এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে রক্ষিত আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ৫০০ এম এম ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন র্দীঘ ৬ বছরেও চালু করতে না পারায় অবষেশে নষ্ট হয়ে অলস পড়ে রয়েছে কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে। ২০১০ সালের মার্চ মাসে সরকারের দেয়া এত দামি এ এক্স-রে মেশিনটি বিভিন্ন জটিলতা ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় চোখের দেখায় নষ্ট হলেও এ নিয়ে যেন কারো মাথা ব্যথা নেই। সরকার জনগণের দোর গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয়ে কোটি টাকার ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বরদ্দ দিলেও এর সুফল ভোগ করতে পারেনি বোয়ালখালীবাসী। ফলে নিয়মের চেয়ে বেশি ডাক্তার, পর্যাপ্ত পরিমাণ বরদ্দ, সুদৃশ্য ভবন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত এ হাসপাতাল কমপ্লেক্স বোয়ালখালীবাসীর তেমন কোন কাজে আসছে না। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩ দশক পূর্বে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেয়া এক্স-রে মেশিনটি ২০০৭ সালের শেষের দিকে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এর প্রায় ৩ বছর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের মার্চে আরেকটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বোয়ালখালী হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ দেয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও টেকনিশিয়ান বাবুল জটিলতার সূত্র ধরে দীর্ঘদিন চালু করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত নষ্টের তালিকায় পড়ে গেল ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার আধুনিক এক্স-রে মেশিনটি। ফলে পেয়েও এর সুফল ভোগ করতে পারেনি বোয়ালখালীর দরিদ্র জনগণ। সূত্রে আরো জানা যায়, নতুন এক্স-রে মেশিন বোয়ালখালী হাসপাতালে বরাদ্দ দেয়া থেকে শুরু হয় তৎকালীন এক্স-রে টেকনেশিয়ান (রেডিওগ্রাফি) মো. বাবুল মিয়াকে নিয়েই এ জটিলতা। পুরোনো এক্স-রে মেশিন নষ্ট হয়ে যওয়ার সুবাধে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট বাবুল মিয়াকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে প্রেষণে নিয়ে যায়। সেখানে কাজ করলেও ৩-৪ বছর ধরে তিনি বেতন তুলেছেন বোয়ালখালী থেকে। এরপর প্রেষণে থাকা টেকনেশিয়ান বাবুল মিয়াকে তার কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার জন্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিঠি লিখেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত এক্স-রে টেকনেশিয়ান আবুল কালাম প্রধানসহ বোয়ালখালীতে পর পর আরো ৩/৪ জন টেকনেশিয়ানকে পদায়ন করা হলেও তারা বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে এখানে না এসে ঢাকা ও অন্যান্য উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে টেকনেশিয়ান জটিলতায় পড়ে শেষতক একজন টেকনিশিয়ান আসলেও ততদিনেই সরকারের দেয়া কোটি টাকার এক্স-রে মেশিনটিই নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে সরকার-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও টেকনেশিয়ান জটিলতায় পড়ে বোয়ালখালীবাসীর কপালে আর জুটলো না ডিজিটাল এক্স-রে সেবা। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে এক্স-রে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বোয়ালখালী উপজেলার সাধারণ মানুষ। র্দীঘদিন ধরে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন ব্যবহার না হওয়ার কারণে সাধারণ রোগীরা বিভিন্ন রোগ নিরূপনী কেন্দ্র থেকে এক্স-রে সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় প্রাইভেট প্যাথলজীগুলোতে। একটি জটিলতাকে পুঁজি করে স্থানীয় প্যাথলজি ব্যবসায়ীরা হাসপাতালের ডাক্তার ও প্রাইভেট ডাক্তারদের সাথে চুক্তি করে অধিক হারে টাকা আদায় করে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে গ্রামের হতদরিদ্র রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে এ সব প্রতারকদের কাছ থেকে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্যাথলজীতে নেই মানসম্মত পরিবেশ, উপযুক্ত জায়গা ও অভিজ্ঞ নিরীক্ষক। এখানকার প্যাথলজীগুলোতে চলে অনভিজ্ঞ কর্মী দিয়ে রোগ নিরূপনী যন্ত্র ব্যবহার ও নাম সর্বস্ব ডাক্তারের ভুয়া শীল-স্বাক্ষর ব্যবহার করে রির্পোট প্রদানসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে অনেকের। এদিকে গত বছর ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা হাসপাতাল কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির ৪র্থ সভা চলাকালীন সময়ে মহাজোট সরকারের শরীক দল জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দ দেয়া কোটি টাকা মূল্যের একটি ৫০০এম এম ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ৫বছরেও চালু করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ ও কর্তৃপক্ষকে তিরস্কার করে বক্তব্যের সময় ১৫ দিনের মধ্যে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন সচল করে জন সেবায় উম্মুক্ত করার নির্দেশনা দেন। এ নির্দেশের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শুধু মাত্র চিটি লিখে জানিয়েই দায় সারেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করার নিদের্শনা থাকলেও এ যাবৎ (১বছরের মধ্যে) কোন ধরনের আলোচনা সভার আয়োজন করতে পারেনি এ যাবৎ। ফলে বোয়ালখালী উপজেলা হাসপাতাল কমপ্লেক্সের চিকিৎসা ও একাডেমিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে হ-জ-ব-র-ল অবস্থা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। এব্যাপারে বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মোতাহার হোসেন বলেন, এখানে আমার পদায়নের পর থেকে মূল্যবান ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি সচল করতে একাধিকবার সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এর বাইরে আমার আর কিছুই করার নেই। বর্তমানে এক্স-রে টেকনিশিয়ান থাকলেও তাকে অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এ হাসপাতালে সব অবকাঠামো থাকার পরও এখানকার মানুষ এক্স-রে সেবা থেকে বঞ্চিত হবে সেটা মেনে নেয়া যায় না বলেও স্বীকার করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন