শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কুড়িগ্রাম সদরের ৮ ইউনিয়ন

কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না ফলাফল কোনদিকে গড়াবে

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে
জমে উঠেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এবারে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় দলের প্রার্থী এবং সমর্থকরা রয়েছে দারুণ টেনশনে। এটাকে প্রেস্টিজ ইস্যু মনে করছে তারা। ফলে টানটান উত্তেজনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। অপরদিকে, সাধারণ ভোটাররা রয়েছে বিশেষ নিরাপদ অবস্থানে। কারণ দলীয় প্রার্থী ও সমর্থকরা সবার সাথে ভালো আচরণ করছে। দলের সম্মান বজায় রাখতে ভোটারদের বিভিন্ন কথার ফুলঝুরি আর দেওয়া হচ্ছে নানান প্রতিশ্রুতি। এ পর্যন্ত ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সদর উপজেলায় কোনো সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে আদাজল খেয়ে নেমেছে প্রার্থীর আত্মীয়-স্বজনরাও। সাদাকালো পোস্টার ছাড়াও মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে দলের ঝকমকা প্রতীক। একটা উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই অপেক্ষা করছে আগামীকাল অনুষ্ঠিত ভোটযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কার গলায় বিজয়ের মালা শোভা পায়। এছাড়াও শেষ হাসিটা কে হাসতে পারে। সেই ফলাফলের জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছে তারা। এবার সদরে ৮ ইউনিয়নে একজন নারী প্রার্থীসহ মোট ৪৭ জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা করছেন। তাদের প্রিয় প্রার্থীর জন্য মানুষ রাতদিন কাজ করে গেলেও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না ফলাফল কোনদিকে গড়াবে। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী রানিং চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। ওই ইউনিয়নে রয়েছে তার একক আধিপত্য। মানুষের প্রতি রয়েছে যথেষ্ট গণসংযোগ। এবারো তার জয় নিশ্চিত! তারপরও তৃণমূল ভোটে মনোনয়ন প্রার্থিতায় অংশ না নিয়ে নিজেকে বিরত রাখা। পরবর্তীতে তৃণমূলের রায়কে উপেক্ষা করে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়া। কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি করলেও জেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আঞ্চলিকভাবে ভোট টানলেও তা জেতার জন্য যথেষ্ট নয় বলে অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন। তবে এবার নিজের খোলস ভেঙে তাকে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হচ্ছে। দলীয় লোকজন বিরোধিতা না করলে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিরোধিতা করলে ফলাফল উল্টেও যেতে পারে। এখানে তার প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থী মোস্তফা গোলাম রব্বানী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আইয়ুব আলী। বেলগাছা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুর রহমান মাহবুব। গত তিনবার থেকে তিনি এই ইউনিয়নে কোনো প্রকার প্রতিরোধ ছাড়াই চেয়ারম্যান হয়ে আসছেন। কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এই ইউনিয়নে নিজের একটা আলাদা অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন এই প্রার্থী। এবার তার দুর্গে আঘাত হানতে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করিয়েছেন। ফলে সব হিসাব ওলোট-পালোট হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক একজন সজ্জন ব্যক্তি। তার পরিবারের রয়েছে রাজনৈতিক ঐতিহ্য। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আর ক্ষেতমজুর আন্দোলনে রয়েছে বিরাট ত্যাগি ভূমিকা। ফলে সাধারণ মানুষ এবার যার দিকে মুখ ঘোরাবে, সেই পাবে কাঙ্খিত জয়। তবে বিএনপির দুর্দশার সময় ছাত্রদল নেতা মাহবুব দলকে শুধু আঁকড়ে ধরেনি; দলের জন্য সে থেকেছে নিবেদিতপ্রাণ। ফলে দু’শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নীরবে নিভৃতে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। এই ইউনিয়নের ফলাফল নিয়ে সবার রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। হলোখানা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একমাত্র এই ইউনিয়ন থেকে নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবা বেগম। তিনি স্বতন্ত্র পদে লড়ছেন। এই ইউনিয়নে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে সবাই ধারণা করছেন। এই ইউনিয়নে পরপর দুবারের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক। তার রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। তার প্রতিবেশী সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরনবী সরকার। তিনি এবার লড়ছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। অপরদিকে সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তারও রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। ফলে ত্রিমুখী লড়াইয়ে লাভ হতে পারে নৌকার। ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। তিনি পরপর দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মহিউল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর আড়ালে জামায়াত নেতা আব্দুল মতিন। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের হাফিজুর রহমানের রয়েছে নিজস্ব কিছু ভোট। এখানে বিএনপি প্রার্থীর সাথে অপর দু’জনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ঘোগাদহ ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক পরপর দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবার বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। তার রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। জাপা ও জামায়াতের সাথে সখ্যতার কারণে প্রার্থী হিসেবে এবারো তিনি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম মিয়া একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। তারও রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। এই ইউনিয়নে ভোটারদের খুশি করে কৌশলগতভাবে যারা অবস্থান ধরে রাখতে পারবে, তারাই শেষ হাসি হাসবে। যাত্রাপুর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর এবার আওয়ামী লীগ থেকে লড়াই করছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি শাহাজামাল সরকার প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার। এখানে নৌকার সাথে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। পাঁচগাছি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আমির হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তিনি পড়েছেন বেকায়দায়। এই ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বিএনপি থেকে লড়াই করছেন। এখানে আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছামছুল আলমের সাথে ত্রিমুখী লড়াই হবে। মোগলবাসা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন। ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান নুরজামাল বাবলু। এখানে ত্রিমুখী লড়াই হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক শীর্ষ দুই দলের প্রার্থীর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী আহম্মদ আলীরও রয়েছে নিজস্ব ভোট। ফলে এই ইউনিয়নে কি হবে তা শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন