শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

মাছিমপুরের মানুষ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দফায় দফায় লিখিত অভিযোগ

কুমিল্লা উত্তর সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ ‘একটি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের’ কাছে জিম্মি। ওই সন্ত্রাসী বাহিনী মাদক কেনাবেচা, নিরীহ মানুষ এবং সংখ্যালঘুদের জমি দখল, জমি বিক্রি করলে উভয় পক্ষ থেকে চাঁদা আদায় , টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে দাপটের সাথে। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। প্রতিবাদ করলেই গ্রাম ছাড়ার হুমকি। এলাকার মানুষ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দফায় দফায লিখিত অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পায়নি বলে সন্ত্রাসীদের দাপট দিন দিন বেড়েই চলেছে। অভিযোগ উঠেছে সন্ত্রাসী গ্রুপের মদদ দিয়ে আসছে মাছিমপুর গ্রামের আলম সরকার। সন্ত্রাসীদের ভয়ে গ্রামের মানুষ সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে নারাজ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের এক বৃদ্ধ জানান, লিখিত অভিযোগ করেও গ্রাম ছাড়ার ভয়ে স্বীকার করতে পারছি না। তবে গ্রামের সংখ্যালঘু শ্রী নিউটন পোদ্দার নামের এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ সাংবাদিকদের হাতে এসেছে, যার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ডায়েরি নং- ১৩০৫০, তাং-১৬/০৯/২০১৮।

জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের একজন প্রভাবশালী আমলার সুপারিশে এলজিইডিতে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি হয় আলম সরকারের। তখন থেকে আলম কুমিল্লাতে টেন্ডারবাজি শুরু করেন। ২০০৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর স্থানীয় এমপির আশীর্বাদে তিতাসে একচেটিয়া টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেছেন আলম। এরপর সরকারি দলে কৌশলে ঢুকে আলম শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, এলকায় গড়ে তুলে এক সন্ত্রাসী বাহিনী। এছাড়াও সন্ত্রাসী প্রভাব খাটিয়ে ভোটছাড়া সম্প্রতি মাছিমপুর ঐতিহ্যবাহী হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদটি বাগিয়ে নেন আলম। তার সমাজ বিরোধী অপরাধের কারণে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নেতারা বলছেন, আলমের এসব সমাজ বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে দলের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে, ম্লান হচ্ছে সরকারের সাফল্য। তখন থেকে আলমকে দল থেকে বাহিষ্কারের দাবি জানিয়ে আসছিল নেতাকর্মীরা।

গতকাল শনিবার সরেজমিন এলাকার বিভিন্ন পেশার লোকজনের সাথে কথা বললে এসব তথ্য চিত্র ফুটে উঠে। মাছিমপুর গ্রামের কালাম মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, গত সোমবার সন্ত্রাসীরা তার মামা জাকির হোসেনের ২৭ শতক জমি দখল করে নিয়েছে। আমরা এখন ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় আছি। তিতাস উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ভূইয়া ইনকিলাবকে বলেন, আলম একজন পেশাদার অপরাধীা। সে ২০০১ সাল থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী করে আসছে। তার লাগামহীন অপরাধে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভাবমর্যাদা ডুবছে। আলমের নানা অপরাধের ফিরিস্তি এখন ফেসবুকে ভাইরাল। এদিকে মাছিমপুর গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গত ২ আগস্ট গভীর রাতে আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমার স্বামী জাকির হোসেনকে ঘুম থেকে তুলে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে জমি দখল করে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রেরমুখে জাকিরকে জিম্মি করে কয়েকটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং ব্যাংকের দুইটি চেক হাতে ধরিয়ে দেয় প্রতিটিতে লেখা রয়েছে পাঁচ লাখ টাকা করে। পরে সন্ত্রাসীরা জাকিরকে গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। সন্ত্রাসীদের হুমকির পর জাকির অসুস্থ হয়ে পড়ে। নাজমা বেগম বলেন, গত সোমবার সকালে আলম বাহিনীর লোকজন আমাদের ২৭ শতক জমি যার দাগ নং-১৩৩৭ দখল করে নিয়েছে।
এবিষয় আলম সরকারের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি কোন অপরাধের সাথে জড়িত নেই বলে দাবি করেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন