মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা উত্তর থেকে
বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা-২ আসনের তিতাস উপজেলা। এখানকার ৯টি ইউনিয়নে আগামী ২৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রথম তৃণমূলের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ দলের প্রতীক নৌকা, ধানের শীষ ও নাঙ্গল নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। আগামী ২ মে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন আর প্রত্যাহারের শেষ দিন ৪ ও ৫ মে। সেমতে ১৩ মে পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই প্রার্থীরা একটু সাবধানে নীরবেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ এখানকার প্রত্যন্ত জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনী উত্তাপ ততই বাড়ছে। বদলে যাচ্ছে মাঠের দৃশ্যপট ও ভোটের হিসাব-নিকাশ। স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধা ও সাধারণ ভোটারদের মনে শঙ্কাও বাড়ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা? তবে এখানে বিগত নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠান অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এমন ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান হবে কিনাÑ মানুষের এমন আশংকার ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আমির হোসেন ভূইয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে আমি এমপি হিসেবে এখানকার মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয় সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সর্বমহলে আমি কথা বলব। তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনগুলো এখানে যেভাবে সুষ্ঠু হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনেও মানুষ যাতে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘেœ নির্ভয়ে যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারে সে লক্ষ্যেই আমি কাজ করব ইনশা আল্লাহ। তিতাসের মানুষ আমার পাশে থাকলে সুষ্ঠু ভোট করা কোনো বিষয় নয়। সাধারণ ভোটাররা হিসাবÑনিকাশ শুরু করেছেন, তাদের মূল্যবান ভোট কাকে দেবে। এখানে ভোটের লড়াইয়ে আ’লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ছাড়াও আ’লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে এখানে নির্বাচনী মাঠ জমবে। ভোটযুদ্ধ হবে সমানে সমান। অসহনীয় গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঝড় তুলছেন সর্বস্তরের আবালবৃদ্ধবনিতারা। তারা প্রার্থীদের ভালোমন্দ দিকগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। ভোটারদের মধ্যে এখন সবচেয়ে আলোচনাÑ পর্যলোচনা ও সমালোচনার বিষয় স্থানীয় আওয়ামী লীগকে নিয়ে। কারণ সাত বছর ধরে এখানকার আ’লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনোখুনি, দাঙ্গাÑহাঙ্গামা আর দখলদারিত্ব ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। ভোটাররা বলছেন, আমাদের ভাগ্য ভালো দীর্ঘদিন পরে হলেও এই অবহেলিত তিতাসে আমির হোসেনের মতো একজন ক্লিন ইমেজের এমপি পেয়েছি। ফলে আমরা তিতাসের মানুষ আলোর মুখ দেখেছি। তা না হলে যেই তিমিরের তিতাস সেই তিমিরের অন্ধ গলিতে থাকতে হতো। এদিকে ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে নিয়ে স্থানীয় আ’লীগের একাংশের সভাপতি মোঃ শওকত আলী গ্রুপের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও এই গ্রুপের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংবাদিকদের মারধর ও নানাভাবে হেনস্থা করা, অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, টাকার বিনিময়ে দলে পদ-পদবি বিক্রি করাসহ নানা অপরাধ কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে। ফলে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এই গ্রুপের নেতাদের আ’লীগের মনোনীত কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য মাঠে না নামার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ এতসব অভিযোগ নিয়ে কোনো প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামলে ওই প্রার্থীর নিঃসন্দেহে ভরাডুবি হবে। তাই নৌকা মার্কার প্রার্থীরা, তৃণমূল নেতাকর্মীরা ও ভোটাররা অপর অংশের সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ পারভেজ হোসেন সরকারকে প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, পারভেজ হোসেনের এলাকার সর্বমহলে যেমন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তেমনি তিনি এলাকায় জনপ্রিয়ও। এদিকে সরকারি দল আ’লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান পদের জন্য ৯টি ইউনিয়নে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচনে লড়বেন তারা হলেনÑ তিতাস সদর কড়িকান্দি ইউনিয়ন থেকে মোহাম্মদ মহসীন ভূইয়া (আ’লীগ), মোঃ মোশারফ হোসেন সরকার (জাতীয় পার্টি) ও আলী হোসেন মোল্লা (বিএনপি)। বলরামপুর থেকে মোঃ তোফায়েল আহমেদ ভূইয়া তপন (বিএনপি), রবিউল আউয়াল (জাতীয় পার্টি) ও নূরনবী (আ’লীগ)। মজিদপুর থেকে আক্তার হোসেন বেপারী (বিএনপি), শাকিলা পারভিন ( আ’লীগ) ও ঈমাম হোসেন (জাতীয় পার্টি)। জিয়ারকান্দি থেকে মোঃ এমদাদ হোসেন আখন্দ (বিএনপি), মাওলা সরকার (জাতীয় পার্টি) ও মনির হোসাইন সরকার (আ’লীগ)। ভিটিকান্দি থেকে বিল্লাল হোসেন মোল্লা (বিএনপি), আবুল হোসেন মোল্লা (আ’লীগ) ও মোঃ হযরত আলী সরকার (জাতীয় পার্টি)। কলাকান্দি মোঃ মোবারক হোসেন সরকার (জাতীয় পার্টি), মোঃ নুরু মিয়া (বিএনপি) ও হাবীবুল্লাহ বাহার (আ’লীগ)। জগৎপুর মুজিবুর রহমান (আ’লীগ), মুন্সী মোঃ আমিরুল ইসলাম মানিক (বিএনপি) ও মোঃ আব্দুর রহমান (জাতীয় পার্টি)। নারান্দিয়া মোঃ রমজান আলী প্রধান (বিএনপি), মোঃ কবির হোসেন (জাতীয় পার্টি) ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন আহমেদ (আ’লীগ)। সাতানী আলহাজ মোশাররফ হোসেন (জাতীয় পার্টি), মোঃ সামসুল হক (আ’লীগ) ও মোঃ আবদুল করিম সওদাগর (বিএনপি)। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে আ’লীগের একাধিক বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে মোটামুটি ৩০ জনের মতো। তারাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে দলীয়, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা গভীর রাত পর্যন্ত গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সাথে মতবিনিময় করছেন, উঠান বৈঠক করছেন। তিতাস উপজেলা আ’লীগ নেতা আলাউদ্দিন মাস্টার বলেছেন, নির্বাচন করা সহজ কিন্তু মনোনয়ন পাওয়া কঠিন। তিতাস উপজেলা যুবলীগ সভাপতি সাইফুল আলম মুরাদ বলেছেন, আমি আশাবাদী আসন্ন নির্বাচনে তিতাসের আওয়ামী লীগের মনোনীত সব প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ পারভেজ হোসেন সরকারের নেতৃত্বে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে, এটা আমার বিশ্বাস। বলরামপুর ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ তপন বলেছেন, এলাকার জনগণের ভালো মতামত পাচ্ছি। আমি আশাবাদী এলাকাবাসী আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবে ইনশা অল্লাহ। মজিদপুর ইউনিয়ন বিএনপি প্রার্থী আক্তার হোসেন বেপারি বলেছেন, ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি, মানুষ ভোট দিতে পারলে আল্লাহর রহমতে বিজয়ী হব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন