বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চলছে মাটি কাটার মহোৎসব

মুরাদনগর (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

কুমিল্লার মুরাদনগরে ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। বিলীন হতে চলছে উপজেলার ফসলি জমি। ২২ ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ড্রেজার প্রতিনিয়ত কৃষি ও সরকারি খাল-বিল থেকে মাটি কাটছে। ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। বিষয়টির ব্যাপারে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে মাঠে গেলে ব্যাবসায়ীরা ড্রেজার চালানো কয়েক ঘন্টা বন্ধ রাখলেও প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে পুনরায় শুরু করে অবৈধ ড্রেজিং। 

জানা যায়, উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ধনপতিখলা, কালারাইয়া, দীঘিরপাড়, বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের খামার গ্রাম, বিষ্ণপুর, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের ব্রা‏হ্মণ চাপিতলা, যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া, যাত্রাপুর, রঘুরামপুর, ভবানীপুর, টনকি ইউনিয়নের টনকি, বাইড়া, চাপিতলা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, চাপিতলা, পুস্করিনীর পাড়, শ্রীকাইল ইউনিয়নের রোয়াচালা ও সোনাকান্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হারে চলছে রমরমা ড্রেজার ব্যবসা। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষক দু:খের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা জানায়, খামার গ্রামের সৈকত কালারাইয়া মৌজায় ৪ বিঘা জমি নিয়ে ড্রেজার বসিয়ে গভীর ভাবে মাটি কাটার কারণে তাদের ফসলি জমি গর্তে বিলীন হয়ে গেছে। কেউ ইচ্ছা করে জমি দিতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত ড্রেজার মালিকদের নিকট কমমূল্যে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বর্তমানে সে ধনপতিখোলা গ্রামের উত্তর মাঠে কৃষি জমিতে ড্রেজার চালাচ্ছে। আশে পাশের জমির মালিকগণ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ভূমি অফিসে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। অবৈধ ড্রেজারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। তিনি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, এ উপজেলায় মোট কৃষি জমি আছে ৫১ হাজার ২শত ৪ হেক্টর। চাষাবাদযোগ্য ২৪ হাজার ২৮ হেক্টর। এর মধ্যে দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিই বেশি। প্রায় সব ইউনিয়নেই চলছে ড্রেজার। কৃষকরা অভিযোগ করেন যে, তাদের কৃষিজমি ড্রেজিংয়ের কারণে ভেঙে যাচ্ছে। এক শ্রেনির অসাধু ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কারণে উপজেলার কৃষি জমি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জনপ্রতিনিধিদের সম্বন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হালিমা আক্তার বলেন, আমি সৈকতসহ আমার ৪টি মৌজায় যারা ড্রেজিং করছে তাদের প্রত্যেককে কয়েকবার করে বাধা দিয়ে আসছি। আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি কি করে অফিস করি দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইউএনও স্যারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, ড্রেজার বন্ধ করতে সহসাই স্যারের সাথে কথা বলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম বলেন, কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু ড্রেজার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ড্রেজার মালিকের কাছ থেকে মুচলেকা রাখা হয়েছে। বর্তমানে যেগুলো মাঠে চলছে সেসব ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে সহসাই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টির ব্যাপারে অভিযুক্ত অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী সৈকতের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেয়। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করেও উক্ত বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন