‘পরানের বান্ধবরে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’সহ অসংখ্য বিখ্যাত গানের গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। প্রখ্যাত এই গুণী বাউল শিল্পী রোগে-দারিদ্র্যে বয়সের তুলনায় অনেকখানি বুড়িয়ে গেছে। চেহারা দেখে তাকে চিনতে এখন বেশ কষ্ট হয়। এ শিল্পী অসুস্থ হয়ে বর্তমানে হাসপাতালের ভর্তি রয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি সাভারের জামসিং এলাকার নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালের ৬২১ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার অসুস্থতার খবর শুনে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান ভক্ত ও শুভাকাঙ্খিরা।
এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফ হোসেন জানান, বর্তমানে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার শারিরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে তার ব্রেনে রক্ত চলাচলে সমস্যাসহ হার্টেও সমস্যা রয়েছে।
কাঙ্গালিণী সুফিয়ার মেয়ে পুষ্প খাতুন জানান, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ কাঙ্গালিনী। জীবিকার তাগিদেই অসুস্থ্য অবস্থায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতে যেতেন তিনি। অসুস্থ্য শরীর তাকে ঘরে আটকে রাখতে পারতো না। বছর কয়েক আগে দুর্ঘটনায় আহত হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হলেও পুরোপুরি সেরে উঠেননি তিনি। কিছুদিন পরপরই অসুস্থ্য হয়ে যান। স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধপত্র খেলেও পুরোপুরি সুস্থ্য ছিলেন না তিনি। রোগের সঙ্গে লড়তে লড়তে স্তব্ধ হয়ে যেতে বসেছে তার কণ্ঠ।
তিনি বলেন, সবশেষ মঙ্গলবার তিনি আরও বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে, পরে সাভার এনাম মেডিকেলে আনা হয়। পুস্প বলেন, মা ব্রেন ও হার্ট সমস্যা ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যায় ভুগছেন।
আর্থিক অবস্থা খারাপের কথা জানিয়ে পুষ্প খাতুন বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। হাসপাতালে ভর্তির পর ডাক্তাররা মায়ের নানা পরীক্ষা দিয়েছে। এগুলো করতে গিয়ে আমাদের রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেশবাসী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে, আমার মায়ের আরও উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো। তিনি তার সুচিকিৎসার জন্য দেশের বিত্তবানদের সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভারের জামসিং এলাকায় বসবাস করছেন কাঙ্গালিনী। মাঝে ধারদেনায় ডুবে গিয়েছিলেন। পরে বাড়ি বিক্রি করে দেনা শোধ করেছেন। এখন তিন শতাংশ জায়গা কিনে একটি টিনসেড ঘরে সুফিয়া, তার মেয়ে পুষ্প আর নাতনী থাকেন। তার স্বামী কুষ্টিয়ায় থাকলেও তার খোঁজখবর তেমন নেন না। শিল্পী গান গেয়ে যা আয় করেন তাতে কোনো রকমে তাদের দিন চলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন