বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আদর্শগ্রামবাসীর মানবেতর জীবন যাপন

গাবতলী (বগুড়া) থেকে আল আমিন মন্ডল | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

বগুড়ার গাবতলী কাগইলের আমলীচুকাই আদর্শগ্রামে ৬০ পরিবার বসবাস করলেও এখন শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।

জানা যায়, আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম প্রকল্প উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই এখানে যেন সমস্যার অন্ত নেই। পুকুরপাড় ভাঙন ও ঘর-রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় প্রতিদিন তাদের দুশ্চিন্তাই দিন কাটাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো স্কুল। নামাজ পড়ার মসজিদ ও দাফনের জন্য নেই কোনো কবর স্থান। পুকুরে মাছ চাষ করে ভূমিহীন পরিবারগুলো আর্থিক ভাবে উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়াও তারা ক্ষুদ্র ও কুটির হস্তশিল্পের কাজ সেলাই, দিনমজুরি ও ভ্যান-রিক্সা চালিয়ে পরিবারের মুখে জুটাচ্ছেন ডাল ভাত। তবুও তাদের পাশে যেন কেউ নেই। আদর্শগ্রামবাসী চায় পুকুরপাড় ও ঘর-রাস্তা সংস্কার, শিশুদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা’সহ নাগরিক অধিকার। অসহায় আমলীচুকাই আদর্শগ্রামবাসী দাবি অতিদ্রুত পুকুরপাড় ভাঙ্গন রোধ ও রাস্তা সংস্কার। এমনকি পুকুরপাড় ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এখন নির্মানধীন ঘর-দরজা পুকুরগর্ভে বিলিন হতে যেতে বসেছে। এছাড়াও আদর্শগ্রামে টিবওয়েল অকেজো হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট, মসজিদ, কবর স্থান, বিদ্যালয়, ক্লিনিং, ঠিকাদান কেন্দ্র, সীমানা নির্ধারণ, পুকুরঘাট, পাঠাগার ও বিনোদন কেন্দ্র নেই। সরকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্যানেটারি ল্যাট্রিন, গভীর নলকুপ স্থাপন করা হলে আজও তা অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। উঠছে না নলক‚প দিয়ে পানি। সংস্কার কাজ না করায় দুটি ব্যাকে ৬০টি পরিবারের ঘর-দরজা ও খুটির এখন বেহাল দশা। বসবাসে অনুপযোগী হওয়ায় অনেকে আদর্শগ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাঁধ্য হয়েছেন। ঘরের টিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পড়ছে। গভীর নলকূলগুলো বিকল ও টয়লেটগুলো ভেঙ্গে গেছে। অফিস (ক্লিনিক) ঘর থাকলেও চলছে না কোন কার্যক্রম। কারন এ ক্লিনিং বা অফিস পাকা ঘরের দেয়াল ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অর্থের অভাবে এ ঘরের কোন মেরামত নেই। স্কুল না থাকায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। মসজিদ না থাকায় ২৫জন বৃদ্ধের নামাজ পড়া’সহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আদর্শগ্রামে ১৫বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুরা থাকলে আজও পাইনি তারা কোন ভাতা কার্ডের সুবিধা। সবকিছু মিলে মনে হয় এ যেন অসহায় মানুষের এক দুর্বিষহ জীবনযাপন। আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম সমবায় সমিতি লিঃ সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, সরকারের সু-দৃষ্টি না থাকায় আমাদের কে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দিন মজুরী কাজ করে দিনযাপন করছি। সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম জানান, স্কুল না থাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে না। ফলে অসময়ে ঝড়ে পড়ছে অনেক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী। পুকুরপাড় ভাঙ্গনের ফলে প্রতিদিন আতর্ঙ্কিত ভাবে আমরা দিন পার করছি এই বুঝি ঘর-দরজা পুকুরের পানিতে ডুবে যায়। আদর্শগ্রামে বসবাসরত উজ্জল, বজলার ও লতিফ জানান, এখানে কবর স্থান না থাকায় আদর্শগ্রামের মরিয়মের কন্যা শিশুকে অন্যত্রে দাফন সম্পূর্ণ করতে হয়েছে।

এ সকল সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আদর্শগ্রাম বাসী। এ ছাড়াও আদর্শগ্রামের আশপাশে সরকারী খাস জমিগুলো ভূমিহীনদের উন্নয়নে বরাদ্দ পাওয়া বিষয়েও জোর দাবি জানান তারা। এ বিষয়ে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, এ সকল সমস্যা’র জন্য কোন লিখিত আবেদন পাইনি। তবে আবেদন পেলে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাগইল ইউপি চেয়ারম্যান আগানিহাল বিন জলিল তপন জানান, আমলীচুকাই আদর্শগ্রামে বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ। তবে সকল সমস্যা’র বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবগত করেছি। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন সিরাজী জানান, আমাদের সমবায় অধিদপ্তর থেকে আদর্শগ্রাম বাসীর কল্যাণে নানা কর্মসূচী গ্রহন করা হচ্ছে। উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় আমলীচুকাই আদর্শগ্রামের নানা সমস্যা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আশাকরছি ইউএনও মহোদয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন