শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বন্দিজীবনেও স্বাবলম্বী ওরা

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

কুমিল্লা কেন্দ্রিয় কারাগারে কয়েদিদের নিখুঁত হাতে তৈরি হচ্ছে তাঁত, বাঁশ-বেত, নকশিকাঁথা, পরিধানের কাপড়সহ বিভিন্ন ধরণের গৃহস্থালি পণ্য। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অপরাধে দন্ডিত কয়েদিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলার এ উদ্যোগ চালু রয়েছে। বন্দী জীবনেও ওরা স্বাবলম্বী। ওদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নান্দনিক পণ্যসামগ্রী।
কারাগারে অপরাধের সাজা ভোগ করার পর মুক্ত হয়ে কয়েদিদের যেনো কর্মহীন থাকতে না হয় এ জন্য কুটিরশিল্প, তাঁত, চরকাকাটা, খাদ্যসামগ্রী ও নানা রকমের গৃহস্থালি পণ্য তৈরির কাজ শেখানো হচ্ছে। আবার কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স, টেইলারিং, রান্না ও বেকারিজ সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণও দেয়া হয়ে থাকে। বন্দিদের নিপুণ হাতে তৈরী এসব পণ্যসামগ্রী কারাগারের চাহিদা মিটিয়ে জনসাধারণের নিকট বিক্রির জন্য কারাগারের প্রধান ফটকের পাশে কারাকর্তৃপক্ষ পরিচালিত প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ১৭৯২ সালে ৬৭ একর জায়গার উপর কুমিল্লা জেলা কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬২ সালে এটি কেন্দ্রিয় কারাগারে রূপান্তর করা হয়। ১ হাজার ৭৪২জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এ কারাগারে গড়ে প্রতিদিন পুরুষ-মহিলাসহ প্রায় তিন হাজার হাজতি-কয়েদি অবস্থান করে থাকেন। এসব বন্দিদের মধ্যে অদক্ষ মহিলা ও পুরুষদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন কয়েদিদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে স্বাবলম্বী ও সমাজে পুনর্বাসন করার এক ব্যতিক্রমি সংশোধনাগার। এক্ষেত্রে কুমিল্লা কারাকর্তৃপক্ষ বেশ সফলতা অর্জন করেছে।

কারাগার মানেই বন্দিশালা, এমন বদ্ধধারণা পাল্টে দিয়েছে সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বা কয়েদিদের কর্মমুখী জীবনধারা। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম বন্দীরাই নিজ হাতে তৈরি করছেন বিভিন্ন হস্তশিল্পের পণ্য। কয়েদিদের তৈরি এসব পণ্য কুমিল্লায় বিভিন্ন সময় বাণিজ্য ও তাঁত মেলায় বিক্রয় প্রদর্শনীসহ দেশের অন্যান্য কারাগারেও সরবরাহের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়ে থাকে। কেবল বন্দীদের হাতে পণ্যসামগ্রী তৈরিই নয়, কারাগারে রয়েছে মানসিক বিকাশে অশিক্ষিত বন্দীদের ধর্মীয় শিক্ষা-গণশিক্ষা ও খেলাধূলাসহ বিনোদনমূলক বিভিন্ন আয়োজন।

জানতে চাইলে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগম বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে যারা কারাবন্দী হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে ও স্বল্প মেয়াদে অবস্থান করছেন তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার এ উদ্যোগ এখানে অর্ধশত বছর ধরে চালু রয়েছে। কয়েদিদের উৎপাদিত পণ্যের মুনাফার ৫০ ভাগ তুলে দেয়া হয় তাদের হাতে। যাতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়। কারাগারের ভেতরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। আবার যেসব কাজের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে বন্দীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে বন্দীদের নিপুণ হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ঘিরে সাধারণ ক্রেতাদেরও বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। বন্দী জীবনে কাজের মধ্যে থেকে রুটিন জীবন যাপন কয়েদিদের জন্যও ভালো। বন্দী জীবন শেষে তারা যেন বাইরের স্বাভাবিক জীবনে প্রশিক্ষিত কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন। এতে করে একদিকে তারা স্বনির্ভর হবেন, অন্য দিকে বন্দী পরবর্তী জীবনে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা আসবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন