শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

হরিণাকুন্ড ও সাটুরিয়ায় আ.লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ৪৮

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অভ্যন্তরীণ ডেস্ক
হরিণাকু- ও সাটুরিয়ায় আ.লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ১ জন ও আহত হয়েছে ৪৮। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহের হরিণাকু- উপজেলার ফলসি গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের সময় দিদার হোসেন ম-ল (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হন। নিহত দিদার ম-ল ফলসি গ্রামের জলিল ম-লের ছেলে। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুর রহমানের সমর্থক ছিলেন। আহতদের মধ্যে ভুটার, মোলায়েম ও টিটোর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমান ও বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ভুটার, মোলায়েম, জমির, শাহিদ, টিটো, হাফিজুর, আহসান, রবিউল, আশিক, ইন্তাদুল, তারাচাঁদ, রইচ উদ্দীন, আতিয়ার রহমান, মিঠু, রেনজার হোসেন, নবী উদ্দীন, সোলায়মান, রেন্টু, আশিকুল, আলম, পিকুল, রায়হান, মতিয়ার রহমান, ওহিদুল, মালেক, রায়হান (২), সোনা মিয়া, রফি উদ্দীন সরদার, লাল্টু মিয়া, রমজান আলী ও রিপনসহ ৩০ জনকে হরিণাকু- হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ফজলুর রহমান অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমানের সমর্থকরা কয়েক দিন ধরে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছিল। বুধবার রাতে ফলসি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে তারা ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করতে থাকে। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তার (চশমা প্রতীক) সমর্থকরা প্রতিবাদ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে তার সমর্থক দিদার ম-লকে মারধর করলে সংঘর্ষস্থলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমান অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষ ফজলুর লোকজন তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তার অন্তত ৩০ জন সমর্থক জখম হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দুই পক্ষ ঢাল ভেলা, সড়কি, দেশি তৈরি অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ দেখে নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। দেড় ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। এ সময় ফলসি গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মানুষ ভয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। হরিণাকু- থানার ওসি মাহতাব উদ্দীন জানান, ফলসি গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সংঘর্ষের সময় দিদার নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারপরও মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। বর্তমানে ফলসি গ্রামে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। হরিণাকু- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন জানান, সংঘর্ষের সময় একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে দিদারের পরিবার এই দুই সরকারি কর্মকর্তার দাবি নাকচ করে বলেছেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে হরিণাকু-র ফলসি গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর গ্রামটি এখন পুরুষশূন্য। মহিলা ও শিশুরাও নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। হরিণাকু- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. লিটন গাঙ্গুলী জানান, দিদার ম-ল সংঘর্ষস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে তিনি আঘাত জনিত কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ওই হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক ডা. আলমগীর হোসেন জানান, বর্তমানে হরিণাকু- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তিকৃতরা বেশির ভাগ ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। হরিণাকু- থানার ওসি মাহতাব উদ্দীন জানান, ফলসি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ এখনো কোনো মামলা করতে আসেনি।
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে উপজেলার গোলড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হামলায় বিদ্রোহী প্রার্থীর বাবা ফজলুল হক (৭০) স্ত্রী, দুই ভাইসহ পরিবারের অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসীরা জানায়, ধানকোড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আব্দুর রওফ। কিন্তু এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. ওবাইদুর রহমান। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। গত সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ আসে বিদ্রোহী প্রার্থী ওবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে। অপরদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী ওবাইদুর রহমানও তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমন লিখিত অভিযোগ করেন রিটার্নিং অফিসারের কাছে। এর জের ধরেই বুধবার মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওবাইদুর রহমানের বাড়ি যান জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এবং তাকে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর কথা বলেন। কিন্তু এতে তিনি রাজি না হলে তার ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। এ সময় তার স্ত্রী, বাবা ও ভাই এগিয়ে আসলে পরিবারের আরও ৭ জন আহত হয়। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. ওবাইদুর রহমান হামলার শিকার হয়েছে এমন খবরে গ্রামের মানুষ মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে এমন ঘোষণা দেন। পরে শতশত গ্রামবাসী এগিয়ে আসলে মানিকগঞ্জ থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করলে তাদের নিয়ে আসা একটি গাড়ি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এ সময় ওই গাড়িতে থাকা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আফছার উদ্দিন (৫৬), জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম আপেল (৫২), আবুল হোসেন (৬৩) ও গাড়ির চালক মানিক (৪৮) গণধোলাইয়ের শিকার হয়। এই চারজনের মধ্যে আফছার উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। ঘটনার পরেই মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান পিপিএমসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মাহফুজুর জানায়, গোলরা এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত  করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মো. লুৎফর রহমান জানান, আহতদের মধ্যে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আফছার উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে ধানকোড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ওবাইদুর রহমান জানান, আমি এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছি। রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা আমার পরিবারের ওপর হামলা করে ৮ জনকে আহত করে। পুনরায় হামলার ভয়ে তাদের হাসপাতালেও নিতে পারিনি। বাড়িতেই তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন