এক সময়ের অখ্যাত ও জনমানবশূন্য ঠেঙ্গারচর এখন ভাসানচর নামে দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচিত। সাগরের জেলেরা সাময়িক বিশ্রামের জন্য চরটি বেছে নিত। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে হাতেগোনা কিছু মেষ পালকের বিচরণ ছাড়া সাধারণ মানুষ চরটি সম্পর্কে কিছুই জানত না। অবশেষে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঠিকানা হতে যাচ্ছে সেই ভাসানচর-ই।
অবকাঠামো নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে। প্রায় দুইশত বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই চরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নির্মিত হচ্ছে ৪ তলা বিশিষ্ট ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার। ভূমি থেকে ৪ ফুট বাসস্থান ও ১৪৪০টি টিনশেড পাকাঘর। প্রতিটি শেডে থাকছে ১৮টি কক্ষ। পাকা টিনশেডের দুই পাশে রয়েছে পাকঘর ও বাথরুম। চার সদস্য বিশিষ্ট প্রতিটি পরিবারকে দেয়া হবে একটি কক্ষ। প্রতি কক্ষে থাকছে দোতলা বিশিষ্ট ২টি বেড। ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ সড়ক, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, লাইন হাউজ, হেলিপ্যাড, চ্যানেল মার্কিং, রাডার স্টেশন, বোট ল্যান্ডিং সাইটসহ প্রকল্পের ৮০ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সমাপ্তির পথে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ । লক্ষ্য একটাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে স্থানান্তর করে এখানে নিয়ে আসা। সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থী পুনর্বাসনে হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরকে নির্বাচন করে।
জানা গেছে, গত ৯ মাস যাবত প্রতিদিন ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে এখানে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করা হবে। অক্টোবরের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পুনর্বাসন কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তার আগেই প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা আবাসন সঙ্কট নিরসনে আশ্রায়ন প্রকল্প ৩ এর আওতায় সরকার ২৩১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কক্সবাজারে স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়লেও ভাসানচর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হবার সবাদে রোহিঙ্গারা কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর তত্বাবধানে এই প্রকল্পের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস ইনকিলাবকে জানান, ভাসানচরে ১ লাখ নয় বরং ১০ লাখ রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত ভূমি রয়েছে। আশাপাশে নতুন করে ভূমি জাগছে। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন এবং জাহাইজ্যার চরকে স্বর্ণদ্বীপে রুপান্তরে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন সেটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। তিনি আরো বলেন, মেঘনার বুকে জেগে ওঠা অপার সম্ভাবনাময় বিশাল আয়তনের চরাঞ্চলকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন