মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

উপ সম্পাদকীয়

মে দিবস যে বার্তা দিয়ে গেল

প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবদুল গফুর

গত রবিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের স্মারক দিবস হিসেবে মে দিবস পালিত হয়ে গেল। এ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, শ্রমিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা প্রভৃতি কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এসব কর্মসূচি যেসব আয়োজন করে রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে বহু দূরে অবস্থানকারী নানান সংস্থা, তেমনি আয়োজন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বহু সংগঠনও। ফলে এসব কর্মসূচিতে ভাষণ দান করেন এমন অনেক নেতা-নেত্রীও, যারা ইচ্ছা করলেই বঞ্চিত শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তন তথা ভাগ্য উন্নয়নকে শুধু ভাষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে রূপদান করতে পারেন। কিন্তু তেমন কাজ তাদের ঘুণাক্ষরেও করতে দেখা যায় না। এর কারণ কি? এর কারণ কি এই যে, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী মে দিবসে শ্রমিকদের বঞ্চনা ও দুর্দশা নিয়ে অশ্রু বিসর্জনের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হবে? একদিকে শ্রমিক সমাজের বঞ্চনা অন্যদিকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মহাক্ষমতাশালী নেতা-নেত্রীদের বঞ্চনাÑ কোন্্ দিকে যাবেন ক্ষমতাসীন নেতা-নেত্রীরা? নিজেদের বঞ্চনা তো আর মেনে নেয়া যায় না। সুতরাং চিরবঞ্চিত শ্রমিকদের বঞ্চিত থাকার মেয়াদ বর্ধিত হয় স্বাভাবিক নিয়মে।
সারা বিশ্বে মে দিবস পালনের এই তোড়জোড়ের সূত্রপাত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের উনিশ শতকের কিছু বিয়োগান্ত ঘটনার স্মরণে। শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কার্যদিবস, অনুকূল কর্ম পরিবেশ এবং ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করাতে মালিক পক্ষ তাদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়। প্রথম প্রথম শ্রমিকরা হটে গেলেও পরে তারা অন্যায়-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জান কবুল করে রুখে দাঁড়ায় এবং একপর্যায়ে বেশ কিছু পুলিশকেও তাদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়। এ জন্য একাধিক শ্রমিক নেতাকে অন্যায় বিচারে প্রাণদ- দেয়া হয়। বিশ্বের শ্রমিক সমাজ এরপর থেকে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ, শ্রমিকদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশ ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে প্রতি বছর পহেলা মে তারিখে মে দিবস পালন করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও মে দিবস পালিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এ দিন সরকারি-বেসরকারী অফিসে ছুটি থাকে। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বঞ্চনার অবসান এবং তাদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
আগেই বলেছি, এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন এমন সব ব্যক্তি ও সংগঠন যাদের অবস্থান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে বহু দূরে। আবার এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন এমন অনেক নেতা-নেত্রীও, যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার সুবাদে ইচ্ছা করলেই শ্রমিক সমাজের সর্বপ্রকার বঞ্চনার অবসান ঘটাতে পারেন। কিন্তু এমন সৌভাগ্য দেশের শ্রমিক সমাজের হয় না। কারণ রাষ্ট্র ও সমাজের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিকদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সুন্দর সুন্দর ভাষণ দেন, তা দেয়া একটা আনুষ্ঠানিকতা বা রেওয়াজ হয়ে গেছে বলেই। ফলে মে দিবস শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের সংগ্রামের ঐতিহাসিক স্মারক হিসেবে পালিত হলেও আন্তরিকতাহীন অনুষ্ঠানসর্বস্বতার কারণে সমাজে এর কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় না।
উনিশ শতকের প্রথম দিকে রাশিয়ায় লেনিন প্রমুখের নেতৃত্বে যে বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয় তাতে সর্বহারাদের একনায়কত্ব কায়েম করার ঘোষিত লক্ষ্যে বঞ্চিত শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস চালানো হয়। বিপ্লব সাময়িকভাবে সফলও হয়। কিন্তু ভুল দর্শনের ভিত্তিতে সে বিপ্লব পরিচালিত হওয়ার কারণে সাত দশকের মধ্যেই বিপ্লবের মাধ্যমে সৃষ্ট সমাজতন্ত্রী সমাজের পশ্চাৎযাত্রা শুরু হয় এবং পরবর্তীকালে রাশিয়ায় পুঁজিবাদী সমাজ পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর পর তার প্রভাবে পূর্ব ইউরোপে, চীন, উত্তর কোরিয়া ও পশ্চিম গোলার্ধের কিউবায় সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলেছিল। রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতনের পর প্রথমে পূর্ব ইউরোপ পরে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশেও সমাজতন্ত্রী মতনের ব্যর্থতার পালা শুরু হয়। যদিও এসব অনেক দেশেই একমাত্র শাসক দল হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টিই এখনো বহাল রয়েছে।
এসব দেশে সমাজতন্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণ সম্বন্ধে পর্যালোচনার প্রশ্ন আসে স্বাভাবিকভাবেই। সমাজতন্ত্রী ব্যবস্থার পেছনে মার্কসীয় জীবন দর্শন মোতাবেক প্রথমে বিপ্লবের মারফত পুঁজিবাদী সমাজ উৎখাত হয়ে সর্বহারাদের একনায়কত্ব তথা সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা এবং সর্বশেষে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার (উইদার) পাওয়ার কথা। রাশিয়ায় দেখা গেল রাষ্ট্র উবে যাওয়ার ফলে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠল। সমাজে সর্বহারাদের একনায়কত্বের নামে সর্বহারাদের নেতৃত্বের দাবিদার (একমাত্র বৈধ শাসক দল) কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। কমিউনিস্ট নেতাদের একনায়কসুলভ কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে ধূমায়িত এই ক্ষোভেই পরবর্তীকালে সেখানে গর্বাচেভের আমলে তার প্রবর্তিত গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রয়কার মাধ্যমে কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষোভ প্রকাশে সাহসী করে তুলে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রী শাসনের পতন অবশ্যম্ভাবী করে তুলল।
রাশিয়ায় কমিউনিস্ট ব্যবস্থার পতন থেকে যে শিক্ষা গ্রহণের রয়েছে তা হলো সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানুষের বিভিন্ন মৌলিক প্রয়োজন পূরণ যেমন অপরিহার্য, তেমনি মানুষের অধিকারসমূহও বেশি দিন অপূরিত রাখা সম্ভব নয়। রাশিয়া সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি মৌলিক মানবীয় প্রয়োজন পূরণে সফল হওয়া সত্ত্বেও সে দেশে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা মানবাধিকার অস্বীকৃত থাকাতে ওই ব্যবস্থায়। কোনো স্থায়ী স্থিতিশীলতা গড়ে উঠতে পারছিল না। ফলে গর্বাচেভের আমলে মতামত প্রকাশের ব্যাপারে সামান্য সুযোগ সৃষ্টির ফলেই রাশিয়ায় জনগণের বহু দিনের সঞ্চিত ক্ষোভ একযোগে প্রকাশের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় তার ফলে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রী ব্যবস্থার দ্রুত পতন অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে।
এর পাশাপাশি কমিউনিস্ট শাসনামলে রাশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় কার্যকলাপ নিরুৎসাহিত থাকার ফলেও সমাজতন্ত্রী ব্যবস্থার দ্রুত পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। ধর্মপ্রাণ মানুষ পার্থিব অনেক চাহিদা না মিটিয়ে ত্যাগ স্বীকার করে প্রশান্তি লাভ করে পরকালে এর প্রতিদান পাওয়ার আশায়। কিন্তু মার্কসীয় জীবন দর্শনে ধর্ম বা পরকালের কোনো গুরুত্বই দেয়া হতো না। ফলে পার্থিব জীবনে সুযোগ পাওয়ার পর সমাজতন্ত্রী সমাজে তো কারো আত্মত্যাগের কোনো প্রশ্নই উঠত না। রাসিয়ায় সমাজতন্ত্রী সমাজের দ্রুত পতনের এটাও অন্যতম কারণ।
এবার ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা সম্পর্কে কিছু কথা। ইসলামে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি বিশ্বাস করা হয় সম্পদে সর্বাত্মক মালিকানা একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের আওতায় আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের শর্তযুক্ত অধিকার যেমন মানুষ ভোগ করে তেমনি বৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বৈধ আওতার মধ্যে ভোগাধিকার মানুষের রয়েছে। সম্পদে অর্জনে যেসব পন্থা ইসলাম স্বীকৃতি দেয় তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শ্রমের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন। রসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, আল কাছেবো হাবীবুল্লাহ অর্থাৎ দৈহিক শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনকারী আল্লাহর বন্ধু। সে নিরিখে আমরা বর্তমান বিশ্বের শ্রমিক সমাজের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি।
রসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমলে বর্তমান যুগের মতো বৃহৎ শিল্প-কারখানা ছিল না। তবে বর্তমান যুগের মতো কিন্তু ছোটখাটো মালিক-শ্রমিক ছিল। অধিকন্তু আগের যুগের ক্রীতদাস প্রথার ধারাবাহিকতা তখনো বিদ্যমান ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) ক্রীতদাস প্রথা সরাসরি বিলুপ্ত ঘোষণা করেননি। কিন্তু তিনি ক্রীতদাস প্রথার উৎস ও কুপরিনিতির ওপর এমন কঠিন আঘাত করেন যার ফলে এর চেহারাই সম্পূর্ণ বদলে যায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ক্রীতদাস প্রথার প্রধান উৎস ছিল সুদ প্রথা। গ্রিক ও রোমান সভ্যতার আমলে ধনীদের নিকট থেকে দরিদ্ররা চড়া সুদে ঋণ নিত। এ ঋণ যারা যথাসময়ে শোধ করতে না পারত একপর্যায়ে সেই ঋণগ্রহীতার ঋণদাতার কাছে নিজেদের বিক্রিীকরে দিয়ে ক্রীতদাসে পরিণত হতো। ইসলাম সুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়ে ক্রীতদাস প্রথার প্রধান উৎসমূলই বন্ধ করে দেয়। প্রাচীনকালে একবার যে কারো ক্রীতদাস হতো তার জীবনের সর্বস্ব মালিক হয়ে যেত সংশ্লিষ্ট মালিক। সে যা হুকুম দেবে তা-ই তাকে পালন করতে হতো, তাতে তার যত কষ্টই হোক। রসূলুল্লাহ (সা.) এমনিতে দাস মুক্ত করে দেয়াকে পুণ্যের কাজ বলেছেন। তিনি আরও ঘোষণা করেন, এরা তোমাদের কারো গোলাম নয়, তারা তোমাদের কাজে সাহায্যকারী ভাই। তুমি যা খাবে তাদের সে রকম খাবার দেবে। তুমি যে ধরনের কাপড় পরবে তাদেরও পরিধানের জন্য সেরকম বস্ত্র দেবে। তুমি তাদের কাজ দেবে তাদের সাধ্যের মধ্যে। যদি এমন কাজ দাও যা তাদের সাধ্যের বাইরে তা হলে সে কাজে তুমি তাদের সাহায্য করবে। যদি এসবে তোমার না পোষায় তাহলে তাদের মুক্তি দিয়ে দেবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমের মর্যাদা খুব বেশি। হযরত মুহাম্মদ (সা.) মেষ চরাতেন এটা সবারই জানা। ইসলামের অনেক নবী-রসূলও বিভিন্ন রকম শ্রমে নিয়োজিত ছিলেন। ইসলাম ভিক্ষা করাকে নিরুৎসাহিত করে এবং শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করে স্বাবলম্বী হতে মানুষকে উৎসাহিত করে। একবার এক দরিদ্র ব্যক্তি রসূল (সা.)-এর কাছে এসে কিছু সাহায্য প্রার্থী হয়। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাড়িতে এমন কিছু আছে যা এই মুহূর্তে তোমার কাজে লাগছে না। সে একখানি কম্বলের কথা বলল। কম্বলখানি আনা হলে তিনি উপস্থিতদের মধ্যে কে কম্বল কিনবে ঘোষণা দিলেন। একজন দুই দিরহাম দিয়ে ওটা কিনলেন। তিনি এক দিরহাম দিয়ে সেদিনের মতো খাবার ব্যবস্থা করতে এবং অন্য এক দিরহাম দিয়ে কুঠার কিনে জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে জীবিকা অর্জন করতে পরামর্শ দিলেন। এভাবে সে ব্যক্তি অল্প দিনের মধ্যেই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।
ইসলামী জীবন দর্শনের মূল ভিত্তি তৌহিদ তথা ¯্রষ্টার একত্বে বিশ্বাস। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল এই তৌহিদের বাণী প্রচার করে গেছেন। এই তৌহিদের আদর্শ মোতাবেক সব মানুষের ¯্রষ্টা আল্লাহ। আর আল্লাহ সব মানুষের ¯্রষ্টা বলে তার সৃষ্ট মানুষে মানুষে বৈষম্য করা যাবে না। সব মানুষ একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ। বর্ণ, ভাষা, দেশ বা পেশার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে যারা বৈষম্য সৃষ্টি করে তারা ইসলামের শত্রু। সেই নিরিখে মালিক-শ্রমিক ভেদাভেদ থাকার কোনো সঙ্গত কারণ নেই। শ্রমিক তার কাজ বিশ্বস্ততার সাথে সম্পন্ন করবে। মালিক তার কাজের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিয়মিতভাবে প্রদান করবে এটাই ইসলামের বিধান।
ইসলাম মানুষের জন্য যেসব কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা প্রধানত দুই ধরনের। (এক) হক্কুুল্লাহ (আল্লাহর হক) যেগুলোর দ্বারা মানুষের আত্মিক উন্নতি সাধিত হয়। (দুই) হক্কুল এবাদ (বান্দার হক) এর মাধ্যমে আমরা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের ইসলাম প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করি। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা আমাদের এই হক্কুল এবাদ পর্যায়ের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। এসব দায়িত্ব দুনিয়াতে পালন করে না গেলে শুধু এর কারণেই আমাদের বেহেশতে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
বর্তমান বিশ্বে মালিক শ্রমিকের সম্পর্ক শুধু এক-এক পক্ষের লাভালাভের দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হয়। এটা অবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির ফসল। পার্থিব জীবনে মানুষের সব কাজের বিচার যেহেতু পরকালে অবশ্যম্ভাবী তা মালিক-শ্রমিক সবার ক্ষেত্রেই নিজ নিজ দায়িত্ব কে কতটুকু পালন করল, পরকালে তার জবাবদিহিতা অবশ্যম্ভাবী। ইসলামের এই বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারলে আধুনিক বিশ্বে মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের সব সমস্যা থেকে আমরা সহজেই মুক্তিলাভ করতে পারতাম। অবশ্য সে জন্য সুবিধাভোগী পক্ষ হিসেবে মালিক পক্ষকেই অগ্রণী ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের অধীনস্থ শ্রমিকরাও যে তাদের ভাই তা উপলব্ধি করতে হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন