এমএ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে
নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি কাদামাটির শৌখিন সামগ্রীতে কপাল খুলেছে নওগাঁর মহাদেবপুরসহ আশপাশ উপজেলার শত শত কুমার পরিবারের। এ কারণে বেশ কর্মচঞ্চল থাকছে এসব এলাকার কুমারপাড়াগুলো। মনের মাধুরী দিয়ে উৎকৃষ্ট কারুকাজে যতসব শৌখিন সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কুমার শিল্পীরা। এ এলাকাগুলোতে তৈরি মাটির শৌখিন সামগ্রীসমূহ বেশ কিছু দিন থেকে দেশের বাইরেও যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। কারিগরদের একাগ্রতায় তৈরি কাদামাটির শৌখিন সামগ্রীগুলো দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করায় এখন সুদিন ফিরে এসেছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শত শত পরিবারে। মেলামাইন, স্টিল, সিলভার ও প্লাস্টিকের তৈরি সামগ্রীগুলো বাজারে একচেটিয়াভাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করায় কুমার শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলো অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে কাটায় দীর্ঘদিন। দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য অনেকেই একপর্যায়ে আদি পেশা ছেড়ে নানান পেশায় নিয়োজিত করেন নিজেদেরকে। কুমার পরিবারগুলো জানায়, দীর্ঘ দুঃখ-কষ্টের পরীক্ষায় তারা আজ বিজয়ী। তাদের সেই কষ্টে ঘেরা দিনের এখন অনেকটাই অবসান হয়েছে। তারা জানান, কাদামাটি দিয়ে তৈরি সামগ্রীগুলোতে কোনোরকম রাসায়নিক দ্রব্য না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুমারদের মাটির তৈরি শৌখিন সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের খেলনা সামগ্রী, বাহারী ফুলের টব ও ফুলদানী, রঙ-বেরঙের পশুপাখি, মাছ, ছোট-বড় নানান আকৃতির ব্যাংক ও বিচিত্র আকার-আকৃতির ঘটিবাটিসহ বিভিন্ন সামগ্রী। এসবের বেশির ভাগই বিদেশে রফতানির জন্য রাজধানীসহ দেশের নানান স্থানের পাইকাররা এখান থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। দামও পাচ্ছেন বেশি। এ কারণেই এখানকার কুমারপাড়াগুলো কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে। নানা দুর্দশার মধ্যে এখানকার কুমারপাড়াগুলো ঝিমিয়ে পড়েছিল। সে সময় তাদের দিন যেত খেয়ে না খেয়ে। স্থানীয় এবং আশপাশের সুলতানপুর, খঞ্জনপুর, শিবগঞ্জ, দোহালী ও দাউলসহ প্রভৃতি কুমারপাড়া ঘুরে দেখা যায়, মাটির শৌখিন সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এ সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা। সুলতানপুর কুমারপাড়ার বাসিন্দা ধীরেন্দ্রনাথ পাল জানান, তার দাদা গোপিনাথ পাহান ও পিতা নয়ন পাহান কুমার পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। দাদা ও পিতার পথ ধরেই তিনি এ পেশাকে বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, মেলামাইন, স্টিল, সিলভার ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যাপক ব্যবহারে মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশার সাথে জড়িত শত শত পরিবার অনেকটা বেকায়দায় পড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে কাদামাটির তৈরি শৌখিন সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুদিন ফিরে এসেছে দরিদ্র পরিবারগুলোতে। আগে খেয়ে না খেয়ে কাটলেও এখন আর সেই দুর্দিন নেই। এসব সামগ্রী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের নানা স্থানের ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে পাইকারি কিনে নিয়ে গিয়ে দেশের বাইরে রফতানি করেন বলে ধীরন্দ্রনাথ জানান। এ পেশার সাথে জড়িত পরিবারগুলোর আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এখন ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখাতেও মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। পড়ালেখার ফাঁকে তাদের ছেলে-মেয়েরাও মাটির শৌখিন সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। সুলতানপুর পালপাড়ার বাসিন্দা শ্রীমতি অর্চণা রানী জানান, একজন নারী শ্রমিক মাটির সামগ্রী তৈরি করে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিনশত টাকা আয় করে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন