মামুনুর রশীদ মামুন, বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে
আজ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সব ঠিক থাকলে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে চারটিতে লড়াই হবে ত্রিমুখী এবং দুটিতে চতুরমুখী। একাধিক ইউনিয়নে আ.লীগ-বিএনপির প্রার্থী নিয়ে বিতর্ক থাকায় গতকাল পর্যন্ত জনপ্রিয়তায় বিদ্রোহীরা এগিয়ে রয়েছেন। বিজয় মাল্য ছিনিয়ে নিতে চেষ্টার কমতি নেই প্রার্থীদের। প্রার্থীদের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে হিসাব কষছেন সচেতন ভোটাররা। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘœ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। তারপরও সাধারণ মানুষদের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে। যদিও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ছিল শান্তিপূর্ণ। নির্বাচনকে সামনে রেখে সুবিধাভোগীরা নানা কৌশলে কতিপয় প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে মরিয়া। অভিযোগ রয়েছে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয় সীমালঙ্ঘন করেছেন। শেষ মুহূর্তে পরাজয় ঠেকাতে টাকা বিলিয়ে ভোট আদায়ের অপচেষ্ঠা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬টি ইউনিয়নের ৬৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এরমধ্যে ২৮টি কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার ৬ ইউনিয়নে আ.লীগ-বিএনপি, জাতীয় পার্টি, আ.লীগ-বিএনপির বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রসহ মোট ২৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। ১নং লামাকাজি ইউনিয়নে আ.লীগ-বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত সমর্থিতসহ চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কবির হোসেন ধলা মিয়া (ধানের শীষ), ডাঃ শানুর হোসাইন (নৌকা), একেএম দুলাল (লাঙ্গল)’র মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। লামাকাজীতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে- সিরাজপুর জুনিয়র মাদ্রাসা, মুন্সিরগাঁও, ভুরকি, হাজরাই আতাপুর, আকিলপুর, মির্জারগাঁও, দিঘলী, লামাকাজি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পঞ্চগ্রাম রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২নং খাজাঞ্চী ইউনিয়নে আ.লীগ-বিএনপি, জাতীয় পার্টি আ.লীগের বিদ্রোহী ও জামায়াত সমর্থিত পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী (চশমা), শংকর চন্দ্র ধর (নৌকা) ও গিয়াস উদ্দিন (ধানের শীষ)’র মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবাস পাওয়া গেছে। খাজাঞ্চীতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে- কান্দিগ্রাম, বাওনপুর, ছৈইফাগঞ্জ, চারিগ্রাম, চন্দ্রগ্রাম, জয়নগর, ফুলচন্ডি, বন্ধুয়া, তালিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসা, আলহাজ লজ্জাতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় ও নোয়াগাঁও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৩নং অলংকারী ইউনিয়নে আ.লীগ-বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির বিদ্রোহীসহ চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নাজমুল ইসলাম রুহেল (চশমা), রফিক মিয়া (নৌকা) ও এমএ হক (ধানের শীষ)’র মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। অলংকারী ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে- বড়খুরমা, অলংকারী, রামধানা, শিমুলতলা, রামপুর, ছোট খুরমা, হাজী আব্দুল হামিদ, ঘুরন, টেংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজী ইয়াছিন উল্লা উচ্চ বিদ্যালয়। ৪নং রামপাশা ইউনিয়নে আ.লীগ ও বিএনপি উভয় দলের বিদ্রোহীসহ চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আজিজুর রহমান (আনারস), বিএনপি বিদ্রোহী বশির আহমেদ (চশমা), আলমগীর হোসেন (নৌকা), জয়নাল আবেদীন (ধানের শীষ)’র মধ্যে চতুরমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উভয় দলের বিদ্রোহীরা জন-সমর্থনে এগিয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। রামপাশা ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে- আমতৈল (পূর্ব), আমতৈল (পশ্চিম), গড়গাঁও, পুরানগাঁও, একলিমিয়িা, নওধার, দোহাল, রামপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আল-আজম উচ্চ বিদ্যালয়। ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নে আ.লীগ-বিএনপি, জাতীয় পার্টি আ.লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রসহ পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছাব উদ্দিন (আনারস), আমির আলী (নৌকা), আরব খাঁন (ধানের শীষ)’র মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। দৌলতপুর ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে- সিংরাউলি, সিঙ্গেরকাছ-১, মৌলভীগাঁও, হাবড়া, ধনপুর, দুর্যাকাপন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিঙ্গেরকাছ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও দশপাইকা দাখিল মাদ্রাসা। ৬নং বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নে আ.লীগ-বিএনপি, আ.লীগ বিদ্রোহী, স্বতন্ত্রসহ চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আ.লীগ বিদ্রোহী ছয়ফুল হক (আনারস), জালাল উদ্দিন (ধানের শীষ), আব্দুল জলিল জালাল (নৌকা), আব্দুল মতিন (চশমা)’র মধ্যে চতুরমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও গতকাল পর্যন্ত আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছয়ফুল হক এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে- শাহজিরগাঁও, ভোগশাইল, জানাইয়া, জনমঙ্গল, ধর্মদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়, সরুয়ালা দক্ষিণ বিশ্বনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। উপজেলা নির্বাচন অফিসার আজিজার রহমান বসুনীয়া বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন