ভোটাধিকার প্রয়োগের ইসলামী বিধান
ইউনিয়ন পরিষদ হতে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমনকি বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি ইত্যাদির নির্বাচনে আমরা ভোট প্রদান করি। এক সময় ছিল যখন যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতার পালা বদল হত। ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থায় জনগণের রায় তথা বাইয়্যাত বা আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে খলিফা নির্বাচিত হত। বর্তমানের ভোট প্রদান তারই ধারাবাহিকতা। তাফসীরে মারেফুল কুরআন বাংলা অনুবাদের তিনশত পনের পৃষ্ঠায় সুরা মা’য়িদার আট নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ভোটদানের তিনটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে।
(১) সাক্ষ্যদান: ভোট প্রদানে ভোট দাতার পক্ষ থেকে সাক্ষ্য দেয়া হয় যে- আমার মতে এ ব্যক্তি ব্যক্তিগত যোগ্যতা সততা ও বিশ^স্থতার দিক দিয়ে জাতির প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য। এখন চিন্তা করা প্রয়োজন আমাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে কয়জন এমন রয়েছে যাদের বেলায় এ সাক্ষ্য সত্য ও বিশুদ্ধ হতে পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের জনগণ নির্বাচনকে একটি হার জিতের খেলা মনে করে। এ কারণে কখনো পয়সার বিনিময়ে, কখনো চাপের মুখে, কখনো সাময়িক বন্ধুত্ব এবং সস্তা প্রতিশ্রুতির ভরসায়, ব্যক্তি স্বার্থে, দলীয় স্বার্থে, লোভ-লালসায় পড়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিত ধার্মিক মুসলমান ও চিন্তা করে না যে, অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার মত মহাপাপ করে খোদায়ী অভিশাপ ও শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে।
(২) সুপারিশ করা: ভোট দাতা ব্যক্তি যেন সুপারিশ করে যে অমুক প্রার্থীকে প্রতিনিধিত্ব দান করা হোক। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি উত্তম ও সত্য সুপারিশ করবে, যার জন্য সুপারিশ করে, তাকে তার পূণ্য থেকে অংশ দেয়া হবে এবং যে ব্যক্তি মন্দ ও মিথ্যা সুপারিশ করবে, সে তার মন্দ কর্মের অংশ পাবে। এর ফলশ্রæতি এ যে- এ প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে তার কর্ম জীবনে যে সব ভ্রান্ত ও অবৈধ কাজ করবে তার পাপ ভোট দাতা ও বহন করবে।
(৩) ওকালতি: ভোটদাতা প্রার্থীকে নিজ প্রতিনিধিত্বের জন্য উকিল নিযুক্ত করে। কিন্তু এ ওকালতি যদি ভোটদাতার ব্যক্তিগত অধিকার সম্পর্কে হত এবং এর লাভ-লোকসান কেবল মাত্র সে-ই পেত, তবে এর জন্য সে নিজেই দায়ী হত। কিন্তু এখানে ব্যাপারটি তেমন নয়। কেননা এ ওকালতি এমন সব অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত যাতে তার সাথে সমগ্র জনগণ শরীক, কাজেই কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে স্বীয় প্রতিনিধিত্বের জন্য ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করলে জনগণের অধিকার খর্ব করার পাপ ও ভোট দাতার কাঁধে চেপে বসবে।
উল্লেখিত তিনটি ক্ষেত্রে সৎ ধর্মভীরু ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোটদান করা যেমন সওয়াবের কাজ এবং এর সুফল ভোট দাতা ও প্রাপ্ত হন তেমনি অধর্মপরায়ণ অযোগ্যকে ভোট দেয়া মিথ্যা সাক্ষ্য দান মন্দ সুপারিশ ও অবৈধ ওকালতির অর্ন্তভুক্ত এবং এর পাপের ভাগীদার হওয়া ও মারাত্মক ফলাফল ভোটদাতার আমলামায় লিপিবদ্ধ হয়। তাছাড়া ভোট একটি পবিত্র আমানত। আল্লাহপাক আমানতকে যথোপযুক্ত স্থানে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কারো মনে প্রশ্ন জাগে সৎ লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর তবে কোথায় আমানত প্রয়োগ করব। উত্তর হল- যে কয়জন প্রার্থী থাকবে তাদের মধ্যে আপনার বিবেক অনুযায়ী তুলনামুলকভাবে যাকে খোদাভীরু, সৎ ও যোগ্য বলে মনে করবেন তাকে ভোট দিলে আপনার দায়িত্ব পালন করা হবে কেননা শতভাগ সৎ লোক না পেলেও আপনি বৈষয়িক স্বার্থের উর্ধ্বে থেকে মন্দের ভাল খুঁজে নিয়েছেন। আপনি ভোটদান থেকে বিরত থাকলে হয়তো একেবারে মন্দ ও অসৎ ব্যক্তি ক্ষমতায় এসে গেলে মারত্মক ক্ষতি হত।
ইসলামী বিধান মোতাবেক আপনার অধিকার বা সম্পদ কেউ জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে তা রক্ষা করতে গিয়ে আপনি যদি মারাও যান তবে শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন। ঠিক তেমনি আপনার ভোটাধিকার রক্ষায়ও আপনাকে সচেষ্ট হতে হবে।
তাই সকলকে দুনিয়াবী স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক আমানতকে যোগ্যস্থানে অর্পণ করা প্রয়োজন।
অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াছিন মজুমদার
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন