মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভারতীয় নেতার উস্কানিমূলক বক্তব্য

| প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর মুসলমানদের নির্যাতন, ধর্মান্তরকরণ ও মন্দির ধ্বংসের কাল্পনিক অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আবারো উস্কানীমূলক ও চরম ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য এসেছে। ভারতের বিজেপি নেতারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়েই চলেছেন। তাদের অপ্রাসঙ্গিক, অরুচিকর ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্যে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও তীব্র ক্ষোভ দেখা গেলেও দেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর নীরবতা বিস্ময়কর। গত রবিবার ত্রিপুরা রাজ্যে এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে ভারতের বিজেপির সিনিয়র নেতা ও রাজ্যসভার এমপি সুব্রামনিয়াম স্বামী সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন, ধর্মান্তরকরণ ও মন্দির ধ্বংসের মিথ্যা অভিযোগ তোলেন। তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে দিয়ে হিন্দুদের উপর সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ‘পাগলামি’ বন্ধ না হলে বাংলাদেশ দখল করে এখানে দিল্লীর শাসন প্রতিষ্ঠার হুমকি দিয়েছেন। ইতপূর্বে বিভিন্ন সময়ে সুব্রামনিয়াম স্বামী অবান্তর অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তথাকথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশের ভ‚মি দখলের মত হুমকিও তিনি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের তরফ থেকে সে সব বক্তব্যের উপযুক্ত প্রতিবাদ না হওয়ার কারণেই এমন ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য দেয়া অব্যাহত রেখেছে বিজেপি নেতারা।
বিজেপীর কেন্দ্রীয় নেতা অমিত শাহ থেকে শুরু করে কলকাতা-আসামের পাতি নেতারাও সমানতালে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্যের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। যেখানে ভারতে বিজেপি সরকারের আমলে মুসলমানদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন সাতচল্লিশোত্তর ভারতে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত জুলাইয়ের শেষদিকে একটি অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যা, শুধুমাত্র গো-মাংস খাওয়া, গরু পালন ও গরু বিক্রির অভিযোগে মাত্র কয়েকমাসে অন্তত ৪৫জন মুসলমানকে প্রকাশ্য পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মুসলমান ও দলিত শ্রেনীর মানুষ হিন্দুদের আক্রমন ও দাঙ্গায় হতাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকার, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পূর্ণ সচেতন। যদিও বৃহত্তর সমাজের অংশ হিসেবে মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দুরাও প্রভাবশালী মহলের দ্বারা জবরদখল ও বেআইনী কর্মকান্ডের শিকার হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সামগ্রিকভাবে দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক ও উদ্বেগ থাকলেও হিন্দু জনগোষ্ঠির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্যের কোন দৃষ্টান্ত নেই। সরকারী প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থান তাদের জনসংখ্যার হারের চেয়ে অনেক বেশী। এরপরও বিজেপি নেতাদের বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন ও মন্দির ধ্বংসের মিথ্যা অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক। বিজেপি নেতাদের এমন উস্কানীমূলক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
ভারত ও বাংলাদেশ, সরকারের দাবী, বর্তমানে দুই দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করছে। গত ৫ বছরে ভারতকে শর্তহীনভাবে তাদের প্রত্যাশিত সবকিছুই দিয়েছে বাংলাদেশ। তিস্তার পানি বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার। এটি কোন বিনিময়যোগ্য বিষয় না হলেও ভারতকে ট্রান্সশিপমেন্ট, করিডোর, বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন, বন্দরসহ প্রত্যাশিত সব সুযোগ সু্িবধা দেয়ার পরও তিস্তার পানিচুক্তির দাবী পুরণ হয়নি। এমনকি গঙ্গার পানিচুক্তি লঙ্ঘন করে শুকনো মওসুমে বাংলাদেশকে পানি বঞ্চিত করা হচ্ছে। অর্থপাচার বৈধ-অবৈধভাবে ভারতীয়দের শত শত কোটি টলার রেমিটেন্স পাচার, সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিবর্ষণ ও হত্যাকান্ডসহ এসব নিয়ে যেমন বাংলাদেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন মাথাব্যথা নেই। একইভাবে ভারতীয় নেতাদের বাংলাদেশ বিদ্বেষী বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ দখল করে দিল্লীর শাসন প্রতিষ্ঠার হুমকির পরও তাদেরকে নীরব থাকতে দেখা যাচ্ছে। আগরতলায় সুব্রামনিয়াম স্বামীর দেয়া বক্তব্য তার অতীতের বক্তব্যেরই ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তি। দিল্লীর বিজেপি নেতাদের এমন হুমকির পর আমাদের সরকারের নীরবতা দেশের মানুষ সহজভাবে মেনে নেবেনা। এমনকি বিএনপি, বিভিন্ন ইসলামী দল এবং নবগঠিত জাতীয় ঐক্যের নেতাদের কাছ থেকেও এ সম্পর্কে দেশের মানুষ জোরালো প্রতিবাদ ও সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করে। ভারতে বিজেপির হিন্দুত্ববাদি শাসন সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একইভাবে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোও নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অমিত শাহ, সুব্রামনিয়াম, তোগাড়িয়া, দিলীপ ঘোষদের মত বিজেপি নেতাদের যুক্তিহীন অপরিনামদর্শি বক্তব্য ভারত এবং এ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশে যারা ভারতের বন্ধুত্বের কথা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন,অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন তাদের উচিত বিজেপি নেতাদের এসব সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। সুব্রামনিয়ামের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য ও অবস্থান দেখতে চায় দেশের মানুষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন