মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া (ফেনি) থেকে
আগামীকাল ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থধাপের অনুষ্ঠেয় ৫ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী ও একাধিক স্বতন্ত্রপ্রার্থী সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হতে ভোটারদের বলা হচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ভোট দিন। উপজেলায় ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ, বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে হেভিওয়েট স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা। উপজেলার ঘোপাল ও মহামায়া ইউনিয়নে বর্তমান দুই চেয়ারম্যান স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ায় এবারের নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকের বিপরীতে স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের আনারস প্রতীক গলারকাটা হয়েছে দল মনোনীত প্রার্থীদের। অপরদিকে, পাঠানগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও ঘোপালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজিজুল হক মানিকের নৌকা প্রতীকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছুটে দিয়েছেন একই ইউনিয়নের ২ বারে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুল হক। এবারো অবাধ-সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ ইউনিয়নে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি। ঘোপাল ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও উত্তেজনা অন্য ইউনিয়নের নির্বাচনী প্রচারণাকে ছাড়িয়ে গেছে। এখানে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের (আনারস) সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আজিজুল হক মানিকের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন ভোটাররা। স্বতন্ত্রপ্রার্থী আজিজুল হক অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকরা নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। তার কর্মী সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন ও মারধর করছেন এবং তার মাইকও ভাংচুর করা হয়। অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজিজুল হক মানিক জানান, তার বিজয় নিশ্চিত জেনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ঠরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা ও আচরণবিধি মেনে চলার জন্যে প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভাও করেছেন ঘোপালে। তবে, এ ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাঠে বিজয়ী হতে জোর-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রহিম পাটোয়ারী। শুভপুর ইউনিয়নে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ সেলিম ও বিএনপির দলীয় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। ইতোমধ্যে এ দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্যকে কেন্দ্র করে নির্বাচন অফিসে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অভিযোগ দিয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী কামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, প্রচারণায় ব্যবহৃত তার মাইক ভাংচুর ও তার কর্মীদের মারধর করেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ সেলিমের কর্মী সমর্থকরা। অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন আব্দুল্লাহ সেলিম। জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তিন বারের নির্বাচিত মেম্বার মহি উদ্দিন সেলিম আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে, মহামায়া ইউনিয়নে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গরীব শাহ হোসেন বাদশা চৌধুরী (নৌকা) দু-বারের নির্বাচিত ও বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্রপ্রার্থী মুন্সী আবুল কাসেম (আনারস), বিএনপির প্রার্থী ফজলুল করিম লিটনের (ধানের শীষ) ত্রিমুখী লড়াইয়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এ ইউনিয়নে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্রপ্রার্থী ছাত্রশিবিরের ফেনী জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মো. ইলিয়াছও (চশমা) ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে, রাধানগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী রবিউল হক চৌধুরী মাহবুবের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. মোশারফ হোসেনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ভোটারদের ধারণা। এছাড়া ছাগলনাইয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহামায়ায় আবুল কালাম আজাদ, ঘোপালে সাইফুল ইসলাম, শুভপুরে জসীম উদ্দিন জাসদের প্রার্থীরা ব্যাপাক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। জাতীয় পাটি থেকে একমাত্র প্রার্থী আবু জাফর খন্দকার রাধানগর ইউনিয়নে এবং এনপিপির প্রার্থী খালেদ বিন ইসলাম (আম) প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ঘোপালে মো. মোমিনুল হক (রজনী গন্ধা)। রাধানগরে সাইফুল ইসলাম (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে যাচাই-বাছাই শেষে এককপ্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন চেয়ারম্যানসহ ১২ ইউপি সদস্য বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ীরা হলেন, পাঠানগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েল। সংরক্ষিত তিনটি সদস্য পদে শাহানা আক্তার, হাছিনা আক্তার ও বুল বুল বেগম। শুভপুরে সংরক্ষিত সদস্য পদে নাজমা আক্তার ও মনোয়ারা বেগম। সাধারণ সদস্য পদে আজিজুর রহমান ও ফজলুল রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। ঘোপালে সাধারণ সদস্য পদে মোশারফ হোসেন চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। রাধানগরে সংরক্ষিত সদস্য পদে রাহেলা আক্তার ও সাধারণ সদস্য পদে আবু তাহের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এদিকে ছাগলনাইয়ায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলকে আসামি করে মামলা করেছে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ। ইলেকশন কমিশনার (ইসি) নির্দেশে নির্বাচনে আচারণবিধি লঙ্ঘন ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। ছাগলনাইয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাশেদ খাঁন চৌধুরী জানান, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ার্যমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল আউয়াল। প্রসঙ্গত, ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউপির মুহুরীগঞ্জ বন্ধন ক্লাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল হক মানিকের পক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের নানা ধরনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্থানীয় স্বতন্ত্র ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল হকের অভিযোগ ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশেরভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ওই সিদ্ধান্ত নেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন