বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

শাকিলার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি অনিশ্চিত

লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

খেয়ে না খেয়ে কাটে দিন শাকিলা আক্তারের পরিবারের সবার। দারিদ্র্যতার কারণে তবু কখনো পড়াশোনা থামায়নি শাকিলা। শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও অভাবের পাহাড় ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে। চলতি বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে আটকে গেছে তার ভর্তি। ইতি টানতে হচ্ছে লেখাপড়ার।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার সিন্দুর্না গ্রামের সহিদার রহমান ও রাহেলা বেগমের তৃতীয় সন্তান শাকিলা। ২০১৩ সালে লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে জিপিএ-৫ ও ২০১৬ সালে এসএসসিতে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পায় শাকিলা। ২০১৮ সালে একই বিভাগে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজ থেকে ৪.৫৮ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। চলতি বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ১৪০তম স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু তাদের সংসারে অভাবের কারণে টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না শাকিলা।

শাকিলার বাবা সহিদার রহমান দীর্ঘ দিন অসুস্থ। কোনো কাজই করতে পারেন না তিনি। অসুস্থতার কারণে সারাদিরই শুয়ে-বসে থাকতে হয় তাকে। শাকিলার বড় ভাই লিয়াকত হোসেন পানের দোকান করেন। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। শাকিলার মেজো ভাই আলমগীর হোসেন ঢাকায় অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। তবে টিউশনি করে নিজের তিনি নিজের লেখাপড়ার খরচ চালান। আর ছোট বোন আক্তারা কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

শাকিলা বলেন, বাবা-মায়ের সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যেও অনেক কষ্ট করে এতদূর এসেছি। আজ একটি ভালো জায়গায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও সেখানে ভর্তি হতে পারছি না। ভর্তিসহ পড়াশোনার টাকা জোগান নিয়ে খুব চিন্তিত। আদৌ সেখানে ভর্তি হতে পারবে কি না। যেখানে ভর্তির টাকাই সংগ্রহ করা দায়, সেখানে পড়াশোনা করব কিভাবে।
শাকিলার বড় ভাই লিয়াকত বলেন, ১৯৯৬ সালে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন থেকে সংসারে অভাব নেমে আসে। অভাব পূরণে আমি নিজে একটি পানের দোকান দেই। কিন্তু দোকানের সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পানের দোকানের পাশাপাশি অন্যের কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতে শুরু করি। কিন্তু ক্ষেতে কাজ করার সময় তখন তাকে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। তাই সংসার চালানোটা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ছিল। সংসারে যখন অভাব-অনটন ঠিক সেই সময় অবস্থায় তার ছোট বোন শাকিলা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পায়। তবে তার ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ সংগ্রহ করাটা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে লিয়াকত জানান। এ অবস্থায় তিনি সমাজের বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘শাকিলা অত্যান্ত মেধাবী ছাত্রী। তার কলেজ থেকেই পাস করে সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এখন অর্থাভাবে তার সেই ভর্তি অনিশ্চিত হওয়ায় লেখাপড়া বন্ধ হওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই তিনি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এসে শাকিলার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ সুগম করে দেয়ার আহ্বান জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন