রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বেতাগীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেতাগী (বরগুনা) উপজেলা সংবাদদাতা
বরগুনার বেতাগীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের তীর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা বাসস্থান বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে। উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল কাদের শরীফ। স্বাধীনতা যুদ্ধে রয়েছে যার অসামান্য অবদান। অভিযোগে জানা গেছে, ফুলতলা গ্রামে সহায়সম্বলহীন কাদের শরীফের  পৈত্রিক বড়িতে একটি ঝুপরি ঘর রয়েছে। যেখানে মানুষ বাস করার মতো অবস্থা নেই। সেখানে তার পরিবার বাস করতে না পারায় তার দুই স্ত্রী স্ব-স্ব  বাবার বাড়িতে বাস করছেন। কবরটিও অযতœ অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় এর পরেও তার নামে ঘর বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করা হয়নি অথচ একই ইউনিয়নের দোতলা ঘরের মালিক, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যিনি বিবিচিনি চরের ৬০ শতাংশ জমি ভোগ করছেন এমন ব্যক্তির নামে সম্পূর্ণ অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা বাসস্থান বাছাই কমিটি তার অনুকূলে ঘর দেয়ার সুপারিশ করেছেন। অবশ্য বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কাশেম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তার দুই স্ত্রী থাকায় দ্বন্দ্ব হতে পারে বলে তার নামে ঘর দেয়ার সুপারিশ করা হয়নি।’ জানা গেছে, বিবিচিনি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ইতোপূর্বেও ২০১৫ সালে তার নামে বাসস্থান বরাদ্দের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নিকট নামের তালিকা প্রেরণ করেছিলেন। এবারেও বাছাই কমিটি রহস্যজনক কারণে সরজমিনে পরিদর্শন না করে মুক্তিযোদ্ধা দলিল উদ্দিনের নাম সুপারিশ করে। যুদ্ধকালীন কমান্ডার আবদুল মোতালেব সিকদার বলেন, কাদের শরীফের নামে  দু’দুবার ঘর দেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয় কিন্তু পরে কি কারণে তার নাম কর্তন হয় আমি জানি না।  এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, জেলা প্রশাসক, কেন্দ্রীয়  কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।  দেশান্তরকাঠী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে মুক্তিযোদ্ধা দলিলউদ্দিন সিকদারের। এসময় তিনি  দোতলা ঘরের ফ্যানের নীচে আয়েশ করে ডিসের লাইনে টিভি দেখছেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধা দলীল উদ্দিন তাকে অসহায় দাবি করে বলেন, একই ঘরের মধ্যে আমি ও আমার মেয়ে নিয়ে বাস করছি। আমার অংশের ঘরের অংশটুকু ভাঙাচোড়া। আবদুল খালেক মিনা, ফরিদ গাজী, মো. শাহআলম, আলী আহমেদ, মো. সিরাজউদ্দিন, আবদুল মজিদসহ স্থানীয় একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান, কাদের শরীফই ছিলেন তাদের ইউনিয়নের প্রথম অস্ত্রধারী সাহসী যোদ্ধা। আবদুল কাদের শরীফের প্রথম স্ত্রী পিয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি স্বামীর ভিটায় ঝুপরি ঘরে না থাকতে পেরে অনেক বছর যাবৎ বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। আর কত? দ্বিতীয় স্ত্রী মোসা. মোস্তাফিজা খানম হেনা বলেন, আমিও বাবার বাড়িতেই বসবাস করে আসছিলাম কিন্তু  তিনিও পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ায় আরও অসহায় হয়ে পড়েছি। এ দিকে দলিল উদ্দিন সঠিক মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা নিয়েও স্থানীয়ভাবে বিভ্রান্তি ও নানা মতামত রয়েছে। তার জাতীয় পরিচয় পত্রে মো. ধলু সিকদার ও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় মো. দলিল উদ্দিন নামে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সঠিক কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণ হিসেবে শুধু বেতাগী থানায় ডায়েরীভুক্ত করা একটি আবেদন পত্র রয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সনদ, প্রধানমন্ত্রীর সনদ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণের কাগজ ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর হারানো যায়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয় বিস্তারিত অবহিত নয়। তবে বাছাই কমিটি যাদের নাম দিয়েছে আমি তাদের নামই জেলায় প্রেরণ করেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন