এম এম খালেদ সাইফুল্লা
বিশ্বের অন্যতম বনভূমি সুন্দরবন। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু এলাকাজুড়ে এ বনভূমি অবস্থিত। সুন্দরী, গোলপাতা, গেওয়া, কেওড়াসহ নানা প্রকার উদ্ভিদ ও গুল্ম লতাসমৃদ্ধ এটি। বাঘ, হরিণ, বন্যশূকর, বহু প্রজাতির পাখ-পাখালির বাস এ বনে। এ বন কেবল বাংলাদেশ ও ভারতেরই সম্পদ নয়; এটি এখন আন্তর্জাতিক সম্পদ বলেও গণ্য। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার্থে সুন্দরবনের গুরুত্ব অনেক। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ লুকিয়ে এ বনের গাছ কেটে যেমন পাচার করে, তেমনই এখানকার হরিণ, বাঘ প্রভৃতি প্রাণীও হত্যা করে এসবের চামড়া বিদেশে পাচার করে দেয়। ফলে এ বনে হরিণ ও বাঘের মতো প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া বনের বিভিন্ন গাছ ও লতাপাতা নানাভাবে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে এর মধ্যে বসবাসকারী প্রাণীকূল ও সরীসৃপ প্রজাতি। সম্প্রতি এ বনের ভেতর দিয়ে তেল ও কয়লাবাহী জাহাজ যাতায়াতের ফলেও বিঘœ ঘটছে এর পরিবেশের। এরপর রহস্যজনকভাবে অগ্নিকা- ঘটছে সুন্দরবনে। গত মাসের শেষের দিকে আকস্মিকভাবে অগ্নিকা- ঘটে বনে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় এর একটি বড় অংশ। আবার মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে আবার অগ্নিকা- ঘটে সুন্দরবনে। স্থানীয়দের জোর প্রচেষ্টা ও কয়েকটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের যৌথ প্রচেষ্টায় এ ভয়াবহ আগুন নাকি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। বলা হয়েছে, ভয়াবহ এ আগুনে ১০ একরের বেশি জায়গা ধ্বংস হয়ে গেছে। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সুন্দরী গাছেও। কোনো কোনো দৈনিকে অগ্নিকা-ের সচিত্র খবরও ছাপা হয়েছে। দূর থেকে ব্যাপক এলাকাজুড়ে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ।
অনেকেই চায় না ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে সুন্দরবন বাংলাদেশের অংশ হয়ে টিকে থাকুক। আমরা মনে করি, যারা চায় না সুন্দরবন বাংলাদেশের অংশ হিসেবে টিকে থাক, এ অগ্নিকা-ের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশের একটি অংশে আগুন লাগলে বনভূমি যেমন ধ্বংস হবে, তেমনই এর মধ্যে বসবাসকারী বাঘ, হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি অন্য অংশে ভয়ে পালিয়ে যাবে। এ অংশে বারবার অগ্নিকা-ের ফলে বন যেমন ধ্বংস হবে। তেমনই জীবজন্তু ও পাখিশূন্যতা সৃষ্টি হবে। এ অংশের পরিবেশ হবে বিপন্ন। তাই সুন্দরবনে অগ্নিকা- কেন ঘটছে তা গভীরভাবে তলিয়ে দেখে এর প্রতিকার করা দরকার। অন্যথায় সুন্দরবনের মতো ঐতিহ্যবাহী বনভূমি শুধু বিপন্ন হয়ে পড়বে না, অদূর ভবিষ্যতে এর সর্বপ্রকার উপকারিতা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে পড়ব। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত করে কেউ অপরাধী হিসেবে শনাক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে অপরাধীরা দুঃসাহসী হয়ে সুন্দরবনকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে দ্বিধা করবে না আদৌ। সুন্দরবন কোনো মামুলি বনভূমি নয়। প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব এ বনের অনেক। সুন্দরবন কোনোভাবে বিপন্ন হলে আমাদের পুরো দেশ সংকটে পড়বে। এমনকি আশপাশের দেশসমূহেও এর অশুভ প্রভাব পড়বে সুনিশ্চিতভাবেই। কাজেই সুন্দরবনের আগুনের রহস্য উদঘাটন করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
সুন্দরবন সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিতদের তরফ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, যে কোনো সময় সুন্দরবনে দাবানল সৃষ্টি হতে পারে। এ আশঙ্কা আরও ভয়াবহ। এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটলে সত্যিই আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হবে। এ ব্যাপারে এখনই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। এ ছাড়া বনসংরক্ষণ কর্মকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও কেউ বহিরাগত অনুচর ঘাপটি মেরে আছে কিনা তারও তদন্ত হওয়া জরুরি। সুন্দরবন নিয়ে ছেলেখেলা চলতে দেয়া যাবে না। এ বন বাংলাদেশের হৃৎপি-। এটিকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। কারণ সুন্দরবনের সঙ্গে বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িত। এ বন ধ্বংস বা বিপন্ন হতে দেয়া যাবে না। এ বনের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র ও দূরভিসন্ধি রুখে দিতে হবে আমাদেরই।
ষ লেখক : যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সভাপতি, ঢাকা মহানগর, এলডিপি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন