বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অসহনীয় যানজট

| প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটে দিন দিন অচল ও স্থবির হয়ে পড়ছে। এমন কোনো দিন নাই যেদিন এ মহাসড়কে যানজট লেগে থাকে না। যানজট এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে। শুক্রবার এ মহাসড়কে যানজট মেঘনা সেতু থেকে কুমিল্লার মাধাইয়া পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া যানজট তিন দিনেও কাটেনি। এতে অশেষ দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীসহ মালামাল পরিবহণকারী যানবাহন। অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকামুখী রোগীদের জীবনও সংকটাপন্ন অবস্থায় নিপতিত হয়েছে। যানজটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পৌঁছতে সময় লাগাছে ২০ ঘন্টারও বেশি। মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার ও শৌচাগার না থাকায় যাত্রীদের অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যানজটের কারণ হিসেবে চালক ও সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, চার লেনে চলাচলকারী যানবাহন দুই লেনের গোমতী ও মেঘনা সেতুতে উঠার ক্ষেত্রে বিলম্ব এবং গাড়ি চালকদের মধ্যে ওভারটেকিং প্রবণতা, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো দাউদকান্দিস্থ টোল প্লাজায় ভারী যানবাহনের ওজন মাপার ক্ষেত্রে হয়রানি ও অহেতুক দেরি করা, উল্টো পথে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে যানবাহন প্রবেশ করা এবং অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহনের যাতায়াত ও ধীর গতিতে চলা। এসব সমস্যা নিত্যদিনের। সমস্যা সমাধানে হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন যাত্রীসাধারণ ও চালকরা।
অর্থনীতিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্ব নতুন করে বলার কিছু নেই। আমদানি-রফতানি থেকে শুরু করে সারাদেশের পণ্য সরবরাহ করে অর্থনীতিকে সচল রাখার প্রধানতম মহাসড়ক এটি। ধারণা করা হয়েছিল, মহাসড়কটি চারলেন করলে দীর্ঘদিনের যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। দেখা যাচ্ছে, চারলেন করা হয়েছে ঠিকই তবে যানজট কমেনি; বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, চারলেন করার পাশাপাশি মহাসড়কে থাকা সেতুগুলোকে চারলেনের সাথে সামঞ্জস্য করে সংস্কার না করা। প্রত্যেকটি সেতুই চারলেনের চেয়ে অপ্রশস্ত। ফলে চারলেন সড়ক সেতুগুলোর মুখে গিয়ে সরু হয়ে গেছে। যাকে বলে ‘বোটল নেক’ বা বোতলের গলার মতো। এতে সেতুতে উঠতে গিয়ে চারলেনের যানবাহনগুলোকে সরু রাস্তার মধ্যে পড়তে হচ্ছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে প্রচন্ড যানজট। তার উপর রয়েছে টোল প্লাজা। টোল দিতে গিয়ে যানবাহনকে সেতুতে উঠার আগে থামতে হচ্ছে। টোল নেয়া এবং ভারী যানবাহনের ওজন মাপতে গিয়েও বিলম্ব ঘটছে। এই মহাসড়কে যানজট সৃষ্টির আরও কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম, ধীরগতির থ্রি হুইলার চলাচল করা, রাস্তার উপর অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ ও বাজার বসা। এক হিসেবে দেখা গেছে, এই মহাসড়কে প্রায় দুইশ’র মতো বাজার রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন গ্রাম ও মহল্লা থেকে মহাসড়কে গাড়ি উঠার বিভিন্ন লিংক রোড। বিশ্বে এ ধরনের মহাসড়ক বলতে কিছু নেই। মহাসড়ক হতে হয় একেবারে মসৃন, সরল এবং এর পাশে কোনো ধরনের স্থাপনা কিংবা লিংক রোডের সংযোগ থাকার সুযোগ নেই। থ্রি হুইলার জাতীয় ধীরগতির যানবাহন ও বাজার বসার কোনো কারণ থাকতে পারে না। দুঃখের বিষয়, অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কে এ ধরনের সব প্রতিবন্ধকতাই রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নেই বললেই চলে। ফলে দিন দিন এ মহাসড়কে যানজট তীব্রতর হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষের কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে পড়ছে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে মসৃন ও নির্ঝঞ্ঝাট রাখার বিকল্প নেই। চারলেনের সুফল পেতে হলে এ মহাসড়কে যেসব সেতু রয়েছে সেগুলোকে চারলেনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংস্কার করা জরুরি। এ কাজটি করা গেলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়া মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা, বাজার, ধীর গতির থ্রি হুইলারের চলাচল উড়িয়ে দেয়াসহ যেসব লিংক রোড রয়েছে সেগুলো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেতুতে প্রবেশে ভারী যানবাহনের ওজন মাপা এবং টোল আদায় কীভাবে আরো দ্রুত করা যায়, এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। সরকারকে এ মহাসড়কে যান চলাচল দ্রুতায়িত আলাদাভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। যানজটের কারণে দিনের পর দিন যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহনে শুধু এই মহাসড়কের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প ব্যবস্থার কথা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে নৌপথকে সচল এবং ব্যবহার উপযোগী করা প্রয়োজন। সারা বিশ্বেই এখন নৌ পথকে পণ্য পরিবহনে গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি রেল যোগাযোগকে আরও সম্প্রসার করা দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন