শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কুমিল্লার মাঠ দাপাচ্ছেন আওয়ামীলীগ, গ্রেপ্তার ভয়ে মাঠে নেই বিএনপি

চান্দিনা (কুমিল্লা) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:১১ এএম

কুমিল্লায় নির্বাচনী প্রচারে এগিয়ে আছে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বধীন মহাজোট। অপরদিকে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা কুমিল্লার ভোটের মাঠে প্রচার চালাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। সরকারি দল ও পুলিশের বাধার কারণেই তারা প্রচারে পিছিয়ে আছেন। তবে এ অভিযোগ মেনে নিতে নারাজ কুমিল্লার আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নেতারা। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা নৌকার পক্ষে জোর প্রচার চালাচ্ছেন। মাইকিং করছেন। আর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভয়ভীতিতে আছেন। গত বুধবার বিএনপির দক্ষিণ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাহবুব চৌধুরী একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে জেলখানার ফটকেই তাঁর ওপর হামলা হয়। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচন করার জন্য একে একে আসনভিত্তিক বড় নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে বিভিন্ন গায়েবি মামলা করে দলের প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
কুমিল্লা-১ দাউদকান্দি-মেঘনা আসনের মেঘনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. রমিজ উদ্দিন লন্ডনীকে আওয়ামীগ কর্মীরা কুপিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ করেছে বিএনপি। আহত বিএনপি নেতাকে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশংকাজন অবস্থায় ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। শনিবার বিকালে মেঘনা উপজেলার লক্ষণখোলা গ্রামে তিনি হামলার শিকার হন। এসময় গাড়ি বহরে থাকা রাধানগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল ইসলামকে মারধর করে হামলাকারীরা এসময় একটি নোয়ামাইক্রো ও একটি প্রাইভেটকারও ভাংচুর করা হয়েছে বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
কুমিল্লা-২ হোমনা-তিতাস আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করায় বিএনপির নেতাকর্মীর পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মামলায় উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফজলুল হক মোল্লা, ঘাড়মোড়া ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাহজাহান মোল্লাসহ ৩৮ জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে রাখতেই মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ফজলে রাব্বি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনের বিএনপির প্রার্থী কে এম মুজিবুল হক মুরাদনগরে নির্বাচনে প্রচারে এলে তাঁর গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আক্রমণ করেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও পাল্টা আঘাত করলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ পিছু হটে। এ বিষয়ে বিএনপির প্রার্থী কে এম মজিবুল বলেন, শত বাধা পেরিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় মুরাদনগরে এসেছেন। হামলায় তাঁর দলের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কুমিল্লার-৬ আসনের বিএনপির প্রার্থী হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বলেন, প্রচার শুরুর পর থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের কর্মীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর করেছেন।
কুমিল্লা- ৭ চান্দিনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ এবং আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি’র সমর্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। গত শনিবার বিকালে উপজেলার বরকরই ইউনিয়নের ফতেহপুর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৯ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। ড. রেদোয়ান আহমেদ জানান, শনিবার কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভা ছিল। জনসভায় যাওয়ার পথে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মী পথেমধ্যে ফতেহপুর বাজার এলাকার হামলা করলে আমার তিন নেতা-কর্মী আহত হয়। অপরদিকে চান্দিনা উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপনবক্সী জানান, ফতেহপুর বাজার এলাকায় উপজেলা যুবলীগ আয়োজিত উঠান বৈঠক চলাকালে ড. রেদোয়ান আহমেদ এর গাড়ি বহর সেখানে পৌঁছে। এসময় উপজেলা যুবলীগ নেতা-কর্মীরা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ভেবে জয় বাংলার শ্লোগান দিয়ে এগিয়ে যায়। এসময় এলডিপি নেতা-কর্মীরা তাদের উপর আক্রমণ করে ৬ জনকে আহত করে।
কুমিল্লা-৯ লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনের বিএনপির প্রার্থী কর্ণেল (অবঃ) এম আনোয়ার-উল-আজিম কুমিল্লা রিটানিং কর্মকর্তার কাছে দ্বিতীয় বারের মত অভিযোগ করেন যে, তার নির্বাচনী এলাকা লাকসাম-মনোহরগঞ্জে আওয়ামী ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অব্যাহত হামনায় ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করা বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা করতে পারছে বলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনে বিএনপির সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়াকে অস্ত্র মামলায় রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে কুমিল্লায় আনা হয়েছে। এ আসনে বিএনপির প্রার্থীসহ শীর্ষ তিন নেতা আবদুল গফুর ভূঁইয়া, মনিরুল হক চৌধুরী, মোবাশ্বের আলম ভূইয়া এখন জেলে। নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছালেহ আহম্মদ বলেন, ১২ ডিসেম্বর জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের গোহারুয়া গ্রামের প্রয়াত মনা মিয়ার ছেলে বেলাল হোসেনকে পিস্তলসহ গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এ মামলায় আবদুল গফুর ভূঁইয়াকে ২ নম্বর আসামি করে পুলিশ। গতকাল এ মামলায় জামিন নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে যান গফুর ভূঁইয়া। এরপর তিনি জোহরের নামাজ পড়ে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছিলেন। তখন কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল ও নাঙ্গলকোট থানার পুলিশ তাঁর গতিরোধ করে। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, নাঙ্গলকোট থানার পুলিশ ও ডিবির সহযোগিতায় গফুর ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গফুর ভূঁইয়া এ আসনে প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে ঋণ খেলাপের কারণে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঐক্যজোটের কমিটির সমন্বয়ক মনিরুল হক চৌধুরী। গত ২৪ অক্টোবর মনিরুল গ্রেপ্তার হন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে পুড়িয়ে আটজন যাত্রী হত্যা মামলায় গত ২৪ অক্টোবর আদালতে জামিনের আবেদন করেন মনিরুল হক চৌধুরী। আদালত তাঁর জামিন বাতিল করেন। এরপর থেকে তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে। পরে তাঁকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরও দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া নাঙ্গলকোট থানার আরও দুটি মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়। বর্তমানে কারাগারে থেকেই তিনি নির্বাচন করছেন। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির জনসভা শেষে ফেরার পথে কুমিল্লা-১০ আসনের নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় কারাগারে। বিএনপির একাধিক নেতা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গায়েবি ও পুরোনো মামলায় পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে গ্রেপ্তার করছে। এরপর নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। এতে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকছে না। দলের শীর্ষ তিন নেতা জেলে থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রচারে এগিয়ে থাকার ব্যাপারে কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দশ বছরে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যেভাবে সাফল্য এসেছে, তার কারণে কুমিল্লায় এবারও নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন নৌকার প্রচার কার্যক্রমে। এছাড়াও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মনোনয়ন বাণিজ্য এবং ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে অসন্তোষের কারণে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অধিকাংশ স্থানে নির্বাচনী প্রচারে নামছেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন