কয়েক বছরের মন্দা কাটাতে জেলায় সমন্বিত পদ্ধতিতে হলুদ চাষে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন হলুদ চাষিরা। হলুদের ক্ষেতে, কচু, ওল, কাকরোল, ঝাল, কচুরমুখি, পুঁইশাকসহ ক্ষেতের বেড়ায় বিভিন্ন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। এতে হলুদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা চাষিদের। বিগত কয়েক বছরে জেলায় পানের বরজের সংখ্যা বৃদ্ধি, জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পানিবদ্ধতা, কৃষি জমি হ্রাস, দেশের অভ্যন্তরে হলুদের দাম ও চাহিদা কমায় জেলাতে হলুদ চাষ হ্রাস পায়। এতে জেলায় হলুদ উৎপাদন ৪০ ভাগ কমে যায়।
প্রযুক্তির উন্নয়ন ও হলুদের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে এ বছর জেলায় হলুদের আবাদ কিছুটা বেড়েছে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ৬৪৫ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তালা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৩২০ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ হবে। এর পরই রয়েছে কালিগঞ্জের অবস্থান। এ উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলার মধ্যে সদরে ৯০ হেক্টর, কলারোয়ায় ৫৫, দেবহাটায় ১০, আশাশুনিতে ১৫ ও শ্যামনগরে ১০ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ হয়েছে।
২০১৮-১৯ মৌসুমে জেলায় হলুদ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আট হাজার টন। এর মধ্যে তালা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৩৮০ টন হলুদ উৎপাদন হতে পারে। বাকি উপজেলাগুলোর মধ্যে সদরে এক হাজার ৪০ টন, কলারোয়ায় ৯১০, দেবহাটায় ৭৮, কালীগঞ্জে এক হাজার ১০৫, আশাশুনিতে ১৩০ ও শ্যামনগরে ৪৪২ টন হলুদ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় ১০ থেকে সাড়ে ১০ হাজার টন হলুদ উৎপাদন হয়েছিল। জেলার তালা উপজেলার খলিষখালী গ্রামের সৈয়দ আলী শেখ জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি হলুদ আবাদ করে আসছেন। তবে কয়েক বছর ধরে পণ্যটির আবাদ কমিয়ে ফেলেছেন। জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর উৎপাদন হয় না। কয়েক জন চাষি জানান, সমন্বিত চাষের মাধ্যমে একই জমিতে হলুদের সাথে কয়েক ধরনের সবজির চাষ করা যায়। ফলে তদারকিসহ হলুদ চাষে খরচ অনেক কম।
সরেজমিন দেখা যায়, চাষিরা হলুদের সাথে একই জমিতে ঝাল গাছ, বেগুন চাষ, মেটে আলু, ওলের চাকি চাষ করছেন। দেখা যায়, হলুদের সাথে সাথে একই সাথে এ সকল ফসল অতিদ্রুত ফলানো যায়। এতে ঐ কৃষকের নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এ বছর শুকনো হলুদের দাম বেশি থাকায় হলুদ বিক্রিতে মোটামুটি গতবারের থেকে বাজার পাবেন বলে আশা করছেন চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, জেলায় হলুদের আবাদ বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হলুদ বেশ লাভজনক ফসল। সাতক্ষীরায় প্রতি হেক্টরে ১৫-১৬ টন পর্যন্ত হলুদ উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু উপক‚লীয় জেলা হওয়ার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে এখানকার আবাদি জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে দেখা দিচ্ছে পানিবদ্ধতা। এ দুই কারণে জেলার কৃষকরা হলুদ আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তবে আমরা অধিদফতরের পক্ষ থেকে কৃষকদের হলুদ আবাদের ক্ষেত্রে সবসময় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। যার ফলে এ বছর আবাদ বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন