শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কৃষক

শ্যামনগরে এগ্রো টেকনোলজি পার্ক

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে
শ্যামনগর এগ্রো টেকনোলজি পার্ক। ফলজ, বনজ ও ঔষধিসহ শতাধিক উদ্ভিদ বৈচিত্র্য নিয়ে সম্প্রতি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে পার্কটি। পার্কে প্রদর্শিত দেয়ালে সবজি চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট সার, কুইক কম্পোস্ট সার, আবর্জনা-খামারজাত সার এবং সবুজ সার তৈরি পদ্ধতি, মাশরুম চাষ, মৌমাছি পালন ও ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার পদ্ধতি। যা উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে। ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়াই জৈব পদ্ধতিতে গড়ে তোলা এই এগ্রো টেকনোলজি পার্ক মন কাড়ছে সবার। পার্ক পরিদর্শন করে কৃষকরা যেমন জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন, তেমনি ঔষধি লতাপাতা ও তার ব্যবহার জেনেও লাভবান হচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। নয়নতারা, কালকেউটে, কচুমুখী, পাথরকুচি, মিছরিপাতা, মুক্তঝুড়ি, তুলসী, হাতিশুড়, বেতশাক, পাহাড়ি ধনে, কাটানটে, আমরুল শাক, তুলোটেপারি, হেলাঞ্চ, আদাবরুন, থানকুনি, মনিরাজ, ধুতরা কালে, ভেন্না, বাউল জেলী, কালমেঘ, লজ্জাবতী, বনমূলা, পাশাফুল, অনন্তমূল, শীষ আকন্দ, লাল কেউটে, রক্ত কবরী, শ্বেত আকন্দ, নীল অপরাজিতা, শতমূল, শীউলী, হাড়ভাঙ্গা, নিমুখো, বামন আটি, খুদকুড়ি- এমন সব ঔষধি উদ্ভিদ নিয়ে সাজানো হয়েছে পার্কটি। পার্কটি পরিদর্শন করলে জানা যাবে- ব্রাহ্মি শাক ব্রেইনের জন্য উপকারী। তেলাকচু ডায়াবেটিসের জন্য মহৌষধ। কচুর পাতা চোখের জন্য ভালো। আমাশয়ে ভরসা থানকুনি, এমন নানা তথ্য। দেখতে পাবে ক্ষতিকর পোকা দমনে অত্যন্ত কার্যকরী ফেরোমন ফাঁদসহ নানা প্রযুক্তির ব্যবহার। শুধু তাই নয়, এখানে রয়েছে- বাদাম, কালজিরা, বাটিশাক, রসুন, বরবটি, বেগুন, টমেটো, পেপে, আম, গীমা কলমি, অড়হড়, শসা, তিল, মুগ, উচ্ছে, পুইশাক, লাউ, কুমড়া, মিষ্টি আলু, ড্রাগন ফল, পেয়ারা, ওল, মুখি কচু, মুগ, পাট, আখ, ক্যাপসিকাম, ছোলা, স্ট্রবেরি, ছিম, মরিচ, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল, ঢেড়স, ভুট্টা, ডাটাশাক, যব, গম ও ধানের প্রদর্শনী ক্ষেতও। যার সবটাই জৈব পদ্ধতিতে চাষকৃত। পার্কে বেড়াতে এসে কলেজ শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন মিলন বলেন, অনেক ধরনের পার্ক দেখেছি। কিন্তু ফলজ, বনজ ও ঔষধি উদ্ভিদের এমন পার্ক কোথাও চোখে পড়েনি। আশার কথা, এখানকার সবকিছুই বিষমুক্ত। আরেকজন কলেজ শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, পার্কটি কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হতে পারে। তাহলে তারা জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। গবেষক শাহীন ইসলাম বলেন, খাদ্যকে নিরাপদ করতে জৈব বালাইনাশক প্রযুক্তি সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য শ্যামনগর এগ্রো টেকনোলজি পার্ক কৃষকদের কাছে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। একই সাথে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওষুধ ভা-ার সম্পর্কেও মানুষ জানতে পারবে। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষিবিদ আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এবং ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এগ্রো টেকনোলজি পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে পার্কটি অনুসরণীয় হতে পারে। একই সাথে ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি প্রসারে এগ্রো টেকনোলজি পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন