শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পবিত্র আশুরা সংখ্যা

ঐতিহাসিক আশুরা : গুরুত্ব ও শিক্ষা

মাওলানা এ এইচ এম আবুল কালাম আযাদ | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

আশুরা আরবি শব্দ। এর অর্থ দশম দিন। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের দশম দিনের গুরুত্ব মুসলমানদের নিকটে অন্যান্য মাস থেকে আলাদা। মহররম মাসের দশ তারিখ আশুরা নামে পরিচিত। ইসলাম ধর্মে ১০ মহররম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও বরকতময় একটি দিন। পবিত্র মাহে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে এই উম্মতের ওপর এদিনের রোজা ছিল ফরজ। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এই রোজা নফলে পরিণত হয়। ইসলামে এমন কিছু পর্ব বা দিবস আছে যেগুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্ধারণ করেছেন ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল করার জন্য। এমনি একটা দিবসের নাম আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখ। মুসলিম উম্মাহর দ্বারে এ দিবসটি কড়া নাড়ে প্রতি বছর।
মুহাররম মাসের গুরুত্ব: ইসলামে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নিষিদ্ধ ও পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন নিশ্চই মাসসমূহের সংখ্যা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন। সূতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলুম করো না। (সূরা আত-তাওবাহ ৩৬)। মুহাররম মাস সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, এক বৎসরে বার মাস, তন্মধ্যে নিষিদ্ধ হলো চারটি। তিনটি পর্যায়ে ক্রমিক যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুহাররম। আর অন্যটি হল ‘মুদার’ গোত্রের রজব মাস, যার অবস্থান জুমাদা ও শা’বান মাসের মাঝখানে। ( সহীহ বুখারী) কুরআন এবং হাদীস থেকে প্রতিয়মান হলো মুহাররম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। কারণ এ মাসের দশ তারিখে (আশুরা) বনী ইসরাঈল তথা মুসলিম জাতির বিজয় হয়েছে।
আশুরা মুসলিম জাতির বিজয়ের দিন: বহুদিন যাবত আল্লাহর নবী মুসা আ. ও তার অনুসারী ঈমানদারদের উপর ফেরাউন ও তার বাহিনীর নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছিল। আশুরার এই দিনে নির্যাতন ও নিপীরনের হাত থেকে মুসা আ. ও তার অনুসারীগণ মুক্তি পেয়েছিলেন। সাথে সাথে ফেরাউন ও তার বাহিনীর পরাজয় হয়েছিল। এজন্য এ দিনটি মুসলিম জাতির একটি বিজয়ের দিন। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘আর বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও সীমালঙ্গনকারী হয়ে তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, ‘আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত। এখন অথচ ইতঃপূর্বে তুমি নাফরমানী করেছ, আর তুমি ছিলে ফাসাদকারীদের অন্তর্ভূক্ত। সূতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নির্দশন হয়ে থাক। আর নিশ্চই অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল।’ ( সূরা ইউনুস:৯০-৯২)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন ‘আর যখন তোমাদের জন্য আমি সমুদ্রকে বিভক্ত করেছিলাম, অতঃপর তোমাদেরকে নাজাত দিয়েছিলাম এবং ফেরাউনের দলকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, আর তোমরা দেখছিলে।’ (সূরা আল বাকারা: ৫০)
আশুরার দিনটি শুকরিয়া আদায়ের দিন: আশুরার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে এ দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা তার নবী মুসা আ. ও তার অনুসারী ঈমানদারদের ফেরাউনের জুলুম থেকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে তার বাহিনীসহ ডুবিয়ে মেরেছেন। হাদীসে এসেছে- সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. যখন মদীনায় আগমন করলেন তিনি আশুরার দিনে ইহুদীদের সওম পালন করতে দেখলেন। যেমন হাদীসে এসেছে “ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ স. মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে সওম পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন “এটা কোন দিন যে তোমরা সওম পালন করছ? তারা বললঃ এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুসা আ. ও তার স¤প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুসা আ. শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে সওম পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও সওম পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ স. বললেনঃ “তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা আ. এর অধিকতর ঘনি’ ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ স. সওম পালন করলেন ও অন্যদেরকে সওম পালনের নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। আর শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হলো সওম পালন করা। সেজন্য আল্লাহর নবী নূহ আ. এর জাহাজ জুদি পাহাড়ে স্থির হওয়ায় সওম পালন করার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করেছিলেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, ‘এ দিনেই (আশুরায়) নূহ আ. এর কিস্তি জুদি পাহাড়ে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আ. শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে সে দিন সিয়াম পালন করেছিলেন।’ (মুসনাদে আহমদ, ফাতহুল বারী)। শুকরিয়া আদায়ের বিষয়ে কুরআনে কারীমে এসেছে ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চই আমার আযাব বড়ই কঠিন।’ (সূরা ইব্রাহিম:০৭) আল্লাহ তায়ালা হযরত দাউদ আ. এর পরিবারকে শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ দিয়ে বলেন ‘হে দাউদ পরিবার! শুকরিয়া হিসেবে তোমরা নেক আমল করতে থাক। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই শুকরিয়া আদায়কারী রয়েছে।’ (সূরা সাবা: ১৩)
আশুরার সওমের গুরুত্ব ও ফজিলত: আশুরার সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট খুবই প্রিয়। তাই তিনি এ দিনে সওম পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। যেমন হাদীসে এসেছে, “আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন। রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম সওম হল আল্লাহ তায়ালার প্রিয় মাস মুহাররম মাসের সওম এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত।” (সহীহ মুসলিম)। এ দিনে সওম পালনের ফজিলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. কে আশুরার সওম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তিনি বললেনঃ “ বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গৃহীত হয়।” (সহীহ মুসলিম ও তিরমিজি) অন্য বর্ণনায় এসেছে” আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, আশুরার দিনের সওমকে আল্লাহ তায়ালা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।” (সহীহ মুসলিম) হাদীসে আরো এসেছে “যে আশুরার সওম পালন করবে আল্লাহ তার এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।” (মুসনাদুল বাযযার)। ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন, “এ হাদীসের ব্যাখ্যা হল- যে সওম পালনকারীর গুনাহ রয়েছে তার গুনাহের কাফফারা হবে আর যার গুনাহ নেই আশুরার সওম তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।” (ফাযায়েলুল আওকাত: বায়হাকী) মোট কথা আশুরার দিনের সওম হল এক বছরের সওমতুল্য। রাসূলে কারীম স. এ সওমকে অত্যন্ত বেশি গুরুত্ব দিয়ে পালন করতেন। রাসূলুল্লাহ স. যখন মদীনাতে আগমন করলেন তিনি ইহুদীদের সওম পালন করতে দেখলেন তখন তিনি সওম পালন করলেন অন্যদের সওম পালন করতে নির্দেশ দিলেন। এমনকি যারা আশুরার দিনে আহার করেছিলেন তাদের দিনের বাকী সময়টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিলেন। আর এটা ছিল হিজরতের দ্বিতীয় বছরে। কেননা তিনি হিজরতের প্রথম বছর মুহাররম মাস শেষ হওয়ার একমাস পর অর্থাৎ রবিউল আউয়াল মাসে মদীনাতে আগমন করেছিলেন।‘আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশুরার সওম পালন করত এবং রাসূলুল্লাহও স. সওম পালন করতেন। যখন তিনি মদীনায় হিজরত করলেন তখন তিনি এ সওম পালন করলেন ও অন্যদের পালন করতে আদেশ দিলেন। যখন রমজান মাসের সওম ফরজ হল তখন তিনি আশুরার সওম সম্পর্কে বললেনঃ “যার ইচ্ছা আশুরার সওম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা ছেড়ে দিবে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
‘মহিলা সাহাবী রবী বিনতে মুয়াওয়াজ রা. থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ স. আশুরার দিনে ভোরে মদীনার নিকটবর্তী আনসারদের মহল্লায় খবর পাঠালেন যে, তোমাদের মধ্যে যে সওম শুরু করেছে সে যেন তা পূর্ণ করে। আর যে সওম শুরু না করে খাওয়া-দাওয়া করেছে সে যেন দিনের বাকী সময়টা পানাহার থেকে বিরত থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শোনার পর আমরা সওম পালন করলাম এবং আল্লাহর ইচ্ছায় ছোট ছেলে-মেয়েদের দিয়ে সওম পালন করালাম। আমরা তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম। বাজার থেকে খেলনা কিনে নিতাম। যখন খাবার চাইত তখন হাতে খেলনা তুলে দিতাম, যেন তারা খাবারের কথা ভুলে গিয়ে সওম পূর্ণ করতে পারে।’ (সহীহ মুসলিম) উপরোক্ত হাদীস দুটি দ্বারা বুঝে আসে আশুরার সওম তখন ওয়াজিব ছিল।
তাই সর্বসম্মত কথা হল আশুরার সওম প্রথমে ফরজ ছিল, এখন তা ফরজ নয়, সুন্নাত। ইবনে আব্দুল বারর রহ. বলেছেন, আশুরার সওম মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে উম্মাতের ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এটা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। যেমন হাদীসে এসেছে- ইবনে আব্বাস রা. বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ স. কে এ সওম ছাড়া অন্য কোন সওমকে এত বেশি গুরুত্ব দিতে দেখিনি। আর তা হল আশুরার সওম ও এই রমজান মাসের সওম।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। ইবনে আব্বাস রা. আরো বলেন, যারা বলে যে, আশুরার সওম তেমন গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব নয়, সাধারণ মুস্তাহাব। তাদের এ কথা ঠিক নয়। আসল কথা হল এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব আমল। তাইতো আমরা দেখতে পাই আল্লাহর রাসূল স. প্রত্যেক আশুরাতে সওম পালন করতেন। এমনকি ইন্তেকালের বছরও তিনি বলেছিলেনঃ ‘যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই আগামী বছর মুহাররম মাসের নবম ও দশম তারিখে সওম পালন করব এবং এ সওম পালন দ্বারা এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (সহীহ মুসলিম)। এ সকল হাদীস দ্বারা আশুরার সওমের গুরুত্ব উপলদ্ধি করা যায়।
আশুরার সওমের ব্যাপারে ইহুদীদের বিরোধীতা করার নির্দেশ: যে সকল বিষয়ে কোন শরয়ী হুকুম অবতীর্ণ হয়নি মদীনায় আসার পর সে সকল বিষয়ে নবী কারীম স. ইহুদীদের অনুরূপ আমল করা পছন্দ করতেন। যেমন তিনি মসজিদুল আকসাকে কিবলা হিসেবে গ্রহণ করলেন। উদ্দেশ্য ছিল ইহুদীরা যেন ইসলামকে নিজেদের ধর্মের মতই মনে করে, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। পরে যখন সত্য ধর্ম ইসলাম গ্রহণের পরিবর্তে ইহুদীদের অবাধ্যতা, হিংসা, কপটতা, বিশ্বাসঘাতকতা,বর্ণবাদী নীতি ও চরম সা¤প্রদায়িকতা প্রকাশ পেল তখন সকল ব্যাপারে তাদের বিরোধীতা করার নির্দেশ দেয়া হল এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ব্যাপারে তাদের সাথে সাদৃশ্যতাপূর্ণ সকল আমল ও আচরণ করতে নিষেধ করা হল। তাই রাসূলুল্লাহ স. সংকল্প করলেন আশুরার দিনে তিনি ইহুদীদের মত আর একটি করে সওম পালন করবেন না। বরং এ সওমের সাথে মুহাররম মাসের নবম অথবা একাদশ তারিখে একটি সওম বাড়িয়ে রাখার মাধ্যমে ইহুদীদের ধর্ম ও সাংস্কৃতির বিরোধীতা করবেন। এর প্রমাণ হিসেবে বহু হাদীস এসেছে। যেমন- ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ স. আশুরার সওম পালন করলেন ও অন্যকে পালন করার নির্দেশ দিলেন তখন সাহাবায়ে কেরাম রা. বললেনঃ “এটা তো এমন এক দিন যাকে ইহুদী ও খৃষ্টানরা সম্মান করে থাকে।” তখন রাসূলুল্লাহ স. বললেন, আগামী বছর আসলে ইনশাআল্লাহ আমরা নবম তারিখে সওম পালন করব। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, পরবর্তী বছর আসার পূর্বেই রাসূলে কারীম স. ইন্তেকাল করলেন।” (সহীহ মুসলিম)। এ হাদীস থেকে এ কথা বুঝে নেয়ার অবকাশ নেই যে, রাসূলুল্লাহ স. আশুরার সওমটা মুহাররম মাসের দশ তারিখের পরিবর্তে নবম তারিখে পালনের সংকল্প করেছিলেন। বরং তিনি সংকল্প করেছিলেন নবম ও দশম দু দিন সওম পালন করার। কেননা আশুরা হল দশম তারিখ। সেদিন বাদ দিয়ে সওম পালন করলে তা আশুরার সওম বলে গণ্য হয় কিভাবে? হাদীসে এসেছে রাসুলুল্লাহ স. আশুরার সওম পালন করতে বলেছেন দশম তারিখে”
আশুরার সওম পালনের নিয়ম: ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন তোমরা আশুরা দিবসে সওম পালন কর ও এ ক্ষেত্রে ইহুদীদের বিরোধীতা কর। তাই তোমরা আশুরার একদিন পূর্বে অথবা একদিন পরে সওম পালন করবে। (মুসনাদে আহমদ) আশুরার সওম পালন সম্পর্কিত হাদীসসমূহ একত্র করলে আশুরার সওম পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে কয়েকটি সিদ্ধান্তে আসা যায় আর তাহলো: (১) রাসূলুল্লাহ স. আশুরার দিনে সওম পালন করতে বলেছেন। তাই আশুরার দিনকে বাদ দিয়ে সওম পালন করলে তা আশুরার সওম হবে না। (২) আশুরার সওম পালনের ক্ষেত্রে ইহুদীদের বিরোধীতা করতে হবে। তাই ইহুদীদের মত দশম তারিখে একটি মাত্র সওম পালন করা যাবে না। (৩) আশুরার একদিন পূর্বে সওম পালন করতে হবে। (৪) যদি আশুরার পূর্বের দিন সওম পালন করা কোন কারণে সম্ভব না হয় তাহলে আশুরা ও তার পরের দিন সওম পালন করতে হবে।
উপসংহার: মুহাররম মাস আমাদের স্বরণ করিয়ে দেয় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ স. এর হিজরত ও তার দাওয়াতী জিন্দেগী শুরু ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা। এ মাসে রয়েছে এমন একটি দিন, দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে যে দিনে নবী মুসা আ. এর বিজয় হয়েছিল। পতন হয়েছিল তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী জালেম সম্রাট ফেরাউন ও তার সম্রাজ্যের। সে দিনটিই হল আশুরা; মুহাররম মাসের দশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন আমাদেরকে এই পবিত্র দিনে সকল প্রকার অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার ও বিদয়াত উপেক্ষা করে ইবাদত বন্দেগী করে তার সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করেন। আমীন।।
লেখক: প্রবন্ধকার ও মোফাসসিরে কোরআন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন