বেলাল হোছাইন ভূঁইয়া, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) থেকে
আগামীকাল চতুর্থ দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সোনাইমুড়ী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মূলত লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষের। নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা জমে উঠে। নির্বাচন জ্বরে কাঁপছে পুরো উপজেলা। নির্বাচনে এক দিকে উৎসবের আমেজ অন্যদিকে প্রার্থী-কর্মী ও ভোটারদের ¯œায়ু চাপ যেন বাড়ছে। কে হাসবে শেষ হাসি এসব হিসাব নিকাশ করছে ভোটাররা। এবারের নির্বাচনে বিরাজ করছে অন্য রকম এক পরিবেশ। যেন যুদ্ধ হচ্ছে তুমুল কিন্তু শব্দ হচ্ছে না। এবারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় এক দিকে উৎসবের আমেজ অন্য দিকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। ঘুম নেই প্রার্থী-সমর্থকদের চোখে। অবিরাম ছুটে চলা এ গ্রাম থেকে ঐ গ্রামে। পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে হাট বাজার চায়ের দোকান সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী আলোচনা। চলছে শলাপরামর্শ, চুপচাপ বৈঠক, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল। পুরানো আতœীয়-স্বজনদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মুখে উন্নয়নের বুলি সমুদ্রের ঢেউকেও যেন হার মানিয়েছে। মুখোর হাট বাজার থেকে গ্রামের ঝুপড়ি চায়ের দোকান পর্যন্ত। বিক্রি বেড়ে গেছে ছোট থেকে বড় সব ধরনের চায়ের দোকানে। কোন প্রার্থী এগিয়ে কে পিছেয়ে কার মার্কা ভাল কাকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে। কোন প্রার্থী সৎ যোগ্য এমন আলোচনা সমালোচনায় চায়ের কাপে ঝড় বইছে। পাড়া-মহল্লায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় প্রার্থীরা বলছেন, ‘আই নির্বাচনে জয়ী অইলে এলাকাত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা কইত্যে দিতাম ন। এলাকার উন্নয়নের লাই রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, আননেগোরে করি দিইম, এককান রাস্তা কাঁচা থাইকতোনো বেইগ্যাইন পাকা করি দিইম। আন্যেরা আ’রে অন্তত একবারের লাই নির্বাচিত করেন দেকবেইন আ’ই এলাকা ছেয়ারা পাল্টাই দিইম।’ এ রকম মন ভোলানো নানা আঞ্চলিক ভাষায় প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছে। সোনাইমুড়ীর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২ লক্ষ ১ হাজার ৪৪৯ জন ভোটার (এর মধ্যে পুরুষ ১০১১৭১ জন মহিলা ভোটার ১০০২৭৮ জন) তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। উপজেলা ১০টি ইউনিয়নের সর্বমোট চেয়ারম্যান পদে ৪২, সাধারণ সদস্য ৩৪৭, সংরক্ষিত মহিলা ৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এলাকায় সরেজমিন ঘুরে ভোটাদের মতামতের ভিত্তিতে যাদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাম শোনা যাচ্ছে, ১নং জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে মূলত বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মহিন (ধানের শীষ), শওকত আকবর পলাশ (নৌকা), সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাবুল (আনারস) এর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ২নং নদোনা ইউনিয়ন পরিষদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন ছানী (ধানের শীষ), হারুন অর রশিদ (নৌকা) এর মধ্যে দ্বিমুখী ভোট যুদ্ধের আভাস পাওয়া গেছে। ৩নং চাষীর হাটট ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানন পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ মোল্লা (আনারস), কামাল উদ্দিন(নৌকা), মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বাবু (ধানের শীষ) এর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ৪নং বারগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থী (নৌকা) ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৫নং অম্বর নগর ইউনিয়নে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন দুলু (নৌকা), মোঃ শাহ জালাল (ধানের শীষ) এর মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ৬নং নাটেশ্বর ইউনিয়নে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে মোঃ কবির হোসেন খোকন (নৌকা), মো আবু সাইদ জাপানী (ধানের শীষ), মোঃ আনোয়ার হোসেন স্বপন (আনারস) এর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ৭ নং বজরা ইউনিয়নে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে মোঃ মীরন অর রশীদ (নৌকা), মোঃ আবদুল হান্নান জিএস ফারুক (ধানের শীষ), বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (মোটরসাইকেল), এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী (আনারস) এর মধ্যে চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ৮নং সোনাপুর ইউনিয়নে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে মোঃ আলমগীর হোসেন (নৌকা), গোলাম মোস্তফা (ধানের শীষ) এর মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ৯নং ডেউটি ইউনিয়নে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে নরুল আমিন শাকিল (নৌকা), মোঃ দিদার হোসেন (ধানের শীষ) এর মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ১০নং আমিশাপাড়া ইউনিয়নে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া (নৌকা), মোঃ জহিরুল ইসলাম বাবলু (ধানের শীষ) এর মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন