ষণ দৃশ্যমান হয় না। সিলিয়াক ডিজিজ শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের হয়ে থাকে। সিলিয়াক ডিজিজ ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ। ক্ষুদ্রান্ত্রের গ্লুটেন ইনটলারেন্সের সাথে সম্পৃক্ত। গ্লুটেন এক ধরণের প্রোটিন। গ্লুটেন জাতীয় খাদ্যদ্রব্য দ্বারা এলার্জিক রিঅ্যাকশনের কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রের আভ্যন্তরীণ আবরণের প্রদাহ এবং ক্ষয় বা ধ্বংস হয়ে থাকে ধীরে ধীরে।
সিলিয়াক ডিজিজের ক্ষেত্রে দাঁতের এনামেলের ত্রুটি এবং বার বার অ্যাপথাস আলসার দেখা যায়। সিলিয়াক ডিজিজের কারণে ফলিক এসিডের অভাব হতে পারে শোষণজনিত কারণে। ফলিক এসিডের অভাব দেখা দিলে মুখে ঘাঁ হতে পারে। সিলিয়াক ডিজিজের কারণে গম, রাই অথবা বার্লি খেলে মুখে আলসার হতে পারে। গ্লুটেন ইনটলারেন্সের কারণে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। সেক্ষেত্রে অধিকাংশ রুটি জাতীয় খাবার, কেক, পাই, কুকিজ, বিস্কুট, বিয়ার ইত্যাদি খাবার কমিয়ে দিতে হবে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে গ্লুটেনমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
মুখের আলসার বা ঠোঁটের কোন সমস্যায় মুখস্থ ওষুধ খেলেই যে, আপনি ভাল হবেন না তার উপরের আলোচনা থেকেই অনুধাবন করা যায়। শুধুমাত্র খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন এনেই আপনার মুখের আলসার ভাল করা যায়। আপনার লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করেও মুখের আলসারের সমাধান করা যায়। আপনার মানসিক চাপ ওষুধ ছাড়া বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে কমিয়ে আনা সম্ভব যার মাধ্যমে মুখের ঘাঁ বা আলসার এর চিকিৎসা সম্পৃক্ত। অতএব দাঁত ও মুখের সঠিক পরিচর্যা করতে হতে এবং যে কোন সমস্যায় অভিজ্ঞ একজন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন