রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

জীবনের ঝুঁকি তবুও ট্রেনের ছাদে চড়ে ছুটছে অন্য জেলায়

প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
১৬ জন ধান কাটা শ্রমিকের নেতা চটকু (৪৬)। ওরা এসেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের পার্শ্ববর্তী রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ভীমপুর এলাকার হুইস্কার মোড় থেকে। হাতে কাস্তে, ঘাড়ে ভার বহনের বাঙুয়া। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ওরা সবাই দলবেঁধে যাচ্ছেন আগাম ধান কাটার জন্য বাইরের জেলায়। কথা হয় দলনেতা চটকুর সাথে। এলাকায় বোরো ধান কাটতে ১০/১৫ দিন সময় দেরি আছে। কাজ নেই। বাড়িতে বসে না থেকে ১৬ জনের দল নিয়ে পূর্ব পরিচিত গৃহস্থের বাড়ি সান্তাহারে যাচ্ছেন। কারণ ইতোপূর্বেও সেখানে তারা কাজ করেছেন। মোবাইলে খবর পেয়ে আগাম ধান কাটার জন্য যাচ্ছেন। এই এলাকার প্রায় সকল কৃষি শ্রমিক এনজিওর ঋণের জালে আটকা পড়েছে। প্রতি সপ্তাহে তাদের বিভিন্ন এনজিওর কিস্তি ও পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্থ ব্যয়ের কারণে পরিবারের মায়া ত্যাগ করে কেউ কেউ দলগতভাবে কেউবা এককভাবে কাজের সন্ধানে বাড়িঘর ছাড়ছেন। জেলার সৈয়দপুর, জলঢাকা, ডোমার, কিশোরীগঞ্জ ও সদর উপজেলায় চলমান কর্মসৃজন কাবিটা প্রকল্পের কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া প্রকল্পের বাইরে প্রায় হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক কর্মহীন থাকায় তারা বাধ্য হয়ে আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বাইরের জেলায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বাস ও ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। আগাম জাতের ধান কাটার জন্য এসব শ্রমিক ট্রেনে চেপে জয়পুরহাট, সান্তাহার, বগুড়া, আক্কেলপুর, ঈশ্বরদি আর কেউ কেউ বাসে চড়ে যাচ্ছেন কুমিল্লা ও অন্যান্য জেলায়। তারা জানায়, সেখানে প্রতিবিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির ধান কাটা ও বহনে তাদের মিলবে ৩ হাজার ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা। কেউ পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সেখানে উঠবেন। কেউবা স্টেশনে পৌঁছার পর ধানের মালিকরা তাদের ডেকে নিয়ে যাবেন। থাকা ও খাওয়া মালিকই বহন করে বলে জানান তারা। নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকার ধান কাটা শ্রমিক হাফিজার (৩৫), আবুজার (৪৫) ও রাজিউল (৪৩) জানান, তারা আগাম ধান কাটার জন্য জয়পুরহাটে যাচ্ছেন। ট্রেনের জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছেন। গেল বছরও তারা সেখানে গিয়ে কাজ করেছেন। এরা বরেন্দ্র, রুপসা, তিতুমীর, খুলনা মেইলে কাজের সন্ধানে ছুটে যাচ্ছেন বাইরের জেলায়। পেছনে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানের মায়া ত্যাগ করে অর্থ উপার্জনের আশায় তাদের এই পথচলা। বাড়ির ভালোমন্দ খবর নেয়ার জন্য সঙ্গে রয়েছে কমদামি মোবাইল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন