কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছেন দেশের প্রধান দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ডজন খানেক প্রভাবশালী নেতা। বয়সের ভারে ক্লান্ত, অসুস্থ্য বা সুবিধাবাদীদের কৌশল বা চাটুকারীতার ভিড়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে দূরে সরে সারাজীবন রাজনীতির মাঠে থাকা এসব নেতৃবৃন্দের বাজছে বিদায়ঘণ্টা । এদের কেউ কেউ কৌশলী বা সুবিধাভোগীদের কাছে হেরে গেছে, কেউবা আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেষবারের মতো দলের মনোনয়ন পেতে চালাচ্ছেন গণসংযোগ। বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকা এবং বিভিন্ন হামলা-মামলার কারণে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়লেও একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাদের কেউ কেউ মাঠে রয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের এমপিদের কেউ কেউ বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। কারও বয়স হয়েছে। কেউ কেউ দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতির অভিযোগ। এর বাইরে দ্বন্ধ বা গ্রুপিং এর কারণে কেউ কেউ কোনঠাসা অবস্থায়। এসব কারণে বর্তমান সংসদ বা স্থানীয় প্রভাবশালী অনেক নেতা মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছে।
এরকম নানা সমীকরণে কুমিল্লার আ.লীগ নেতারা হচ্ছেন, অধ্যক্ষ এড আফজল খান, অধ্যক্ষ আলী আশ্রাফ, মো. জেনারেল অবঃ সুবিদ আলী ভূইয়া, এবিএম গোলাম মোস্তফা, অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ প্রমূখ।
কুমিল্লার আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা অধ্যক্ষ আফজান খান। তার মূল নির্বাচনী আসন কুমিল্লা-৬। এক সময় পুরো কুমিল্লা দাবিয়ে বেড়ানো ছাড়াও সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্ধিতা থাকলেও বর্তমান বয়সের কারণে তিনি মনোনয়ন দৌঁড়ে পিছিয়ে। তবে তার বড় ছেলে এফবিসিসিআই পরিচালক ও কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ’র সভাপতি ইমরান খান আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। কুমিল্লার-৪ আসনের আওয়ামী লীগের দেবিদ্বারে সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ফখরুল ইসলাম মুন্সীও অসুস্থতার কারণে তাকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি মাঠে দেখা যায় না। তার ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল মুন্সী আওয়ামী লীগ দল থেকে মনোনয়ন দৌঁড়ে রয়েছেন। দেবিদ্বারের অপর প্রবীণ নেতা সাবেক মন্ত্রী এবিএম গোলাম মোস্তফাও আত্তয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। কুমিল্লা-২ হোমনা-তিতাস সংসদীয় আসন থেকে মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাপ দিচ্ছেন অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ। মুরাদনগরের আ.লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকার মনোনয়ন পেতে হানা দেয়ায় তিনিও জীবনের শেষ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া। এছাড়া রয়েছে এই আসন থেকে সেলিমা আহমাদ মেরী।
বিএনপির কুমিল্লা-৫ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসন থেকে একাধিকবার বিজয়ী সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মো. ইউনুছ, কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল আনোয়ারুল আজীম, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ-নাঙ্গলকোট থেকে মনিরুল হক চৌধুরী, মুরাদনগরের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া রয়েছেন মনোনয়নের প্রত্যাশায়।
জানা যায়, দেবিদ্বার থেকে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম মুন্সী দীর্ঘদিন দেবিদ্বারের বাহিরে থাকলেও বর্তমানে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। মাঝেমধ্যে এলাকায় যাচ্ছেন মঞ্জুরুল মুন্সীর স্ত্রী। মুরাদনগর আসন থেকে বার বার নির্বাচিত সাবেক মন্ত্রী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ বিদেশে রয়েছেন। কুমিল্লা-৫ বুড়িচং আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি অধ্যক্ষ ইউনুসের স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার পর অধ্যক্ষ ইউনুস এখন নেই রাজনৈতিক মাঠে। কুমিল্লা-৭ আসনের অধ্যাপক আলী আশরাফ বিগত দিনে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়ে এমপি হয়ে ১৯৯৬ সালে ডেপুটি স্পীকার দায়িত্বও পালন করলেও নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
প্রবীন নেতা মনিরুল হক চৌধুরী বিএনপি থেকে মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন। হোমনার আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পপতি অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ নৌকার মনোনয়ন পেতে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কুমিল্লা-৮ আসনের বরুড়ার জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিলন গংসযোগে ব্যস্ত। লাকসামের আনোয়ারুল আজীম মনোনয়নের দৌঁড়ে আছেন। তবে এইসব প্রবীন নেতাদের একই বক্তব্য বয়স হয়েছে, তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নমিনেশন পেলে জীবনের হয়তো শেষ নির্বাচন করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন