এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ৭ ইউনিয়নে ৫ম দফার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ মে শনিবার। এবারের এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পাটি, বিএনপি ও ইসলামী ফ্রন্ট ইতিমধ্যে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য বিদ্রোহী প্রার্থী। এছাড়া রয়েছে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীও। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে একদিকে চলছে আমেজ, উৎসব ও সাজ সাজ রব, অপরদিকে দলীয় প্রতীক না পেয়ে বিদ্রোহীদের সাথে যে কোন সময় যে কোন জায়গায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সাথে উত্তেজনা এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। ক্ষমতার দাপট, দখল-বেদখলসহ সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচনকে সবাই একটি চ্যালেঞ্জিং হিসেবে নিয়েছে। গত মঙ্গলবার মনোনয়নের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে জমা দিয়েছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিদ্রোহের দামামা বাজিয়ে নির্বাচনী মাঠঘাট হাঁকিয়ে তুলছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে। এখানকার একাধিক ইউনিয়নে দলের প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় ও তৃণমূলের কোন নেতা-কর্মীকে দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়ে অনেকেই বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িত এমন দু’এক জেলার নেতা এলাকায় এসে কর্মীদেরকে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কথা বলছেন। তবে এসব নেতাদেরও এলাকায় ইমেজ সংকট রয়েছে বলেও জানান তারা। এদিকে তৃণমূল আ.লীগ নেতাদের পরামর্শ, সমর্থন না বুঝে, না দেখে জেলা-উপজেলার গুটিকয়েক নেতার লাখ লাখ টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য ও দুর্বৃত্তায়নমূলক একক মনগড়া সিদ্ধান্তে দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়, মাদক স¤্রাট, মুসলিম বিদ্বেষী, ভুমিদস্যুসহ ইমেজ সংকটে চলছে এমন ব্যক্তিকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার কারণে ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের দামামা ও দাপট চলছে। ফলে তারা স্ব-স্ব ইউনিয়নে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। বিদ্রোহীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমুচিয়া ইউনিয়নে বোয়ালখালী পূজা কমিটির সভাপতি অজিত বিশ্বাস ও যুবলীগ নেতা সেলিম নেওয়াজ, শ্রীপুর-খরণ দ্বীপ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন খোকন, চরণদ্বীপ ইউনিয়নে মো. ইউনুচ, পোপাদিয়া ইউনিয়নে শামসুল আবেদীন তারেক, শাকপুরা ইউনিয়নে প্রভাষক মহসীন চৌধুরীসহ ৭ ইউনিয়নে প্রায় ২ ডজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির মোরশেদ খান গ্রুপের প্রার্থীরা যেমন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, তেমনি ডাক ঢুল বাজিয়ে নিজ নিজ সমর্থকদের সাথে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মহানগর বিএনপির নেতা শিল্পপতি এরশাদ উল্লাহ গ্রুপের প্রার্থীরা। এছাড়া একই দলের একাধিক প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি ও বিভাজন দেখা দিয়েছে। ফলে প্রার্থীরা নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সমাবেশ, প্রতিনিধি সম্মেলন, বর্ধিত সভা করে চলেছেন তারা। সাধারণ কর্মী সমর্থকরা এর জন্য জেলা-উপজেলার সিনিয়র নেতাদের মনোনয়ন বাণিজ্য, তৃণমূল পরামর্শ সভার নামে বাটপারি, গ্রুপিং, উপজেলা-ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দীঘদিন ধরে কাউন্সিলিং না করাকেই দায়ী করলেন। তারা বলেন, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তি পদে থাকা ও দীর্ঘদিন ধরে কমিটির একই পদ আঁকড়ে ধরে সুবিধাবাদী, চাঁদাবাজী করা, নেতারা গ্রুপিং সৃষ্টি করে নিজ নিজ কর্মী সর্মথক নিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার কারণে তৃণমূল আওয়ামী লীগের এ অবস্থা। এ ছাড়া অবৈধদের ক্ষমতার দাপটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাইব্রিড ও নামধারী নেতারা বিভিন্নভাবে ফায়দা লুটতে দলের মধ্যে গ্রুপিং এর সৃষ্টি করেছে। ফলে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতরা একযোগ হয়ে দলের মনগড়া মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিদ্রোহীরা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করলে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যপারে বিদ্রোহীরা বলেন, দলের কিছু নেতা মনোনয়ন বাণিজ্য করে দলের কেউ নয় এমন ভূমিদস্যু ও মাদক স¤্রাটদের প্রার্থী করা দলের কোন বিধিতে পড়ে? উল্টো এমন প্রশ্ন করেন তারা। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আগামী ১২ মে প্রত্যাহারের শেষ দিন। আশা করি মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষেই তারা কাজ করবেন, আর যদি বিদ্রোহীরা নির্বাচন করে তাহলে দলীয় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন