বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মইনুল হোসেনের গ্রেফতার : খারাপ দৃষ্টান্ত

| প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

রংপুরে দায়ের করা একটি মানহানির মামলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয় ঐক্যফন্টের অন্যতম সংগঠক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টেলিভিশনে প্রচারিত একটি টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে তার অসাংবাদিকসুলভ ও ব্যক্তিগত মানহানিকর এক প্রশ্নের জবাবে ‘চরিত্রহীন’ বলায় তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আরো একাধিক মামলা হয়েছে এবং সে মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনও পেয়েছেন। মইনুল হোসেনের মত একজন বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে আনীত মানহানির অভিযোগে দিনের বেলা রংপুরে মামলা, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি এবং রাতে ঢাকায় গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জনমনে একটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ মইনুল হোসেনের মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিশেষত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে যুক্ত থাকায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা, হাইকোর্টে আগাম জামিন লাভের পরও ভিন্ন স্থানে মামলা দিয়ে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রকাশিত হয়েছে। টকশোর আলোচনায় প্রায়শ: উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়ে থাকে। রাজনৈতিক নেতারা পরস্পরকে আক্রমন ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালাগালসহ নানা আপত্তিকর উক্তিরও অনেক উদাহরণ আছে। এমনকি সরকারের একজন মন্ত্রী টকশোতে প্রতিপক্ষ বক্তাকে লাঞ্ছিত করার হুমকি দিতেও দেখা গেছে। সে সব ঘটনায় কোন মামলা হয়নি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দু:খ প্রকাশের মধ্য দিয়েই বিতর্কের পরিসমাপ্তি হয়েছে।

একাত্তর টিভির টকশোতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত হন বলে শোনা যাচ্ছে, বলায় মইনুল হোসেন তাকে তার দু:সাহসের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে চরিত্রহীন বলে উল্লেখ করতে চাই বলেছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে। যদিও ব্যারিস্টার মইনুল তাকে ব্যক্তিগতভাবে নয় পেশাগত চরিত্রহীন বলে ব্যাখ্যা দিয়ে, কথার ফাঁকেই তার বক্তব্যের জন্য দু:খপ্রকাশ করেছেন। পরে মাসুদা ভাট্টিকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে আবারও দু:খ প্রকাশ করেন তিনি। দেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল কায়েমের প্রতিবাদ করে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এক-এগারোর প্রাক্কালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে জোরালো ভ‚মিকা পালন করেছিলেন। দেশের সাংবাদিক সমাজের অন্যতম পথিকৃত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জেষ্ঠ্যপুত্র, দেশের অন্যতম পুরনো ইংরেজী দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকার তিনি সম্পাদক ও প্রকাশক। গণমাধ্যমে ভুল শব্দ প্রয়োগ কারো কাম্য নয়। তবে একজন প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ কলামিস্ট ও সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির আনীত অভিযোগে ব্যারিস্টার মইনুলের দু:খ প্রকাশের পরও তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানার ঘটনা দেশের নাগরিক সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আইনের প্রয়োগের নামে এমন ঘটনা দেশে খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে।

গত ৫ বছর ধরে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানবাধিকার ও জননিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই গুম-খুনের ঘটনা ঘটছে। রাস্তার পাশে গুলিবিদ্ধ যুবকদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কোন কোন ঘটনায় অভিযোগের আঙুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে। এহেন বাস্তবতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরো জাতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে। বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা সরকারেরও অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গিকার। টকশোতে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে শব্দচয়নে বাড়াবাড়ি বা ভুলভ্রান্তি ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সাথে জড়িত বর্ষিয়ান ব্যক্তিদের হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে জাতির কাছে যে বার্তা পৌঁছাচ্ছে তা সরকার ও দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য কোন সুফল বয়ে আনবে না। এই ঘটনা সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে নির্বাচনের আগে মানুষের কণ্ঠরোধ এবং আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা হিসেবে গণ্য হতে পারে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মত নাগরিককে এভাবে হেনস্তা করা হলে, সাধারণ মানুষের সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা কোথায় তা সহজেই অনুমেয়। সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ মানুষ নিজেদেরকে অনিরাপদ বোধ করে, এমন যে কোন পদক্ষেপ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরত থাকা উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন