ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত, সেই সাথে ইসির পক্ষ থেকে পূর্বঘোষিত ইলেকশন শিডিউলে পরিবর্তন এনে ভোট গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করার পর উত্তরের রাজনীতির অঙ্গনে নতুন করে ভোটের হিসাব নিকাশ শুরু হয়েছে। সরকারি দলের কুটচালে এবং ২০ দলের বড় শরিক জামায়াতের প্ররোচনায় ১৪ সালের মত আবারও নির্বাচন বর্জন করবে মনে করে যারা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন লাভের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার খবরে থমকে গেছেন বলে আওয়ামীলীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ৭২টি সংসদীয় আসনের বেশির ভাগই ’৭৯, ’৯১ , ’৯৬ এবং ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ছিল বিএনপির অনুকুলে। সেই সাথে ’৯০-এর গণঅভ্যূত্থানে জাতীয় পার্টি ক্ষমতাচ্যুৎ হবার পর বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে বেড়ে যায় জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা এখনও অটুট থাকলেও বৃহত্তর রংপুরের কিছু এলাকায় জামায়াতেরও শক্ত ভিত্তি বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে । তবে ২০০৮ এ ১/১১ পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অবস্থা একেবারে লেজেগোবরে হয়ে পড়েছিল। তারপরও বিএনপি এবং জামায়াতের মিলিত শক্তি এক হয়ে ১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বর্জন না করলে এই এলাকায় বিএনপির ল্যান্ডস্লাইড ভিক্টরি হতো বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। এই প্রেক্ষাপটে বগুড়ায় বসবাসকারী কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের প্রবীন শ্রমিকনেতা মনসুর হোসেন মনে করেন, আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির যেসব নেতা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে এমপি হয়ে কর্মীদের সাথে দীর্ঘদিন দুরত্ব বজায় রেখেছিলেন আসন্ন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে এবার তাদের চরম খেসারত দিতে হবে।
বগুড়া জাতীয় পার্টির একাধিক তরুণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, আওয়ামীলীগ এবার শরিক জাতীয় পার্টি ও জাসদকে বগুড়ার ৭টি সংসদীয় আসনই ছেড়ে দিয়ে রংপুরের কিছু নিশ্চিত বিজয়ী হবার মত আসন এরশাদের কাছে চাওয়ার কৌশল নিয়েছে। তবে তারাও তাদের পার্টি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়ে আওয়ামীলীগের কৌশল সম্পর্কে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। এই সূত্রটি আরও জানায় , কিছুদিন বগুড়ায় অনুষ্ঠিত উল্টরাঞ্চলের ১৬ জেলা ও এই এলাকার সব উপজেলার ডেলিগেটদের এক সভায় প্রায় ৮০ জন বক্তার শতভাগ তাদের পার্টি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করে সরকারি দলের অনাদর ও অবহেলার প্রাকটিক্যাল তথ্য তুলে ধরে বলেন, স্যার দয়া করে আওয়ামীলীগের সাথে আর ঐক্য করবেননা । এই এলাকার মানুষ এটা পছন্দ করবেনা । তারা আরও বলেন , বরং জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলে বৃহত্তর রংপুরে ভালো করবে ।
এদিকে সম্প্রতি বিএনপি সংষ্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত নেতাদের মধ্যে নওগাঁর সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, বগুড়ার সাবেক এমপি জিএম সিরাজ, কাজী রফিক ও ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ায় বগুড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও সার্বিকভাবে এই ঘটনা গোটা উত্তরাঞ্চলের নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস ও সাহস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনীতি বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের মতে এবার যেহেতু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে সেহেতু সার্বিকভাবেই বিএনপি তথা ২০ দলীয় ঐক্যজোটের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের ভাল ফলাফল করার সমূহ সম্ভাবনাই দেখছেন তারা। অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্তরাঞ্চলের ৭২টি সংসদীয় আসনের অধিকাংশ যারা পাবে তারাই আগামীর সরকার গঠন করবে, এই অভিমতের কথা বলেছেন বগুড়া সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহমুদ শরীফ মিঠু। বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চান বলেছেন, উত্তরের বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিএনপির যে একক গণভিত্তি রয়েছে, তার সাথে এবার নতুন ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতাদের জাতীয় পর্যায়ের পরিচিতি ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাদের গ্রহণযোগ্যতার শক্তি একত্রিত হয়ে এই অঞ্চলে ভোট বিপ্লবের স্বপ্নই দেখেছেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন