শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করতে পারেনি আমতলীর এক গ্রাম গোয়ালশূন্য

প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমতলী (বরগুনা) উপজেলা সংবাদদাতা
গত ৪০ দিনে আমতলীর একটি গ্রাম গোয়ালশূন্য হয়ে পড়েছে। পশু চিকিৎসকরা কোন রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও কোন রোগের আলামত পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কৃষকরা নিস্ব হয়ে পড়েছে। গত ২০ মার্চ থেকে আমতলী উপজেলার হলদিয়া গ্রামের একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে ২০টি পরিবারের ৩৪টি গরু, ২টি ভেড়া ও ১টি ছাগল মারা গেছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। আমতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খবর পেয়ে গত ২৩ মার্চ ১ম রিং ভেকসিনেশন, ১১ এপ্রিল ২য় রিং ভেকসিনেশন প্রদান করেন। মৃত পশুর পোস্টমর্টেম করে যকৃত, ফুসফুস, নাড়িভুঁড়ির অংশ ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠান হয়েছে। তাতেও কোন রোগের আলামত পাওয়া যায়নি। আমতলীর প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক তার টিমসহ সরেজমিন গিয়ে চিকিৎসা করে ১টি গরুও রক্ষা করতে পারেননি। গত ২৭/২৮ এপ্রিল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ দুলাল কৃষ্ণ রায় তার ভ্যাকসিনেশন টীম, ভেটেরিনারী টীমসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে কোন রোগ শনাক্ত করতে পারেননি। বর্তমানে মাটি ও ঘাস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মৃত গরুর মধ্যে সালাম বয়াতীর-১টি, মোসলেম প্যাদার-১টি, বশির প্যাদার-১টি, আলতাফ হাং-১টি, খবির খলিফার-৩টি, সোবাহান প্যাদার-৪টি, বাবুল চৌকিদারের-৫টি, ফোরকান খলিফার-২টি, দেলোয়ার চৌকিদারের-২টি, সোহরাফ মীরার-৪টি, রাজু মোল্লার-১টি, সানু মোল্লার ১টি, আবুল মোল্লার-১টি, শাহ আলম মোল্লার-২টি, সিদ্দিক মোল্লার-১টি, শাহ জালাল মোল্লার-২টি, মকবুল মোল্লার-১টি, সবুজ মাতুব্বরের-১টি এছাড়া তোফাজ্জেল মোল্লার-২টি ভেড়া এবং আলমগীর হাং-১টি ছাগল। এসব গরু খোয়াড়ে নয়- বিলে দুপুর এবং সন্ধ্যার পূর্বে মারা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, এসব গরুর মধ্যে বেশিরভাগ দুধের এবং দামি গরু। আরো উল্লেখ্য যে, একই মাঠে মুসলিম ও হিন্দুর গরু পাশাপাশি থাকলেও হিন্দুদের একটি গরুও মারা যায়নি। মারা যাওয়ার পূর্ব লক্ষণ ঘাস খাওয়া থেকে চমকে উঠে এদিক সেদিক তাকিয়ে দৌড় দেয় এবং ধপাস করে মাটিতে পড়ে গিয়ে মারা যায়। গত ২৭/২৮ এপ্রিল জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ দুলাল কৃষ্ণ রায় তার ভ্যাকসিনেশন টীম, ভেটেরিনারী টীমসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে কোন রোগ শনাক্ত করতে পারেননি। বর্তমানে মাটি ও ঘাস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব গরু-বাছুর যাদের মারা গেছে তারা সবাই হতদরিদ্র। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনে কেউ দুধ বিক্রি করে, কেউ বা বর্গা জমি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন তারা নিতান্তই অসহায় হয়ে পড়েছেন। যাদের ২/১টি গরু-বাছুর আছে তা ভিন্ন গ্রামে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। অনেকে সব বিক্রি করে দিয়েছে। গ্রামের ঐ নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে কারও কোন গরু-ছাগল নেই- গোয়ালশূন্য গ্রাম। স্থানীয় অধিবাসীদের ধারণা কোন বদজীন বা ভূতপেতনীর দ্বারা এই মৃত্যু সংঘটিত হচ্ছে। এ কারণে তারা দোয়া ইউনুছ পাঠ, পাঙ্গাশিয়ার পীর শাহ মোঃ অলি উল্লাহকে ১৯ হাজার টাকা দামের ১টি গরু ও নগদ ১১ হাজার টাকা সদকাদান ও চৈতার হুজুরকে দিয়ে দোয়া দরূদ পাঠ করিয়েও কোন সুফল পায়নি। এই গ্রামের প্রান্তে হলদিয়া হাটের দোকানদার জয়নাল মোল্লা গত ২৪ এপ্রিল রাত ২টার সময় তার দোকানের সামনে আবছা আলোয় লম্বা চুল, লাল শাড়ি ও পায়ে ঘুংঘুর পরিহিতা ৭ জন নারীকে নৃত্য করতে দেখেন। এই গভীর রাতে অদ্ভুত এ নারীদের দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যান। তাদের চেহারা তিনি দেখতে পাননি। কয়েকজন লোক রাতের অন্ধকারে চলতে গিয়ে অদ্ভুত কিছু দেখে ভয় পেয়েছে। গ্রামে এখন কোন লোক রাতের অন্ধকারে চলাচল করছে না। সারা গ্রামে এখন আতংক বিরাজ করছে। আমতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ (বিসিএস, প্রাণিসম্পদ) কর্মকর্তা ডঃ সৈয়দ আলতাফ হোসেন জানান, আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের টিম সেখানে চিকিৎসা দিয়ে আসছে এবং তাদের মরামর্শ দিয়ে আসছে। বর্তমানে যে ঘাস খেয়ে গরু মারা যায় সেখান থেকে ঘাস ও মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন