মোহাম্মদ ইয়ামিন খান
সমগ্র বিশ্বসহ আমাদের এই দেশে সামাজিক অপরাধ, অন্যায়, অশান্তি দিন দিন যেন বৃদ্ধি পেতে চলেছে। প্রতিদিনের পত্রিকার পাতা খুললেই যে নৃশংস হৃদয়বিদারী চিত্র চোখে ভেসে আসে তা কোনো মানবসমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। এ যেন নরকতুল্য আবাসভূমি, যে ভূমিতে অনুষ্ঠিত প্রতিটি অমানবিক ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে কথিত মানবসভ্যতাকে, মানুষের মিথ্যা অহঙ্কারকে, তার অস্তিত্বকে। মানুষের বিবেকহীন নির্লজ্জ আসুরিক কর্মকা- আজ পশুকেও হার মানিয়েছে। এমনকি নিষ্পাপ শিশুরাও এই মানুষরূপী শয়তানদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। একদিক দিয়ে মানুষ যেমন বিজ্ঞানের শিখরে উঠছে অন্যদিক দিয়ে ঠিক তেমনিভাবে সে সবরকমের অন্যায়ের চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছেছে।
মানুষের আত্মা আজ ত্রাহী সুরে চিৎকার করছে কেন? আজ পৃথিবীর চারিদিক দিয়ে আর্ত মানুষের হাহাকার উঠছে- শান্তি চাই, শান্তি চাই। দুর্বলের উপরে সবলের অত্যাচারে, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনায়, শোষণে, শাসিতের উপর শাসকের অবিচারে, ন্যায়ের উপর অন্যায়ের বিজয়ে, সরলের উপর ধূর্তের বঞ্চনায় পৃথিবী আজ বাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। নিরপরাধ ও শিশুর রক্তে আজ পৃথিবীর মাটি ভেজা। এই অবস্থা বিনা কারণে হয়নি। অন্য কোন গ্রহ থেকে কেউ এসে এই অবস্থার সৃষ্টি করেনি। মানুষ নিজেই এই অবস্থার জন্য দায়ী। সম্প্রতি চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি তারই স্বাক্ষর বহন করে।
এক মাস আগে কুমিল্লা সেনানিবাসে মেধাবী ছাত্রী তনুকে হত্যা এবং কয়েকদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম সিদ্দিকীকে তার নিজ বাসভবনের সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের কারারক্ষী রুস্তম আলীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা এবং একইদিনে রাজধানীর কলাবাগানে লেকসার্কাসে অবস্থিত সাততলা একটি বাসভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা এবং সমকামীদের অধিকার আদায়ের পত্রিকা ‘রূপবান’র সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা দীপু মনির খালাতো ভাই জুলহাজ মান্নান এবং তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী তনয় মজুমদারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। যেহেতু জুলহাজ মান্নান সমকামীদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন এবং রূপবান পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন এজন্য চাপাতিবাহিনী তাকে হত্যা করেছে বলে মনে করা হয়। এই পৈশাচিক কর্মকা-ের শেষ কোথায়? এই পরিণতি চিন্তা করে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ আজ দিশেহারা।
মানুষের চারিত্রিক অবনতি ও অবক্ষয় এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, পুলিশি পাহারা দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। আজ মানুষের শান্তির লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে আইন কঠোর থেকে কঠোরতর করা হচ্ছে। যে অপরাধের সাজা ছিল ১০ বছর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে যাবজ্জীবন, যে অপরাধের সাজা ছিল যাবজ্জীবন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে মৃত্যুদ-। তারপরেও বাস্তবতা হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়েও অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। রাস্তায় কোনো অপরাধ হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা দমন করে, অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করে কিন্তু ঘরের মধ্যে স্বামী স্ত্রীকে হত্যা করছে, মেয়ে বাবা-মাকে হত্যা করছে, ভাই ভাইকে হত্যা করছে, পিতা-মাতা সন্তানকে হত্যা করছে এসব দেখেও আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপর দোষারোপ করি।
আজ আমরা আমাদের জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রত্যাখ্যান করে পাশ্চাত্য সভ্যতার সৃষ্ট নানা তন্ত্রমন্ত্র মেনে নেওয়ার কারণেই এসব ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এই আসন্ন সঙ্কট এবং সামাজিক অপরাধ দূরীকরণের একটিমাত্র পথ আছে আর তা হলো মুসলিমসহ সমস্ত মানবজাতিকে আল্লাহর তওহীদ তথা কালেমার পক্ষে সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্য ও মিথ্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন