আল আমিন মন্ডল, গাবতলী (বগুড়া) থেকে
স্ট্রবেরি এখন লাভজনক ফসল। শুধু স্ট্রবেরি চাষ করে বগুড়া গাবতলীর ৫ শতাধিক কৃষক তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্ট্রবেরি চাষ। বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করছেন কাগইলের দড়িপাড়া, তেলকুপি ও চককাগইল গ্রামের কৃষকরা। ফলে গ্রাম ৩টি এখন স্ট্রবেরি গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এ ছাড়াও উপজেলার নেপালতলী, সোনারায়, রামেশ্বরপুর, দক্ষিণপাড়া, নাড়–য়ামালায় কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষ করছে। জানা যায়, স্ট্রবেরি চাষ করে খুব সহজে লাভবান হয়েছেন কাগইল তেলকুপি গ্রামের কৃষক রেজাউল, খালেক, ভোলা, রফিকুল, রাশেদুল, মানিক, গোলাম মোস্তফা, রাজ্জাক, আজিজ, বিষু তরফদার, হাবিবুর, বিশ্বনাথসহ ৫ শতাধিক কৃষক। তারা বাজারে স্ট্রবেরি বিক্রি করে ইতিমধ্যে লাভবান হয়েছেন। দারিদ্র্যকে জয় করে এখন তাদের পরিবারে বইছে সুখের বাতাস। স্ট্রবেরি চাষ এখন অনেকের নিকট প্রধান আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেলকুপি গ্রামের প্রথম স্ট্রবেরি চাষি রেজাউল করিম জানান, আমি একজন সাধারণ কৃষক ছিলাম। ৮ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছি। অন্য ফসলের চেয়ে স্ট্রবেরি চাষ করে এখন আমি স্বাবলম্বী। আমার স্ট্রবেরি ক্ষেত দেখে কাগইলের তৈলকুপি ও চককাগইল গ্রাম এখন স্ট্রবেরি গ্রাম নামে পরিচিত হয়েছে। ৮ বিঘা জমিতে চারা লাগানো থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ টাকা। আয় হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। দুই গ্রামের প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করা হয়েছে। কৃষক রুহুল আমিন জানান, ৩ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছি। চারাগাছ, সার, নেট (জাল), কীটনাশক ঔষধ, শ্রমিকসহ ব্যয় হবে ১ লাখ টাকা। লাভ হবে ৫ লাখ টাকা। লাল টকটকে স্ট্রবেরি ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জাহিদ, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফুর রহমান। কৃষক মাঠস্কুল (এফটি) কৃষি প্রশিক্ষক কামরুজ্জামান লিটন। ক্ষেত দেখতে প্রতিদিন আসছেন দূরদূরান্ত থেকে হাজারো কৃষক। ৫ বিঘা জমি থেকে ১০ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন আদর্শ কৃষক আব্দুল খালেক। তিনি বিশাল স্ট্রবেরি খামার গড়ে তুলেছেন। স্ট্রবেরি ফল ছাড়াও চারাগাছ বিক্রি করে তারা বাড়তি আয় করছেন। তবে ফল চুরি ও পাখির হাত থেকে ফসল রক্ষায় পুরো ক্ষেত নেট (জাল) দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্ট্রবেরি চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন রেজাউল করিম, আব্দুল খালেক ও আনছার আলী ভোলা। বিশেষ করে ফ্যাসটিবল স্ট্রবেরি ও রবি-৩ স্বাদ ও গুণমানে সমৃদ্ধ। বাজারে চাহিদা বেশি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা ও কৃষকদের মাঝে স্ট্রবেরি চাষের প্রযুক্তিসহ তথ্য প্রদান করা হচ্ছে এমনটাই জানিয়েছেন গাবতলী উপজেলা কৃষি অফিসার আঃ জাঃ মুঃ আহসান শহীদ সরকার। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) গাবতলী শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ মাহমুদুল আলম জানান, স্ট্রবেরি চাষে কৃষকদের আগ্রহ থাকলে আবশ্যই ‘কৃষি ঋণ’ প্রদান করা হবে। রাকাব সবসময় কৃষি ও কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সারা বছর স্ট্রবেরি চাষ করা সম্ভব। তবে শীতকালীন সময়ে উৎপাদন ভালো হয়। ফলে দাম ভালো পাওয়া যায়। এ বছরের শুরু থেকে প্রতি কেজি স্ট্রবেরি বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ১টি গাছ দেড় কেজি পর্যন্ত ফল দেয়। ১ বিঘা জমিতে ৫ হাজার স্ট্রবেরি গাছ থেকে ৪ থেকে ৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভাব। স্ট্রবেরি চাষে ছত্রাকনাশক, পচারীসহ নানা রোগের কারণে কৃষকদের ক্ষেতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। সেপ্টেম্বর মাসে চারাগুলো অন্য জমিতে (মাদারচারা) লাগাতে হয়। এ ছাড়াও ১টি মাদার গাছ থেকে ২০টি চারাগাছ হয়। প্রতিটি চারা ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বৃষ্টি দুর্যোগ, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে ফল পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ বিষয়ে নজর রাখার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিলেন গাবতলী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হক ম-ল। তিনি আরো জানান, এ বছর স্ট্রবেরি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে স্ট্রবেরি চাষে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন। পরিদর্শনকালে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহেদুর রহমান জাহিদ জানান, তেলকুপি গ্রামে ব্যাপকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করা হয়েছে। আগামীদিনে স্ট্রবেরি চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের তথ্য প্রদান ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩৫ একর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন