বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী শূন্যরেখায় আবারো রোহিঙ্গারা শেড নির্মাণ করছে

উখিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৮ এএম

মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী দ্বারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখা আশ্রয় নিয়েছিলেন ৪ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। পাঁচ বছর ধরে সেখানেই বসবাস করে আসছিলেন তারা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দুটি বিবদমান রোহিঙ্গা বাহিনীর গোলাগুলি ও আশ্রয় শিবিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শেষ আশ্রয় হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা। অনেকেই সবকিছু হারিয়ে শূন্যরেখার কাছাকাছি তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এর আশপাশে ঠাঁই নিয়েছে। এর সংখ্যা আনুমানিক কয়েক’শ রোহিঙ্গা পরিবারের হাজার অধিক রোহিঙ্গা।

অতর্কিত অবস্থায় শেডে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাগন কোন কিছু বুঝে উঠার পুর্বেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তাই খোলা আকাশের নিচে এই প্রচন্ড শীতে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা।

খাবার, শীতবস্ত্র, ঔষধ পথ্য, জীবন ধারনের ন্যুনতম মৌলিক উপকরণ বা অনুসংগ থেকে বঞ্চিত হয়ে সে সকল রোহিঙ্গা অত্যন্ত কায়ক্লেশে জীবন যাপন করছে।

অনেকেই আবার শুন্য রেখায় বাঁশ, কাঠ, ত্রিপল দিয়ে কোন প্রকার মাথা গুজাবার ঠাঁই সৃষ্টি করে বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশুদের নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা শুন্য রেখায় আবারো বসতি স্থাপন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ বছর সময়ের অধিককাল তারা বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী শুণ্যরেখায় অবস্থান করে আসছিল। হঠাৎ করে তাদের জীবনের ছন্দপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

আর অন্যদিকে গত শুক্রবারও সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে বলেও জানান শুণ্যরেখায় অবস্থানকারী স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা।

শূন্যরেখা শিবিরে আগুনে শেড হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে তুমব্রু বাজারে আশ্রয় খুঁজতে আসা জনৈক সৈয়দ হামজা নামেক এক রোহিঙ্গা বলেন- ( বার্মা ও বাংগলাদেশর মাজে আর বিবি বাচ্চা, ৫ জন লইয়েনে আছিলাম। আরার ঘর ভাড়ি অইন দিয়েনে পোড়াই দিয়ে বাজি। দুওয়া পাটি হইজ্জ্যা গইচ্ছে, আরা হন পক্ষর নই বাজি। বিজ্ঞিন পুড়ি ছাই হই গিয়ই, গার হরগান লইয়েনে হো প্রহার ধাই আসচি আর বিবির অসুখ, পরিবার লইয়েনে হোন প্রহার আশ্রয় খুজমেদ্দে এর আগে রক হিন্দু ভাইয়র গরত ঠাই লইয়ি) অর্থাৎ
‘ বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যবর্তী শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারীদের মধ্যে আমিও আমার পরিবারের আরো ৫ সদস্য ছিলাম। রোহিঙ্গা দুটি পক্ষের বিবাদ হয়, আমরা কোন পক্ষের না হলেও আগুন দিয়ে আমাদের ঘরবাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা নিরীহ মানুষ, কোনও পক্ষের না। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, গায়ের পরনের জামা ছাড়া কিছু বের করতে পারেনি। আমার স্ত্রীও অসুস্থ, পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিতে একটি জায়গা খুঁজছি। এর আগের দিন স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের কাছে একদিন আশ্রয় নিয়েছিলাম।’

অন্য ভুক্তভোগী আবুল শামা বলেন, (বুধ বারর ঘটনার পর আরা মিয়ান্মারত গলি গই, মিয়ান্মার বাইনি আরারে গইলতে ন দে। ইতারা আবার আরারে বাংলাদেশত পাড়াই দিয়ে। এহন আরা হড়ে যাইয়ম বাজি? এড়ে হাবার নাই, থাইবার জাইগা নাই, পায়খানা গরিত ন পারির, বিবি, বাচ্চা লইয়েনা সমাস্যাত আছি।)' অর্থাৎ বুধবারের ঘটনার পরে আমরা
মিয়ানমারের অংশে প্রবেশ করি। এক রাত থাকার পর আবার বার্মা (মিয়ানমার) থেকে এপারে পার করে দিয়েছে সেই দেশের বাহিনী। এখন আমরা কোথায় যাবো? এখানে থাকার ব্যবস্থা নেই, নেই খাবার ও টয়লেটও। এতে নারী-শিশুদের নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তার আশপাশে কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে শুনেছি। রোহিঙ্গারা যাতে করে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য একাধিক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। তবে কতজন রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। সীমান্তের সবাই সর্তক অবস্থানে রয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত আছে।’

প্রসঙ্গতঃ তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার অংশে, গত বছর সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে-সে দেশের সেনাবাহিনী এবং স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী আরসা( আরাকান আর্মি)'র মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষ চলে। ওই সংঘর্ষের সময় মিয়ানমার অংশ থেকে মর্টার শেল তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়ে। তআদের অভ্যন্তরীণ বিবাদে শুণ্য রেখায় কয়েকজন রোহিঙ্গা হতাহতের ঘটনাও ঘটে। সেসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কয়েক দফা প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টারশেল পড়ায় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়। তারা জানায়, ভুলবশত মর্টারশেল বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়েছিল। আবার মাস চারেক পুর্বে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের এক ডিজিএফআই কর্মকর্তা খুন হবার ঘটনাও ঘটে কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এখনও প্রতিকুলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন