কম-বেশি প্রায় সব রান্নাতেই পেঁয়াজের ব্যবহার রয়েছে। পেঁয়াজ ছাড়া বাঙালির রান্নাঘর যেন অচল। মাছ, মাংস, ডাল, শাক-সবজি যা রান্না করুক না কেন স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এসব তরি-তরকারির মধ্যে পেঁয়াজের ব্যবহার যেন বাধ্যতা মূলক। এছাড়াও ছালাদ, চাটনী বা ভর্তায়ও ব্যবহার হয়ে থাকে এ পেঁয়াজ। বিভিন্ন ভাবে খাবারের মধ্যে স্বাদের লক্ষ্যে ব্যবহার করে আসলেও কিন্ত পেঁয়াজের মধ্যে অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ভেষজবীদরা জানিয়েছেন। পেঁয়াজে ভিটামিন এ, বি ও সি’র উপাদান রয়েছে। এছাড়া আছে একটি বড় পেঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ও ০.৭ শতাংশ লোহা থাকে। এবার জানা যাক পেঁয়াজের কিছু গুনাগুন ও উপকারিতা-
উপকারী কোয়ারসেটিনের উৎকৃষ্ট উৎস পেঁয়াজ :
পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে কোয়ারসেটিন আছে যা পেঁয়াজের বাইরের হালকা বেগুনী ত্বকে থাকে। কোয়ারসেটিন রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়, রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে, হাঁপানির সমস্যা কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ব্রঙ্কাইটিস সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। গবেষকদের মতে দিনে মাত্র একটি মাঝারী আকৃতির রান্না করা কিংবা কাঁচা পেঁয়াজ খেলেই এই উপকারিতা পাওয়া যায়।
শরীর বিষ মুক্ত করে পেঁয়াজ:
পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সালফার যৌগ আছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সালফারে এমিনো এসিড আছে যা রসুন ও ডিমে পাওয়া যায়। এই এমিনো এসিড গুলোকে মিথিওনাইন ও সিস্টাইন বলা হয়। এই উপাদান গুলো শরীরকে বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতুর থেকে মুক্তি দেয়। এমন কি এগুলো শরীর থেকে সীসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম বের করে দেয়। পেঁয়াজে ভিটামিন সি আছে যা শরীরকে বিশুদ্ধ করে এবং সীসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
পেঁয়াজ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় :
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁয়াজের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কোষের ডিএনএ কে ক্ষতির থেকে বাঁচিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁয়াজের রস টেস্ট টিউবের টিউমার সেল কে ধ্বংস করে এবং ইঁদুরের শরীরের টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে। পেঁয়াজের রস বিষাক্ত নয় এবং এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই বেশী খেলেও কোনো সমস্যা নেই।
যৌন ক্ষমতা বাড়াতে পেঁয়াজ :
পেঁয়াজ যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস করে পেঁয়াজের রস খেলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে। এভাবে নিয়মিত খেলে যৌন ক্ষমতা প্রায় ২০০% বেড়ে যায়। যারা পেঁয়াজের রস খেতে পছন্দ করেন না তাঁরা খাবারের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ খেলেও উপকার পাবেন
হৃৎপিন্ডের জন্য উপকারি পেঁয়াজ :
পেঁয়াজ রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না এবং রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। তাই পেঁয়াজ হৃৎপিন্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অনেক কার্ডিওলোজিস্টই নিয়মিত পেঁয়াজ খেতে বলে দেন রোগীদেরকে। বিশেষ করে হার্ভাডের ডাক্তার ভিক্টর গুড়েউইচ তার রোগীদেরকে প্রতিদিন অন্তত একটি করে পেঁয়াজ খাওয়ার উপদেশ দেন।
পেঁয়াজ জন্ডিস প্রতিরোধক :
একটি পেঁয়াজের এক-চতুর্থাংশ সারা রাত লেবুর রসে ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা খেলে উপকার পাওয়া যাবে। নাকের রক্ত বন্ধ করে । নাকদিয়ে রক্ত পরলে ৩-৪ ফোঁটা পেঁয়াজের রস দিলে রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে।
কিডনি সুস্থ রাখতে পেঁয়াজ :
পেঁয়াজের রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে কিডনির উপকার পাওয়া যায়।
হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষায় পেঁয়াজ :
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে হিটস্ট্রোক অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। এই ধরনের স্ট্রোক হলে পায়ের ওপর এবং ঘাড়ের পেছনে পেঁয়াজ বেঁটে দিলে শরীরে ঠান্ডা প্রভাব ফেলে, যা স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে।
কাশি নিরাময়ে উপকারি পেঁয়াজ :
পেঁয়াজের রস, আদা এবং তুলসি পাতা একসাথে খেলে কাঁশি দূর হয়। এ ছাড়া যাদের দীর্ঘদিন ধরে বুকের মধ্যে কফ জমে আছে তারা প্রতিদিন সকালে এই তিন পদ মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এছাড়া পেঁয়াজের মধ্যে আরো বহু গুনাগুন রয়েছে। তবে এ পেঁয়াজের গন্ধটা এবাদতের একাগ্রতাকে একটু বাঁধা প্রদান করে বলেও অনেকেই বলে থাকেন। তাই যে কোন সময় যখন-তখন যত্রতত্র পেঁয়াজে ব্যবহার জেনে ও বুঝে-শুনে করা ভাল।
সাংবাদিক, কলামিস্ট
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
amrankaderi@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন