শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কাজিপুরে ঝুট কম্বল শিল্প সংকটে : কাঁচামালের অভাবে বিপাকে ২১ হাজার মালিক-শ্রমিক

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টিএম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ‘ঝুট কম্বল’ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২১ হাজার মালিক-শ্রমিক বিপাকে পড়েছেন। ঝুট কাপড়ের অভাবে কাজিপুর উপজেলার শিমুলদাইড়, সাতকয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, পাইকরতরী, ঢেকুরিয়া, বিলচতল, বেলতৈল, চকপাড়া, চালিতাডাঙ্গা, বড়শীভাঙ্গা, রৌহাবাড়ী, হরিনাথপুর গ্রামের শত শত নারী শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় মহাজনরা জানান, চলতি বছর প্রতিবেশী দেশ ভারত তুলা উৎপাদনের জন্য ওইসব ঝুট ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্ট থেকে এজেন্টের ম্যাধ্যমে সরাসরি আমদানি করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হযেছে। গত দুই বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ দাম দিয়েও ঢাকার বাজারে বেশিরভাগ মহাজনই কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পেরে নিরাশ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন। যমুনা নদীর ভাঙন ও বন্যাকবলিত কাজিপুরের তিনটি ইউনিয়নের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ২১ হাজার নারী শ্রমিক এ শিল্পে কাজ করে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ টাকা উপার্জন করেন। প্রায় দুই যুগ আগে প্রথম ওই অঞ্চলে ঝুট কম্বল শিল্পের সূচনা হয়। ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টে চাকরি করা এসব অঞ্চলের বেশ কযেক শ্রমিক ছুটিতে বাড়ী আসার সময় হাতে করে কিছু পরিত্যক্ত ঝুট কাপড় নিয়ে এসে তাদের পরিবারের নারীদের হাতে তুলে দেন। নারীরা ছোট ছোট টুকরো করে সেগুলোকে সেলাই মেশিনের সাহায্যে জোড়া দিয়ে কম্বল আকৃতি তৈরি করে নিজেদের বাড়ীতেই প্রথম ব্যবহার শুরু করেন। এগুলো বেশ গরম হওয়ায় ধীরে ধীরে এ শিল্পের প্রসার ঘটে। পরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে এটি বাণিজ্যিক রূপ পায়। আর তখন থেকেই আশপাশের লোজন নিজেরাই আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে সংবাদ নিয়ে ঢাকা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন শুরু করেন। প্রথমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি শুরু এ কম্বল। ধীরে ধীরে মধ্যবিত্তের কাছেও পছন্দনীয় হয়ে ওঠে এটি। মধ্যবিত্তরা প্রথমে তাদের বাড়ীর কাজের লোকজনের জন্য কেনা শুরু করলেও পরে নিজেরাই ব্যবহার শুরু করেন। বর্তমানে একটি ৪ হাত দৈর্ঘ্য ও ৫ হাত প্রস্থের লেপ বানাতে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা লাগে। অথচ সেখানে একই সাইজের একটি ঝুট কম্বল ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। গার্মেন্টের ব্লেজার তৈরির পরিত্যক্ত ঝুট জোড়া দিয়ে তৈরি ঝুট কম্বল একদিকে যেমন হালকা, অন্যদিকে প্রচগু শীতেও বেশ গরম ও আরামদায়ক। ঝুট কাপড়ে বেশি জোড়া পড়লে প্রায় ৫ কেজি ঝুটের প্রয়োজন পড়ে একটি কম্বল তৈরিতে। না হলে ৪ কেজি হলেই চলে। গত বছর কেজি ১০-১২ টাকায় কেনা যেত। কিন্তু বর্তমানে ১৮-২০ টাকা কেজি দিয়েও চাহিদা অনুপাতে কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দাম বাড়লেও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। অর্থাৎ গরমের সময় মজুরি ১৫ টাকা এবং শীতের সময় ২০ টাকা। নারী শ্রমিকরা তাদের গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওইসব কম্বল সেলাই করেন। ছালাভরা গ্রামের নারী শ্রমিক রোকেয়া মায়া, পারভীন, চায়নাসহ শতাধিক নারী শ্রমিক আক্ষেপ করে জানান, গত বছর এ সময় দম ফেলার সময় ছিল না, অথচ এ বছর কাজই নেই। কিন্তু মহাজনরা এবার ঝুট দিতে পারছেন না। কাজ না থাকায় অনেকেই মেশিন বিক্রি করে দিয়েছেন। এদিকে একই গ্রামের মহাজন আমজাদ হোসেন, আসাদুল আলম মুক্তি ও আব্দুর রশিদ গত রোববার জানান, অল্পদিনেই ঝুট কম্বলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক চাহিদাও সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা থেকে আগে ঝুট কম্বলের কাঁচামাল ঝুট কাপড় প্রতি কেজি ১০-১২ টাকায় কেনা হতো। অথচ এখন তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ঝুট কাপড় ভারতে যাওয়ার কারণে এখন বেশি টাকা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন