শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করছে মানছে না নিষেধাজ্ঞা বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা-তেতুলিয়া নদীর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার আন্ত ১২টি রুটে মেঘনায় ও তেতুলিয়ায় চলছে ছোট ছোট লঞ্চ-ট্রলার। কাল বৈশাখী মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এসব লঞ্চ চলাচলের কারণে এক দিকে যেমন দুর্ঘটনা আশঙ্কা রয়েছে অন্যদিকে যাত্রীদের জীবন চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অবৈধভাবে চলাচলকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রশাসনের কোন নিয়মনীতি মানছেন না লঞ্চ মালিকরা। সরকারি সি ট্রাক সার্ভিস ছাড়ার ডেঞ্জার জোনে এসব রুটে লঞ্চ চলাচল করায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা আর প্রাণহানীর আশঙ্কা করা হলেও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ থাকছেন নিশ্চুপ। অন্যদিকে বিকল্প যান না দেয়ায় যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব নৌযানে যাতায়াত করছেন। সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন ঘাটে দেখা গেছে, একটি ছোট লঞ্চ ঘাটে নোঙ্গর করা তজুমদ্দিন মঙ্গল সিকদার ঘাটে। একদিকে মালামাল উঠানো হচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রীরা উঠছেন। অতিরিক্ত মালামাল আর যাত্রী, যেন ধারণ ক্ষমতার ৫/৭ গুণ। কিন্তু ততক্ষণে নদী উত্তাল হয়ে উঠছিলো। আর এ উত্তাল মেঘানায় ডেঞ্জার জোনের মধ্যেই লঞ্চটি ছেড়ে যায়। এ চিত্র দেখা যায় জেলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর অন্তত ১২টি রুটে। সরকার ঘাটগুলোতে ইজারা বসিয়ে রাজস্ব আয় করলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এসব অভিযোগ যাত্রীদের। যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন কাল বৈশাখীর বর্ষা মৌসুম, প্রতিদিনই মেঘনা-তেতুলিয়ায় ভয়ঙ্কর উত্তাল, কিন্তু তারপরেও এ উত্তাল নদী উপেক্ষা করে চরম ঝুঁকি নিয়ে যেন এভাবেই চলছে ছোট ছোট লঞ্চ ও ট্রলার। ঝুঁকিপূর্ণভাবে এই পারাপার দেখলেই বোঝা যায়, যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, সরকার নৌ দুর্ঘটনা রোধে প্রতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ মাস সময়কে মেঘনার-তেতুলিয়ার ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ সময়ে নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় সি সার্ভে ছাড়া অন্য চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম তোয়াক্কা না করেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে লঞ্চগুলো চলছে। প্রতিদিন তজুমদ্দিন সদরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এসব লঞ্চ জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে ছাড়াও নেয়াখালী, লক্ষীপুর ও পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। ফলে চরম ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন। বে-সরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট্রের (এনজিও) কর্মী রাশিদা আক্তার বলেন, লঞ্চগুলো একদিকে অতিরিক্ত মালামাল তুলছে, অন্যদিকে ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী তুলছে। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যাত্রী ইকবাল হেসেন বলেন, অনেক জোরপূর্ব অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করছে লঞ্চগুলো। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয় না। রাকিব হাসান বলেন, বিকল্প নৌযান না থাকায় আমরা এসব লঞ্চে যাতায়াত করছি। আয়শা বেগম বলেন, আমরা জানি, যে কোনো সময় ঝড় হলে কিংবা নদী অতিরিক্ত মাত্রায় উত্তাল হলেই এসব লঞ্চ ডুবে যাবে। কিন্তু কিছুই করার নেই, বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া প্রশাসন এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্যনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, ভোলার ১২টি রুটের মধ্যে যেসব রুট বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর সেগুলো হচ্ছে, ইলিশা-মজুচৌধূরীররহাট, ভেলুমিয়া-ধুলিয়া, হাকিমুদ্দি-তজুমদ্দিন, দক্ষিণ আইচার কচ্ছপিয়া-ঢালচর-কুকরী-মুকরী, বেতুয়া-মনপুরা, তজুমদ্দিন-মনপুরা-চর জহির উদ্দিন, নাজিরপুর-কালাইয়া, তজুমদ্দিনের হাকিমুদ্দি-আলেকজেন্ডার, মনপুরা-হাতিয়া, দৌলতখান-আলেকজেন্ডার-মনপুরা, লক্ষীপুর। জেলার সাথে অন্য দুর্গম এলাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌ পথ, তাই যাত্রীদের নৌযান দিয়েই যাতায়াাত করতে হয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব রুটে ফিটনেসবিহীন ছোট ছোট লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে পারাপার হলেও যেন মাথা ব্যথা নেই তাদের। এ বিষয়ে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে চলাচলকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিআডব্লিটিএ ট্রফিক বিভাগের কর্মকর্তাগণ বিষয়টির ওপর নজরদারি রাখছে। এদিকে, ডেঞ্জার জোনে অবৈধ লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে এসব রুটে সরকারি সি ট্রাক কিংবা নিরাপদ লঞ্চ দেয়ার দাবি জানিয়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন